প্রেস বিজ্ঞপ্তি :

চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজে উন্নয়ন ফি’র নামে ৫০০০ টাকা করে বাড়তি অর্থ আদায়, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আটকে দেওয়ার প্রতিবাদে সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময় অধ্যক্ষ জনাব জাহেদ খানের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অব্যাহত সমালোচনার প্রেক্ষিতে আমার বক্তব্য:

আমি নূরুল আজিম রণি। আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উদ্বুদ্ধ একজন কর্মী। আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী। আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সকল গণআন্দোলনের ঐতিহাসিক অংশীদার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজে ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করতে গিয়ে আমার জন্য বিব্রতকর একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া একটি ভিডিও মারফতে বিভিন্ন মহল থেকে আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হচ্ছে যা মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিনয়ের সঙ্গে আমি কিছু বক্তব্য তুলে ধরতে চাই।

জনাব জাহেদ খানের মালিকানাধীন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ ও সিটি বিজ্ঞান কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায়, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ছাত্রলীগ গত দেড় বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে। এইচএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে মার্চের শেষদিকে এই দুটি কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা আমাকে জানান যে, কলেজে উন্নয়ন ফি’র নামে ৫০০০ টাকা করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বাড়তি অর্থ নেওয়া হচ্ছে।

যারা বাড়তি অর্থ দিতে পারছেন না, তাদের প্রবেশপত্র আটকে দেওয়া হচ্ছে। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী প্রবেশপত্র আটকে পরীক্ষার্থীদের জিম্মি করে বাড়তি টাকা নেওয়ার এখতিয়ার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেই। এছাড়া কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের কাছে উন্নয়ন ফি আদায়ের কোন সরকারি নির্দেশনাও নেই। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ।

এই অবৈধ কর্মকা-ের খবর পাবার পর আমি নেতাকর্মীদের নিয়ে গত ২৯ মার্চ বিজ্ঞান কলেজে গিয়ে অসহায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করি। তাদের নিয়ে মিছিল করে একই মালিকের আরেকটি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে যায়। তখন কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেন, বাড়তি টাকা যাদের কাছ থেকে ইতোমধ্যে নিয়েছেন, তা ফেরত দেবেন। কারও প্রবেশপত্র আটকে রাখা হবে না। কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা সন্তুষ্ট হলে আমরা সেখান থেকে চলে আসি।

এরপর ৩১ মার্চ আবারও কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা আমার কাছে অভিযোগ করেন, বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জনাব জাহেদ খান আশ্বাসের বরখেলাপ করে বাড়তি টাকা তো ফেরত দিচ্ছেনই না। উপরন্তু বাড়তি টাকা না দিলে প্রবেশপত্র দেবেন না বলেও জানিয়ে দিচ্ছেন। ২ এপ্রিল থেকে এইসএসসি পরীক্ষা শুরু। এই অবস্থায় প্রবেশপত্র আটকে যাবার কথা বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক কান্না করে দেন।

অসহায় ছাত্রছাত্রীগুলোর শিক্ষাজীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা, তাদের কান্না আমাকে বিচলিত করে। তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে এমন হঠকারিতায় মেতে উঠতে পারে, তা আমরা কেউ কল্পনাও করিনি।

এই অবস্থায় ৩১ মার্চ আমি নেতাকর্মীদের নিয়ে আবারও বিজ্ঞান কলেজে যাই। সেখানে যাবার পর কলেজের নিচে প্রচুর অছাত্র ও সন্ত্রাসীদের দেখতে পাই। তারা আমাদের লক্ষ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এসময় পুলিশও উপস্থিত ছিল। পুলিশের সামনেই সন্ত্রাসীরা বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে আশপাশের এলাকায় ভীতিকর পরিস্থতির সৃষ্টি হয়। তবে আমরা এসব সন্ত্রাসী কর্মকা-ের প্রতি নজর না দিয়ে বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে চলে যায়। অধ্যক্ষ জাহেদ খান আমাদের দেখে তড়িঘড়ি করে চলে যাবার চেষ্টা করলে অভিভাবক-শিক্ষার্থী এবং আমরা মিলে তাকে ঘিরে রাখি। পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দেওয়া এবং বাড়তি টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ভদ্র ভাষায় অনুরোধ করি। একপর্যায়ে অধ্যক্ষকে নিজের চেম্বারে গিয়ে বসার জন্য অনুরোধ করলে তিনি এতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বারবার চলে যাবার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। উল্লেখ্য ২৯ মার্চও শিক্ষার্থীÑঅভিভাবক এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যাবার খবর পেয়ে অধ্যক্ষ বিজ্ঞান কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে চলে গিয়েছিলেন।

আমরা অধ্যক্ষ জাহেদ খানকে ঘিরে ধরে উনার চেম্বারে নিয়ে যাবার সময় আমি শান্তভাবে কলেজের সামনে সন্ত্রাসী জড়ো করার বিষয়ে জানতে চাই। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘তুই কে ? তাহলে তুই এখানে এসেছিস কেন ?’ হঠাৎ করে অধ্যক্ষের এই আচরণ আমাকে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করে। আমার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ হন। মূলত এরপর উত্তেজনার একপর্যায়ে জাহেদ খানকে সবাই মিলে তার চেম্বারে প্রবেশে বাধ্য করি এবং তাঁর শরীরে আঘাত করা হয়, যার ভিডিও গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে।

আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, উত্তেজনাকর একটি পরিস্থিতিতে নিজের রাগ সংবরণ করতে না পারায় আমি দু:খ প্রকাশ করছি। আমার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার ছিল। জাহেদ খান সাহেব শিক্ষকতা পেশায় আছেন। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে তাঁর সঙ্গে এই আচরণের জন্য আমি লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।

আমার প্রাণপ্রিয় সংগঠন ছাত্রলীগের লাখ লাখ নেতাকর্মীর কাছে আমি দু:খ প্রকাশ করছি। সর্বোপরি এই চট্টগ্রামের আপামর শিক্ষক সমাজ, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক এবং চট্টগ্রামবাসীকে আমি বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।

একইসঙ্গে আমি বিনয়ের সঙ্গে আরও বলতে চাই, একটি খন্ডিত ভিডিও ফুটেজ দেখে পুরো ঘটনা এবং সেইসময়ের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা যাবে না। যারা খ-িত ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে আমার কর্মকা- মূল্যায়ন করে আমাকে দোষারোপ করছেন, বিনয়ের সঙ্গে বলছি, আমার উপর অন্যায় হচ্ছে।

এই প্রেক্ষিতে আরও বলতে চাই, অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ উঠার পর আমার বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলাও হয়েছে। এই অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা এবং বানোয়াট। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করেছি। কোনদিন কোন প্রতিষ্ঠান আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ তুলতে পারেনি। কেউ বলতে পারবে না, আন্দোলনের বিনিময়ে কারও কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা চেয়েছি কিংবা এক টাকা দাবি করেছি।

সবাই জানেন, আমি অকপটে সত্য উচ্চারণ করি। যত প্রভাবশালী ব্যক্তিই হোক, কারও বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণ এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ থেকে আমি কখনো পিছপা হই না। স্বাভাবিকভাবেই আমার সত্য বক্তব্য অনেক সময় প্রভাবশালী মহলকে ক্ষুব্ধ করেছে। সেই ক্ষুব্ধ মহলের ইন্ধনে অসাবধানতাবশত করা আমার একটি ভুলকে পুঁজি করে বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জনাব জাহেদ খান এই মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রয়াস পেয়েছেন বলে আমি মনে করি।

তবে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, যত মামলাই হোক কিংবা আমাকে ঘায়েলের যত ষড়যন্ত্রই হোক, আমি এই চট্টগ্রাম শহরের লাখ লাখ বঞ্চিত অসহায় শিক্ষার্থীর পক্ষে কথা বলে যাবই। একজন শিক্ষার্থীও কোন প্রতিষ্ঠানে বেআইনি আচরণের শিকার হচ্ছে, এমন খবর যদি আমি পাই, আমি নূরুল আজিম রণি সবার আগে দৌড়ে যাব। ভুল করলে, সেটা স্বীকার করে সংশোধনের সৎ সাহস আমার আছে। কিন্তু আমি কারও চোখ রাঙানির ভয়ে পিছু হটবো না।

আমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে গড়ে উঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং তাদের বাণিজ্যিক আচরণের বিরুদ্ধে কথা বলে যাবই। শিক্ষাকে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের পথ থেকে সরিয়ে যারা পণ্য বানাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমার নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আমি মনে করি, একটি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে এটাই আমার রাজনৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।