তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম :

চট্টগ্রামের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষকে বেদড়ক পিটিয়ে আহত করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে নগর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক নুরুল আজিম রনি’র বিরুদ্ধে। তবে লাঞ্ছিতের বিষয়’টি অস্বীকার করেছে তিনি। নুরুল আজিম রনি বলেন, শিক্ষার্থীদের থেকে বাড়তি ফি নিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাই অধ্যক্ষকে বসিয়ে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি তার গায়ে হাত তুলিনি। একজন শিক্ষকের সঙ্গে খারাপ আচরণের প্রশ্নই আসে না। তবে কলেজের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, অধ্যক্ষকে কিল-ঘুষি দেওয়া হয়েছে। আর অধ্যক্ষ বলছেন, ওই ছাত্রলীগ নেতার চাপের মুখেই টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

শাহেদ হাসান নামে এক শিক্ষার্থী জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বাড়তি ফি নিয়েছিল। ওই বাড়তি টাকা ৩১ মার্চ ফেরত দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দেয়নি। পরে রনি ভাই আসলে ( ঘটনার দিন ২ এপ্রিল) অধ্যক্ষ প্রতিবাদের মূখে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়।

নাম জানাতে অনিশ্চুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার দিন সকালে বাড়তি টাকা ফেরত চাই, দিতে হবে বলে শ্লোগান দেয় ছাত্ররা। সকাল ১০টার পর নগর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আসেন। তখন তাকে দেখে অধ্যক্ষ চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে তাকে তার কক্ষে বসিয়ে রেখে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয়।

নুরুল আজিম রনি বলেন, আমাদের আন্দোলনের কারনে গত ৩১ মার্চ কলেজ কর্তৃৃপক্ষ ১১০ থেকে ১২০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া বাড়তি ফি ফেরত দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ যে অন্যায়ভাবে টাকাগুলো নিয়েছিল, ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে সেটাই প্রমাণিত হয়। আমরা বাকি আরও প্রায় সাড়ে আটশ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিও জানিয়েছিলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ ড. জাহেদ খান বলেন, ঘটনার দিন আমাদের কলেজ বন্ধ ছিল। আমি একটা ফাইল দেখতে কলেজে গিয়েছিলাম। কলেজে গিয়ে দেখি অনেক ছাত্র। তারা হৈ হুল্লুড় করছে। তারা নুরুল আজিম রনিকে ফোন করে নিয়ে আসে। পরে সে এসে আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে আমার কক্ষে নিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজে এর প্রমাণ আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই দিন রনি আমাকে শুধু মারধরই করেনি, আমার মায়ের নাম ধরে গালি দিয়েছে।

অধ্যক্ষ বলেন, এই কলেজের প্রতিটি কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ভর্তির সময় আমাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী, মাসিক টিউশন ফি ও পরীক্ষার ফি ছাড়া আমরা বছরে আড়াই হাজার টাকা করে দুই বছরে পাঁচ হাজার টাকা উন্নয়ন ও বিবিধ ফি দেবে শিক্ষার্থীরা। এই শর্ত মেনেই শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে। আমরা মূলত ওই টাকা নিয়েছি। এর সবকিছু আমাদের কাছে আছে। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কলেজে আসা-যাওয়ার জন্য অভিভাবকদের মোবাইলে এসএমএস পাঠাই। তাছাড়া চট্টগ্রামে আমাদের প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। এখানকার পাঠদান সম্পূর্ণ আলাদা। ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। এসব খাতের জন্যই ওই বাড়তি টাকা নেওয়া হয়। এর বাইরে আর কোনও টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় না বলে তিনি জানান।

টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাহেদ খান বলেন, রাজনৈতিক ভয়ের কারনে টাকা ফেরত দিয়েছি। না হলে টাকা ফেরত দেওয়ার কোন বিষয় আসেনা। তাছাড়া নুরুল আজিম রনি আমাকে ভয় ভীতি দেখিয়েছে। অনেক ছাত্ররা তার সাথে ছিল। নিজেকে সেইভ করতে টাকা ফেরত দিয়েছি। ফেরত দেওয়া টাকাগুলো শিক্ষাবোর্ডর মাধ্যমে আপিল করে ফেরত নেওয়া হবে বলেন তিনি।

সিসিটিভি ফুটেজে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল আজিম রনি বলেন, আমি তার সাথে ভালো ব্যবহার করেছি। তবে কোনও অধ্যক্ষও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারেন না। কোনও অধ্যক্ষ পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আটকে রাখতে পারেন না। তিনি বলেন, শিক্ষক নামধারী অর্থলোভী ও শিক্ষাকে বাণিজ্যে পরিণত করা এক ব্যক্তিকে জিম্মি রেখে শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ওই দিন অধ্যক্ষ জাহেদকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরেছে নুরুল আজিম রনি। রনি সামনে থেকে তাকে (অধ্যক্ষ’কে) কিল-ঘুষি মারতেছে। ওই সময় রনি সঙ্গে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীও ছিল। ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যরা পাশেই ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নরুল হুদা বলেন, মারধরের বিষয়ে জানিনা। তাছাড়া কোন অভিযোগ আমি পাইনি। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি ফি নেওয়ার যে দাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে করা হয়েছে, সেটা যৌক্তিক বলে মন্তব্যে করেন তিনি।