বিদেশ ডেস্ক:
বর্ষা মৌসুমে প্রাণঘাতি ভূমি ধস ও বন্যার আশঙ্কায় কক্সবাজারের জনাকীর্ণ শিবির থেকে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো হয়। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। জানুয়ারিতে সম্পাদিত ঢাকা-নেপিদো প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের পাঠানো প্রথম ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা নিয়েই শুরু হয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে, রাখাইন এখনও রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে অবশ্যই স্বেচ্ছামূলক ও নিরাপদ হতে হবে। তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে নিরাপদে। রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মিয়ানমারের সেনা নিপীড়ন থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের একজনকেও তাদের ইচ্ছার বাইরে দেশে ফিরতে বাধ্য করা হবে না।

বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, বন্যা ও ভূমি ধসের ঝুঁকিতে থাকা এক লাখ রোহিঙ্গাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জুন মাসের আগেই সরিয়ে নেওয়া হবে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি-কে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে ১০ হাজার রোহিঙ্গাকে নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়েছি।’ কালাম জানান, নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য কক্সবাজারের ১৪ বর্গ কিলোমিটার বনভূমি বরাদ্দ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রতিদিন চারটি ফুটবল মাঠের সমান এলাকার বন উজাড় হচ্ছে।

কক্সবাজার সহকারী জেলা প্রশাসক মাহিদুর রহমান এএফপি-কে বলেন, জ্বালানি কাঠের জন্য শরণার্থীরা ইতোমধ্যে ৫ হাজার একর বন কেটে ফেলেছে। তিনি বলেন, বন কাটার ফলে তাতে পাহাড়ের উপরিভাগের শক্তি কমে যায়। তাই ভারী বৃষ্টি হলে ধসের ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়। প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা এমন ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে।

বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিবছর অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এই এলাকাটি বন্য হাতির আবাসস্থল। গত বছর ভারী বর্ষণে এই অঞ্চলে ভূমি ধসে ১৭০ জন নিহত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বন উজাড় করাকেই এমন বিপর্যয়ের কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। ২০১২ সালে ভূমি ধসে এখানে শতাধিক মানুষ মারা যায়। তারও দুইবছর আগে ভারী বৃষ্টিপাতে ৫০ জন নিহত হন।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থিনিও গুতেরেস আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, মৌসুমী ঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গারা চরম ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বাংলাদেশকে বলেছেন এমন স্থানান্তরের ক্ষেত্রে উচ্চ জায়গাই সবচেয়ে ভাল হবে।

বাংলাদেশ এর আগে বলেছে, বঙ্গোপসাগরের ঠেঙ্গার চরে নৌবাহিনী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছে। এক লাখ নির্যাতিত রোহিঙ্গাকে সেখানে সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান এএফপি-কে বলেছেন, এবছর রোহিঙ্গাদের সেখানে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।