প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা চকবাজারের বিজ্ঞান কলেজ। এ কলেজের বিতর্কিত অধ্যক্ষ জাহেদ এর শাস্তির দাবিতে অভিভাবকেরা সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের মুখোমুখি হন।

গতকাল ৭ এপ্রিল শনিবার দুপুর ১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বিজ্ঞান কলেজে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন।

প্রকৃত সত্য ঘটনার বিবরণ জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনে ডাকা হয় বলে জানান অভিভাবকেরা। তারা জানান, মুনাফালোভী শিক্ষার বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার না হলে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত ও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।

পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ ও সিটি বিজ্ঞান কলেজের অনিয়ম দূর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র,অভিভাবক ও ছাত্রসংগঠনের শিক্ষা আন্দোলন নিয়ে যেসব অপপ্রচার চলছে তার বিপক্ষে দাড়ানোটাও নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকেরা দাবি জানান, সন্তানদের ভবিষ্যত কোন মুনাফালোভী শিক্ষার হাতে যেন বলি না হন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার শিক্ষাবান্ধব শিক্ষানীতির আওতায় আমাদের সন্তানেরা যেন শিক্ষার ন্যায্য সুবিধা আর অধিকার পায়।

আপনারা জানেন,মুনাফালোভী শিক্ষার বলি হয়ে হয়তো আমাদের অনেকের সন্তানেরই এবারে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া হতো না। তবে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাহসী ভূমিকা আর আমাদের আন্দোলনে তাদের সমর্থনে আজ আমরা সেই দু:স্বপ্ন থেকে মুক্তি পেয়েছি।

আমাদের সন্তানেরা আজ এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে বিজ্ঞান কলেজের স্বেচ্ছাচারী মুনাফালোভী নীতির বিরুদ্ধে মহানগর ছাত্রলীগের সোচ্চার ভূমিকার কারণে। বক্তারা এ সময়, এজন্য মহানগর ছাত্রলীগ এবং সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিকে ধন্যবাদ জানান।

গত ২৯/৩১শে মার্চ চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজে আসলে কি ঘটেছিল তার কিছু বর্ণণা দিতে গিয়ে শির্ক্ষাথীরা বলেন, এখানে আমাদের অনেকেই সে দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী তেমনি অনেকেই কলেজের অনিয়ম আর মুনাফালোভী নীতির সাথে কম বেশি পরিচিত। গত বছরও ২৬১ জন শিক্ষার্থীর সাথে বিজ্ঞান কলেজ রেজিষ্ট্রেশন প্রতারনা করে তোপের মুখে পড়েছিল।

এ বছরও জাহেদ খানের মালিকানাধীন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ ও সিটি বিজ্ঞান কলেজ এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে উন্নয়ন ফির নামে বাড়তি টাকা আদায় করেছিল।

সরকার ঘোষিত নির্দেশনা অনুসারে চট্টগ্রাম মহানগরে উন্নয়ন ফি নেয়ার যুক্তিকতা না থাকলেও একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেনীতে একাধিকবার উন্নয়ন ফি নেয়া হয়েছে কলেজটিতে।

ভাড়া বিল্ডিং এ পরিচালিত এই কলেজটি কোটি কোটি টাকা উন্নয়ন ফি গ্রহন করে তা কোথায় ব্যবহার করছে তা আজ প্রশ্ন ও রেখেছেন।

এ বছরের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার আগে প্রবেশপত্র ও রেজি: কার্ড সংগ্রহ করতে গেলে কলেজ থেকে শিক্ষার্থীদের জানানো হয়, উন্নয়ন ফি ছাড়া কাউকে প্রবেশপত্র দেয়া হবেনা।

কলেজের এই নোটিশে ভীত হয়ে হয়ে আমাদের অনেক অভিভাবকই ৫০০০ টাকা দিয়ে সন্তানদের প্রবেশপত্র সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে আনুমানিক ৬০০-৭০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ৫ হাজার টাকা করে উন্নয়ন ফি আদায় করে দুই দিনের মধ্যেই।

এই উন্নয়ন ফির টাকা যোগাড় করতে অনেক শিক্ষার্থী তাদের মায়ের মূল্যবান অলঙ্কার বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন, অনেকেই করেছেন ধারদেনা, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

দু:খের বিষয় হল, শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় দুশো বেশি অর্থাভাবে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে না পেরে তাদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছল। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। অনেকেই কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে পায়ে ধরে টাকা দিতে নিজেদের অপারগতার কথা তুলে ধরে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয় উন্নয়ন ফি ছাড়া কোন ধরনের প্রবেশপত্র দেয়া হবেনা।

শেষ মেশ বিষয়টি নিয়ে আমাদের অনেকেই চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির সাথে যোগাযোগ করি। তাকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি এনিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। গেল ২৯ মার্চ উন্নয়ন ফির নামে বাড়তি অর্থ আদায়ের প্রতিবাদ জানাতে তিনি তার দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে কলেজে আসেন।

এসময় ছাত্রনেতারা ও আমাদের সাথে একাত্মতা জানিয়ে গুলজার মোড়ের বিজ্ঞান কলেজের সামনে অবস্থান নেয়। তবে, খবর পেয়ে আগে থেকেই বিজ্ঞান কলেজ ছেড়ে পালিয়ে যান অধ্যক্ষ জাহিদ খান। এবং কলেজ বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়ে দেন।

পরে তার পরিচালনাধীন দেবপাহাড় এলাকায় আরেকটি কলেজে গিয়ে তিনি আশ্রয় নিলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সেখানে যান নুরুল আজিম রনি। তবে তারা যাওয়ার আগেই সেখান থেকেও তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যান জাহিদ খান।

পরে কলেজের অন্যান্য শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের ঘেরাও করে দাবি আদায় করতে সক্ষম হই আমরা। এসময় আমাদের সকলের প্রতিবাদের মুখে বাড়তি টাকা ছাড়াই অনেক শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র ইস্যু করতে বাধ্য হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে যাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয়েছিল তা ফেরত দেওয়া হবে বলেও লিখিত অঙ্গীকার করে তারা।

কিন্ত কথা দিলেও ৩১মার্চ আদায়কৃত বাড়তি টাকা ফেরত দেননি অধ্যক্ষ। এমনকি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দিতেও আবারও গড়িমসি শুরু করেন অধ্যক্ষ জাহেদ খান।

শুধু তাই নয় এরমধ্যে আমাদের অভিভাবকদের অনেকেই একেক করে জানতে পারি, দীর্ঘ দুই বছরে কারনে অকারনে বাড়তি টাকা প্রদান করে বিজ্ঞান কলেজে ভর্তি এবং ক্লাস করার পর এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে তাদের সিটি বিজ্ঞান কলেজ নামে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রেজিষ্ট্যাশন কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দু:খজনক হলেও সত্য, স্থানীয় কিছু যুবকদের ফোন করিয়ে এনে প্রতিবাদকারী অভিভাবকদের কয়েকজনকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। নারী অভিভাবকদের সাথে জগন্য ভাষায় গালিগালাজ করে এই যুবকগুলো। এসময় তারা শাসিয়ে বলতে থাকে,কোন টাকা ফেরত দেয়া হবেনা। যারা টাকা দেয়নি তাদের টাকা দিয়ে প্রবেশ পত্র নিতে হবে।

অন্যতায় পরীক্ষার চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দিতে বলে তারা।এমন পরিস্থিতি যারা আগেই টাকা দিয়ে প্রবেশ পত্র সংগ্রহ করেছিলো ও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সেদিন টাকা ফেরত নিতে এসেছিলো তাদের চর থাপ্পর মারতে মার্রতে সিড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে দিতে থাকে অপরিচিত ও বহিরাগত যুবকরা। এমন অবস্থায় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আর্তনাদ বিজ্ঞান কলেজের চার দেয়াল বারবার কম্পিত হলেও জাহেদ খানের বিন্দুমাত্র মন গলাতে পারিনি। তখনও কলেজের নিচে বহিরাগত যুবকরা স্লোগান দিতে থাকে ও মাঝে মাঝে ককটেল বিস্ফোরনের আওয়াজ আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম।

এসবের মধ্যে উল্টো জাহেদ খান তাগাদা দিয়ে বলেন, প্রাকটিক্যালে  পুরা নাম্বার পেতে হলে র্বোডের লোকজনকে ম্যানেজ করতে হবে। তাই টাকা নিয়ে আসুন জলদি।

এ সংবাদ পেয়ে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তার কয়েকজন নেতা-কর্মীদের নিয়ে কলেজে আসেন। পরে তারা অধ্যক্ষ জাহেদ খানকে কলেজের মূল অভ্যর্তনা রুমে বসে বিষয়টা সমাধান করতে বলেন। কিন্তু জাহেদ খান সেসময় তার জরুরি সরকারী কাজে যেতে হবে বলে কলেজ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে।

অভিভাবকরাসহ ছাত্রলীগ নেতারা তার কাছে জানতে চাই এতসব পরীক্ষার্থীকে কোন সিদ্ধান্ত না দিয়ে আপনি কিভাবে যাবেন?ত খন জাহেদ খান উত্তরে বলে ছাত্রলীগ ভাড়া আনছেন,গুন্ডা ভাড়া আনছেন? আগে মামলা হবে তারপর কথা হবে।

এই কথা বলার পর তিনি আবার বের হওয়ার চেষ্টাকালে ছাত্রলীগের নূরুল আজিম রনি তার গতিরোধ করে। রনি অধ্যক্ষ জাহেদ খানকে তখনো ঠান্ডা মেজাজে বলতে শুনেছি,স্যার আপনি আপনার রুমে আসুন। বিষয়টা সমাধান হয়ে যাবে। তিনি এও বলেন,স্যার অভিভাবকগুলো কান্না করছে আপনার মায়া থাকা দরকার।এসময় বহিরাগত যুবক সন্ত্রাসীদের একটি পক্ষ নিচে থেকে স্লোগান দিতে দিতে উপরে উঠে আসছিলো।”জাহিদ ভাই এগিয়ে চলো যুবলীগ ছাত্রলীগ তোমার সাথে” এমন স্লোগানে আমাদের সকলের সম্মিলিত আলাপচারিতা বানচালের চেষ্টা চালায়।সিড়ির মধ্যেই এসময় বিকট কয়েকটি বিস্ফোরণের আওয়াজ হয়।

চরম হট্টগোলের মধ্যেই জাহেদ খান সোফা থেকে দাড়িয়ে বাইরের দিকে হাটতে শুরু করা মাত্র ছাত্রলীগ নেতা রনি ও তার নেতা কর্মীরা জাহেদ খানকে পালাতে বাঁধা দেন। দুই পক্ষ এসময় হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রনিসহ অন্যরা জাহেদ খানকে তার রুমে নিয়ে যেতে দেখি আমরা।পথিমধ্যেই জাহেদ খান চিৎকার করে বলছিলো তুই রইন্যা কলেজে কাম কি?তখনি মূলত রনিকে জাহেদ খানের শরীরে একটা থাপ্পর দিয়ে নিভৃত করতে আমরা দেখেছি।

নূরুল আজিম রনি সেদিন এগিয়ে না আসলে অনেক পরীক্ষার্থী তাদের শিক্ষাজীবন মসৃন রাখতে পারতো না।সকাল থেকে পুলিশ কলেজে থাকলেও একবারও জাহেদ খানের অন্যায় অনিয়মের বিষয়ে জানতে পর্যন্ত চাননি। আজ সংবাদ সম্মেলন করার খবর শুনে গতকাল রাত থেকে জাহেদ খান বিভিন্ন জন দিয়ে আমাদের কাছে খবর পাঠিয়ে বলেছেন আমাদের সন্তানদের এইচএসসি পরীক্ষার প্যাকটিক্যাল খাতায় ফেইল করিয়ে দিবে। তবু শিক্ষাখাতকে এভাবে নষ্ট হতে দেখতে চাইনা বলেই আজ আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি নিজ সন্তানদের ভবিষ্যত চিন্তা না করেই।

আপনাদের দায়িত্ব নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি এমন কোন অপর্কমের বলি যেন আমাদের সন্তানরা না হয় তা আপনারা খেয়াল রাখার আহ্বান জানান।

শিক্ষক নামের এই বির্তকিত জাহেদ খানের বিচার দাবী করেন অভিভাবকবৃন্দ ও শির্ক্ষাথীরা। সেই সাথে চট্টগ্রামের লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের বন্ধু হিসাবে আত্মপ্রকাশ করা নূরুল আজিম রনির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত চাঁদাবাজির মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছেন বিজ্ঞান কলেজের অভিভাবকবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের পাহাড় তুলে ধরে হয়রানি থেকে মুক্তির দাবি জানান সরকারের প্রতি।