নুরুল কবির , বান্দরবান :
বান্দরবানে মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। এর ফলে স্বাধীনতা দিবসের সকল অনূষ্ঠান স্থগিত করেছে জেলা পরিষদ। মহান বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মাঠে কুজকাওয়াজে সালাম গ্রহন নিয়ে মূলত এ দন্দ্ব। পার্বত্য তিন জেলায় পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী জাতীয় দিবসগুলো জেলা পরিষদের আয়োজনে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু গত ২০১৪ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরীর যোগদানের পর থেকে মহান বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে পাবত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। সারাদেশের জেলায় জেলা প্রশাসক বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের সালাম গ্রহন করলেও তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি চুক্তির আলোকে জেলা পরিষদ আইন অনুসারে ১৯৮৯ সাল থেকে মহান বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মাঠে কুজকাওয়াজে সালাম গ্রহন করে আসছে পাবত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। কিন্তু এবার ২৬ শে র্মাচ মহান স্বাধীনতা দিবসের আয়োজনের উদ্যোগ জেলা প্রশাসন গ্রহন করলে এ বিরোধ চরমে উঠে। জানা যায়, প্রতিবারের মত এবারও মহান স্বাধীনতা দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ গ্রহন করে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি সভাও করা হয় জেলা পরিষদে। উৎসব উদযাপনের জন্য বিভিন্ন উপ-কমিটিও গঠন করা হয় প্রস্তুতি সভায়। কিন্তু জেলা প্রশাসন পৃথক ভাবে স্বাধীনতা দিবস পালনের লক্ষে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনাসহ দিন ব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের আমন্ত্রণ পত্র বিলি করলে এতে জেলা পরিষদের সাথে দ্বন্দ দেখা দেয়। পাবত্য জেলা পরিষদ ক্ষুদ্ধ হয়ে বুধবার স্বাধীনতা দিবসের তাদের সকল অনুষ্ঠান স্থগিত করে দেয়। বিভিন্ন উপ কমিটির আহবায়কদেরও অনুষ্ঠান স্থগিত করার কথা জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা জানিয়ে দেন। একই অনুষ্ঠান নিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানের স্বমন্বয়হীন কর্মসূচীতে বিপাকে পরেছেন অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে পাবত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান না জেলা প্রশাসক কুচকাওয়াজে সালাম নিবেন তা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে মতবিরোধ চলে আসছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। বিষয়টি নিয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা পার্বত্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করলেও এখনো পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি। আর এতে করে পাবত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের মধ্যকার দন্দ্ব দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাই বিষয়টির দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরী বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা। তবে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে মহান স্বাধীনতা দিবস যাথাযোগ্য ভাবে পালন করতে এবং এলাকার শান্তি ও উন্নয়নে আমরা সমন্বয় করেই কাজ করছি। পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ ক্রমে জেলা প্রশাসন সকল উদ্যোগ গ্রহণ করছে। তাছাড়া জেলা পরিষদকে সাথে নিয়েই অনুষ্ঠানগুলো করা হবে। জেলা পরিষদকে সাথে নিয়ে করা আর জেলা পরিষদ আমাদের নিয়ে করা একই কথা। এখানে মতপার্থক্যের কোন অবকাশ নেই। এ বিষয়ে, বান্দরবান পাবত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা জানান, জেলা পরিষদের আইনেই এ বিষয়ে ব্যখ্যা দেয়া রয়েছে। তাছাড়া ১৯৮৯সাল থেকে পাবত্য জেলা পরিষদগুলো গঠনের পর থেকেই প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে জাতীয় দিবসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলো সম্পন্ন করা হয়। এবং প্রতিবছর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় মহান বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে জন্য সরকারীভাবে পাবত্য জেলা পরিষদকে বরাদ্ধ ও দিয়ে আসছে । কিন্তু সম্প্রতি জেলা পরিষদকে পাশ কাটিয়ে জেলা প্রশাসন সমন্বয়হীন একতরফা ভাবে অনুষ্ঠানগুলো পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে করে জনগুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যেকার সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। যার ফলে বাধ্য হয়েই এবারের স্বাধীনতা দিবসে পাবত্য জেলা পরিষদ যে সকল কর্মসূচী নিয়েছিল তা সকল স্থগিত করা হয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।