নিজস্ব প্রতিবেদক:
হেডলাইন পড়ে হয়তো অনেক ভাববেন- ‘অনলাইন নির্যাতন এটা আবার কী’? এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ বাংলাদেশ তথ্য-প্রযুক্তি অনেক দূর এগিয়ে গেলেও তার প্রভাব প্রবীণদের মাঝে তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে বর্তমান ও নতুন প্রজন্মের অন্তত ৯০ শতাংশ তথ্য-প্রযুক্তি ছোঁয়ায় এসেছে এটা মানতেই হবে! এটা সবার জন্য সুখবর বটে! কেননা তথ্য-প্রযুক্তি হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। সেই যাত্রায় বাংলাদেশও শামিল হয়েছে। এতে দেশে অনেক ধরণের সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। কিন্তু এটা মানতে হবে- যেকোনো জিনিসের এপিট-ওপিট; দুটি দিক রয়েছে। ভালো থাকলে সেখানে অবশ্যই খারাপের প্রভাব থাকবে নি:সন্দেহে।
একটু সতর্ক ও সক্রিয় হলে এই খারাপটা রোধ করা যায়। ‘তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও এটা নিয়মটা চলে। তথ্য-প্রযুক্তির অবারিত সুযোগ-সুবিধা আমাদের জীবনে দিয়েছে গতিময়তা। এর ভিতরে কিন্তু কিছু সংকীর্ণতা ও নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এই খারাপ প্রভাবের ফলে কিন্তু সকল স্তরের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ক্ষেত্রে বিশেষ ঝুঁকিতে শিশু-কিশোররা। অনাইলনের নির্যাতন বিষয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ‘মুক্তি কক্সবাজার’র কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন এমনটি মনে করেন। এই নিয়ে গত মঙ্গলবার ‘অনলাইন ভিত্তিক শিশু নির্যাতন প্রতিকার ও প্রতিরোধ’ শীষর্ক মতবিনিময় সভায় তিনি বিস্তারিত বলেছেন। এই ইস্যু নিয়ে কক্সাবাজারে কাজ করছে সংস্থাটি।
মতবিনিময় সভায় আলমগীর হোসেন নানা তথ্য প্রকাশ করে জানান, অনলাইন যৌন হয়রানি বা নির্যাতন বলতে ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ইন্টারনেটের ব্যবহার করে শিশুর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে তাকে অশালীন কথা, বার্তা, ছবি কিংবা ভিডিও প্রদান করা, আবেগীয় সম্পর্ক স্থাপন করে নানা যৌনকর্মে নিয়োজিত করা, শিশুর বিবিধ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অর্থ বা কোনো উপহার প্রদানের মাধ্যমে তাকে নানা যৌনতামূলক অঙ্গভঙ্গি কিংবা আচরণে প্ররোচিত করা ইত্যাদিকে বোঝানো হয়।
তিনি জানান, এক কথায় ইন্টারনেট ব্যবহার কোনো শিশু কিংবা কিশোরকে অশালীন কথা, ছবি, কিংবা ভিডিও প্রদান করাই হচ্ছে অনলাইনে শিশু যৌন নির্যাতন। আবার অনেক সময় দেখা যায়, যৌন সম্পর্ক স্থাপনের কিছু ছবি কিংবা ভিডিও ধারণ করে অনলাইন জগতে ছেড়ে দেয়া হয়। ধারণকৃত এসকল ভিডিও সংরক্ষণ করে ভুক্তভোগীকে ভয় দেখিয়ে পুনরায় তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করা হয়। এমনকি ধারণকৃত ভিডিও বাণিজ্যিকভাবে ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে থাকে- যা যৌন শোষণ বলে ধরা হয়। অপরিচিত ব্যক্তির দ্বারা এই নির্যাতন হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিচিতজনরাই এমন হয়রানি করে থাকে।
আলগীর হোসেন বলেন, শিশুদের উপর অনলাইন যৌন নির্যাতন রোধে অভিভাবকের সচেতনতা অনস্বীকার্য। কারণ অভিভাবক সচেতন না হলে শিশুরা অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। সচেতনার অংশ হিসেবে- আপনার অপরিপক্ক সন্তানের মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটার ব্যবহারে অত্যন্ত সজাগ হতে হবে। তাদের প্রতি নিয়ত নজরদারীর মধ্যে রাখতে হবে।
তিনি বলেন আরো বলেন, পৃথিবীজুড়ে তথ্য-প্রযুক্তি দাপট চলছে। এক্ষেত্রে আপনার সন্তান পিছিয়ে থাকতে পারে না। কিন্তু তারা যেন তার অপব্যহার কিংবা কারো দ্বারা আক্রান্ত না হয়; সেটা মূখ্য কথা। এসব প্রতিবন্ধকতা রোধ করেই কিন্তু আমাদের এগিয়ে যেতে। যদি কোনো কারণে শিশু আক্রান্ত হয়েই যায়- এর জন্য সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করতে হবে। না হয় শিশুর ভবিষ্যতটা অংকুরে ধ্বংস হয়ে যাবে।
উক্ত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ‘মুক্তি কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক বিমল চৌধুরী ও অংশ নেয়া সাংবাদিকেরা। বিষয় ভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা করেন প্রকল্প সমন্বয়কারী আলমগীর হোসনে। মতবিনিময় সভা পরিচালনা করেন প্রোগ্রাম অর্গনাইজার অর্চনা দাশ উর্মি।