বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের অনেকের কাজের ধারাও পাল্টে যায়। এটাহওয়াই স্বাভাবিক। কারণ কিশোর বয়সে যেইসব কাজ আমরা করি সেগুলোতরুণ বয়সে করি না। আবার তরুণ বয়সে যা কাজ করি সেগুলো বৃদ্ধ বয়সেকরিনা। কিন্তু তারপরও কিছু কাজ আছে যা আমাদের কখনই বন্ধ করা উচিতনয়। বরং সময়ের সাথে সাথে সেগুলো আরও বেশি করে করা উচিত। তেমনকিছুই কাজের কথা নিচে দেয়া হলো:

 

কখনও স্বপ্ন দেখা বন্ধ করো না

 

স্বপ্ন মানুষকে বাঁচতে শেখায়। শেখায় নিজের কল্পনাগুলোকে বাস্তবের সুন্দর কিছুগল্পে সাজাতে। আর সেই সু্ন্দর গল্পগুলোই হয় পরের প্রজন্মের স্বপ্ন দেখারঅনুপ্রেরণা। কল্পনাহীন মানুষ কখনোই নিজের জীবনকে আনন্দময় করতেপারেনা।

 

 

যে স্বপ্ন দেখে না সে বেঁচে থেকেও মৃত। সবাই যদি স্বপ্ন দেখা বাদ দিতো তাহলেআজকের আমাদের জীবন–যাপন এতো রঙিন হতো না। স্বপ্নের মৃত্যু হলেআমাদের কল্পনা শক্তিগুলো মহাশূণ্যে হারিয়ে যেতো। বিল গেটস্, স্টিব জবস্, মার্ক জাকারবার্গ আরও অনেক স্বপ্নদর্শী মানুষের নাম আজ আমরা জানতাম নাযদি তারা স্বপ্ন দেখা বাদ দিতো। আমরা একটি স্বাধীন সু্ন্দর দেশ পেতাম না যদিনা আমরা ঐ সময় স্বপ্ন না দেখতাম। তাই জীবদ্দশায় কখনোই স্বপ্ন দেখা বাদদেয়া উচিত না। স্বপ্ন দেখতে হবে এবং স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে পরিণত করতে কাজকরে যেতে হবে।

 

” Never stop dreaming. Never stop listening to the music that is inside of you.” – Debasish Mridha

 

কাউকে ভালোবাসি বলতে কখনও কার্পণ্য করো না

 

আমরা অনেকেই ‘ভালোবাসি’ শব্দটা শুনলে শুধু প্রেমিক–প্রেমিকার মধ্যকারবিষয়টা চিন্তা করি। আমরা যদি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি একটু ইতিবাচক করতে পারিতাহলে বুঝতে পারবো এই ভালোবাসি শব্দটির মধ্যে একটি অদৃশ্য গুন আছে। যাঅন্যদের মধ্যে খুব সহজেই একটি মিষ্টি প্রভাব ফেলতে পারে।

 

 

যেমন আমাদের বাবা–মা আমাদের জন্য নিজের সাধ্যমতো সবকিছু করেন।আমরা যদি তাদের একটা বার শুধু ভালোবাসি বলতে পারি তাহলে তাদের মনেরমধ্যে সেটি কতোটা যে প্রভাব ফেলবে সেটি বলে বুঝানো সম্ভব নয়। শুধু তাদেরমধ্যে নয় নিজেদেরও অনেক ভালো লাগবে। এমন ভাবে আমরা প্রতিনিয়ত যাদেরসাথে চলাফেরা করি তাদেরও যদি বলি হতো, সেটি কাজ দিয়ে বা অন্য কিছু দিয়েতাহলে শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্ববোধের পাশাপাশি একে অপরের উপর সম্মানটাও বেড়ে  যাবে। এতে করে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো থাকবে এবং একসাথে মন দিয়েকাজ করে যাওয়ার উদ্যমও পাওয়া যাবে।

 

“Compassion is the heart that never stops loving others. It is like a wellspring that never runs dry.” -Ryuho Okawa

 

নিজেকে কখনও ছোট করো না

 

কাজের মাধ্যমেই আমরা নিজেদেরকে সবার সামনে তুলে ধরি। বংশ পরিচয় দিয়েকখনও কিন্তু সবার মনের মধ্যে জায়গা করে নেওয়া সম্ভব না। কাজ দিয়েই সবারমন জয় করা সম্ভব। আর অবশ্যই সেই কাজটি হতে হবে সৎ। সৎ মানুষদেরকেসবাই সম্মান তো করেই, বিশ্বাস এবং ভালোবাসাটাও তাঁদের জন্য বরাদ্দ থাকেসবার কাছে।

 

আমরা কেউ অমরত্বের সুধা পান করিনি। কেউ সারাজীবন বেঁচে থাকবো না।কিন্তু আমাদের সৎ কাজগুলো কিন্তু ঠিকই অমরত্বের সুধায় মিশে থাকবেআজীবন। আর সেই সুধা হয়তো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হবেঅনুপ্রেরণার বীজ।

 

আমরা চেষ্টা করলেই সৎ কাজের পরিসীমা বাড়াতে পারি। যেমন আমরা  প্রতিদিন একটি করেও যদি সৎ কাজ করার পরিকল্পনা করি তাহলে প্রতিমাসেসংখ্যাটা কিন্তু তিরিশের কাছে পৌঁছায়। যেটি একজনের জন্য যথেষ্ট। এতে করেমনুষ্যত্ববোধ যেমন ঠিক থাকবে একই সাথে কাজগুলি অন্যের অনুপ্রেরণাও হবে।

 

“The elegance of honesty needs no adornment.” – Marry Browne

 

বিশ্বাস করা কখনও থামিও না

 

বিশ্বাস হতে পারে একে অপরের উপর বিশ্বাস কিংবা আত্মবিশ্বাস। এটি একটিঅমূল্য হাতিয়ার। কারন বিশ্বাস দিয়ে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। পাশাপাশিএকে অপরের সাথে একটি শ্রদ্ধামূলক সম্পর্ক বজায় থাকে। বিশ্বাস দিয়েইসাফল্যের সিঁড়ি তৈরী হয়। যারা নিজেদের বিশ্বাস করে তাদের কাছে কোনোকাজই কঠিন নয়। তারা জানে তাদের বিশ্বাস দিয়ে তারা সব কিছু জয় করতেপারবে।

 

কোনো কিছু অর্জন করার প্রথম ধাপ হচ্ছে নিজেকে বিশ্বাস করা। এটিও মানতেহবে যে ‘নিজেকে দ্বারা সম্ভব‘ সেটি অর্জন করা। এটি ছিলো আত্মবিশ্বাসের কথা।নিজেকে বিশ্বাস করার পাশাপাশি অপর জনকেও বিশ্বাস করতে হবে। নিজেরসহযোগীর উপর এবং তার কাজের উপর আস্থা রাখা লাগবে। মনে রাখতে হবেবিশ্বাসেই সম্পর্ক বজায় রাখে।

 

“Great things happen to those who don’t stop believing, trying, learning, and being grateful.” – Roy T. Bennett

 

 

কখনও শেখা বন্ধ করো না

 

শেখার কোনো বয়স লাগে না। আমাদের আশেপাশে যা কিছুই ঘটছে সব কিছুথেকেই শিক্ষা নেয়া উচিত। এতে করে জীবনের পরবর্তী সময়ে সেটি অভিজ্ঞতাস্বরূপ কাজ করবে। আর শেখার কোনো নির্দিষ্ট সিলেবাস নেই যে শুধু এইটুকুবিষয়ের উপরে শিখতে হবে। সিলেবাসের উপর শিক্ষা নিয়ে ডিগ্রী ঠিকই নেয়াসম্ভব কিন্তু বাস্তব জীবনে সবকিছুর উপর সেটি কতটুকু কাজে লাগানো যাবে এটিনিয়ে অনেকের মধ্যে সন্দেহ আছে। আর পাঠ্যপুস্তক এর শিক্ষাই সব নয়।

 

যেই শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা যায় না সেটির মূল্য ও নেই। শিক্ষিতহওয়ার চেয়ে স্বশিক্ষিত হওয়াটাই বেশি জরুরি। শেখা হতে পারে কোনো স্কিলডেভেলপমেন্ট। আবার হতে পারে কারো কোনো ভালো কাজ দেখে শিক্ষা নেয়া।আবার হতে পারে বার বার ভুল করে শেখা। এই পথে অনেক বাধা আসবেই। কিন্তুকখনই শেখা থামানো উচিত না। কারণ সবাই ভুল করেই শিখে।

“Curiosity is the wick in the candle of learning.” – Willian Arthur Ward

 

সবশেষে এটুকুই বলা যায় যে বয়স মানুষের শরীরে নয়, বয়স থাকে মানুষেরমনে। আর এইসব কাজ যদি আমরা বয়স বাড়ার পরও চালিয়ে যেতে পারিতাহলে সেটি হবে নিজের জন্য মঙ্গল এবং পরের জন্য অনুপ্রেরণা।