রাশিদুল ইসলাম জুয়েল, সিঙ্গাপুর প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, ‘রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ক্ষমতা থাকলে হাইব্রিড বেড়ে যায়। সুবিধাবাদী লোক চলে আসে। তখন গিভ অ্যান্ড টেক বেড়ে যায়। কিন্তু রাজনীতি গিভ অ্যান্ড টেক না। এটা একটি এবাদত।’তিনি বলেন, ‘যখন ইন্টারের প্রথম বর্ষে পড়ি তখন একবার জিয়াউর রহমান নারায়ণগঞ্জে আসলো। তখন কয়েকজন মিলে সেই গাড়ি বহর আটকে দিয়েছিলাম। তখন আমাকে প্রচন্ড মারধর করা হলো। আমি সেদিন জিয়াউর রহমানের গাড়ি থেকে পতাকা ছিড়ে ফেলেছিলাম। বার বার সেদিন মারধর করা হলো। আমাদের বাধার কারণে সেদিন জিয়া প্রবেশ করতে পারে নাই। তখন এতটা ব্যাথা পাই নাই। কিন্তু এখন পাই যখন দেখি মুখোশধারীরা কথা বলে। বিএনপি ইজ নট ফ্যাক্টর। বাংলাদেশে দল দুটি। একটি আওয়ামী লীগ ও অপরটি এন্টি আওয়ামী লীগ।’

বহুল আলোচিত এ সাংসদ বলেন, ‘আমি শামীম ওসমান গোলাম আজমকে নারায়ণগঞ্জের পবিত্র মাঠে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। সে কারণে গোলাম আজম আমীরগিরি ছেড়ে দেয়। আমি জামায়াত ও গোলাম আজমকে নিষিদ্ধ করেছিলাম। কারণ একাত্তরে এসব জামায়াতের রাজাকাররা পাক হানাদার বাহিনীকে নারীদের চিনিয়ে দেয়। পরে তাদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। একটু চিন্তা করেন চোখ বন্ধ করে আপনার চোখের সামনে গাছে বেধে রেখে আপনার মা বোনকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। বাবাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হচ্ছে। অনুভব করেন কেমন লাগে। এ কারণেই জামায়াতকে অপছন্দ করি। তারা তো আমাদের ৩০ লাখ মানুষকে ফেরত দিতে পারবে না, ফিরিয়ে দিতে পারবে না ২ লাখ মা বোনের সম্ভ্রম।

শামীম ওসমান বলেন, চট্রগ্রাম লংমার্চ ঘোষণা করা হলো। আমি একজনের নির্দেশ শুনি। দুইজনের নির্দেশ মানি না। আমি স্বাধীনচেতা মানুষ। আমি সৎ থাকার চেষ্টা করি। আল্লাহকে বিশ্বাস করি। খালেদা জিয়া জানতেন কী না জানি না তবে সেই লং মার্চের বহরে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকা সহ অনেকেই ছিলেন না। ওই লং মার্চে দুটি বাসে ৬৫ জন মাটি কাটার শ্রমিক ছিল যাদের ভাড়া করা হয়েছিল। টার্গেট ছিল জয়নাল হাজারীর ফেনীকে। ওই সময়ে আমি তাদের টার্গেট করা ছিলাম না। টার্গেট ও পরিকল্পনা ছিল খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে বোমা হামলা হবে। আর ওই দুটি বাসে বোমা হামলা হবে। এতে ৬৫ জন মারা যাবে, খালেদা জিয়ার উপর হামলা হয়েছে এটা নিয়ে সারাদেশে ঝামেলা সৃষ্টি করে অরাজকতা সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসবে। চট্রগ্রামের দায়িত্বে ছিল সাকা চৌধুরী, ঢাকাতে ছিল আব্বাস ও খোকা। আর সারাদেশেও ছিল। যখন এ পরিকল্পনার খবরটি আসলো তখন আমি রাজী ছিলাম না। কারণ সেটা ছিল খুব ক্রিটিক্যাল।

শামীম ওসমান বলেন, আমি কিন্তু খালেদা জিয়ার লংমার্চ আটকে দেই নাই। তিনি কিন্তু লংমার্চে গিয়েছিল। ৪ ঘণ্টা সময় ক্ষেপন করেছিলাম। আমি একাই করেছিলাম সেটা। তারা কয়েক হাজার অস্ত্র ও সর্বশক্তি নিয়ে এসেছিল। আর আমি জনগনকে নিয়ে সময়মত গাড়ি বহর আটকে পড়ে সময় ক্ষেপন করিয়েছিলাম। ৪ঘণ্টা সময় ক্ষেপনের কারণে গোয়েন্দা সংস্থা নিরাপত্তা জোরদার করেছিল।

তিনি বলেন, আমরা সামনের দিক বিবেচনা করে রাজনীতি কম হয়। রাজনীতি আমি একটু বুঝে করি। এ কারণে আমার উপর বিপদটা বেশী আসে। আমি সেই রাজনীতি করে যদি শেখ হাসিনার উপর কোন হাত যেতে চায় তাহলে আমাদের উপর দিয়ে যেতে হবে। সেই হাত চেষ্টা করবো ভেঙে দিতে। শকুনের হাত বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার উপর পড়তে দিব না। এটা আমার দায়িত্ব।

শামীম ওসমান সিঙ্গাপুরের প্রবাসীদের সতর্ক থাকার আহবান রেখে বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর অক্টোবরে হবে ফাইনাল খেলা। দেশী বিদেশী সব খেলা হবে। যদিও আন্তর্জাতিক খেলা অনেক কমে গেছে। সেপ্টেম্বরে দেখবেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা থাকবে না। কিন্তু আমরা থাকবো। হয়তো এ খেলাতে আগামীতে আপনার সাথে আমার দেখা নাও হতে পারে। তবে সামনের পথটি অনেক কঠিন হবে।

সিঙ্গাপুরের রিভার ওয়ার্ক তান্দুর সেস্টুরেন্ট হলরুমে ৬ এপ্রিল শুক্রবার স্থানীয় সময় সাত ৯টায় সংবর্ধনা ও আলোচনা সভায় সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন। সিঙ্গাপুর শাখা আওয়ামীলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন রানার সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আল আমিন।