মূল্যবোধ

প্রকাশ: ১৫ মার্চ, ২০১৮ ০২:৫৯ , আপডেট: ১৫ মার্চ, ২০১৮ ০৪:৫৬

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


মেজবাহ তাহমিদ :

 ফুলের সৌরভ আর মানষের গৌরব দীর্ঘ নয়। চারপার্শ্বে ঝিকমিক সাজ সজ্জিত পরিবেশের আমাদের প্রিয় পাত্র ফুল। আমার মতে ফুল আর মানুষের জীবন এক। ফুল আর মানুষের জীবনের সংখ্যাও এক। মহা পন্ডিতদের যুক্তি “ফুলের মত পবিত্র মানুষের জীবন, অথবা ফুলের মত সুন্দর হোক তোমার জীবন” আসলে কি তাই? ফুল আর মানুষের জীবনের বৈশিষ্ট কি এক? তবে আমার কাছে ফুল ও মানুষ অমর্যাদা ও সম্মানহীন। আমার কথাটা শুনে কেউ কেউ চমকে উঠবে, কেউ বা হেসেও উঠবে। তবে আমি জানি আমি অদ্ভুদ কথা বলেছি। অতএব আমি কোন রসিকতা করছিনা, কেননা আমি আমার কথায় কৈফিয়ত দিতে বাধ্য।

ফুল কনিষ্ঠ সময়ে সৌরভ ও সুগন্ধ বিকশিত করে। কেউ শুভ কাজ করলে ফুল দিয়ে বরণ করে। আমাদের ভালবাসার প্রতীক হিসেবে ফুল সাক্ষী থাকে। কেউ কেউ পছন্দের মানুষের মন জয় করে ফুল দিয়ে। কিন্তু আমি বলছি ফুলের সৌরভ ক্ষণিকের জন্য। তার সৌরভ বিকশিত করার পর ঝড়ে গিয়ে ফুলের সৌরভ হারিয়ে ফেলে। সুগন্ধ দেওয়া ফুল থেকে বরঞ্চ দূর্গন্ধ  বের হয়। এ অবস্থায় কেউ ফিরেও থাকায় না, কেননা পচা ফুলে হাত দিয়ে কে হাত দূর্গন্ধ করবে। প্রিয় পাত্র সুগন্ধ ভরপুর ফুলটা পচে গিয়ে দূর্গন্ধের ভয়ে আমরা আড়াল করে রাখি। কেননা দূর্গন্ধের ফুলটা আড়াল করা উচিৎ যদি সে দূর্গন্ধে পরিবেশটাই দূষণ করে।

আমি বলেছিলাম ফুল আমার কাছে অমর্যাদা ও সম্মানহীন। তবে নয় কি? যদিও আমার কথায় কেউ এক মত নয়, তবে সে বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ সচেতন। আমার বক্তব্য আমি আপনাদের কাছে নিবেদন করছি তার সত্য-মিথ্যার বিচার আপনারা করবেন। সে বিচারে আমার কথা যদি না টেকে তাহলে রসিকতা হিসেবে গ্রাহ্য করবেন। আমি বলেছি ফুল কনিষ্ঠ সময়ের জন্য বিকশিত হই। ঠিকই স্বরুপে মানুষও কনিষ্ঠ সময়ের জন্য বিকশিত হই। তেমনি মানুষও তার জীবনকে ফুলের মত সাজিয়ে বিকশিত করে। সাজ সাজ্জুমান চারপার্শ্বে পৃথিবী যেন একপলকে একটা মানুষের জন্য সাজানো। চারপার্শ্বের পৃথিবীর সবকিছুতে যেন তারি অধিকার। খবরে কাগজে শুধু তারি নাম। ঘরে ঘরে সাজানো উজ্জল নক্ষত্রের মত যেন তারি ছবি। জনে জনে মুখে তারি বছন। চারপাশ্বের পৃথিবী যেন তার কাছে লাল,নীল সকুজ। আমি বলছি মানুষের জীবনও কনিষ্ট। ঠিকই মানুষও তার সৌরভ হারিয়ে ফেলে। যদি কোন অবস্থায় মানুষ তার মধুর সৌরভ হারিয়ে ফেলে তাহলে কি হবে?

আমরা দেখেছি বাঙ্গালীর এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন বাঙ্গালির কাছে আশার ফুল। বাঙ্গালির ঐতিহ্য হিসেবে উপাধি দেওয়া হত আশার ফুল। তিনি বাঙ্গালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন। বেশ হতো যদি সময়টুকু বন্ধী করে রাখা যেত। কিন্তু সে আজ জাতির কাছে যেন একটা কাটার ফুল। আমি বলেছিলাম ফুলের সৌরভ আর মানষের গৌরব দীর্ঘ নয়,তবে নয় কি? আমি বলেছিলাম মানুষ আর ফুলের সংখ্যা এক। কিন্তু তা নয় কি!

আমি আপনাদের একটা প্রশ্ন করব যার উত্তর আপনাদের আছে কি? ফুল পচে গেলে ফেলে দেওয়া যায় আর মানুষ পচে গেলে ফেলে দেওয়া যায় কি? কোন অবস্থায় মানুষের সৌরভ হারিয়ে গেলে তাকে কি আমরা ফুলের মত ফেলে দিব! একসময় যে আমাদের চোখের সোনা ছিল সে কি পচা ফুলে মত ডাস্টবিনে পড়ে থাকবে। আমাদের কি একটু ভাবতে কষ্ট হয়না। যে আমাদের চোখে সোনা ছিল, তাকে কেন ডাস্টবিনে ফেলে দেবো। কারো কি কিছু বলার সুুযোগ নেই? আমার মতে ফুল সৌরভ হারিয়ে সে ডাস্টবিনে পড়ে থাকতে পারে কিন্তু মানুষ নয়! তাই লেখক বলেছেন, দেহের মৃত্যুর রেজিস্টারী রাখা হয়, আত্নার হয়না। তবে আমি বলেছিলাম ফুল আর মানুষ এক। কিন্তু তাও নয়! কেননা ফুল ফেলে দিলে মাটিতে মিশে হারিয়ে যায়। তাই মানুষে দেহ মাটিতে মিশতে পারে তবে আত্মা নয়, তাই পন্ডিতরা বলেছেন, ফুল ফুটে ঝড়ে যায় রেখে যায় পাতা, মানুষ মরে রেখে যায় কথা। বচনটা শুনে একটু অবাক হবেন জানি কিন্তু মানুষের সৌরভ হারাতে পারে, তার জীবন বৈশিষ্ট নয়।

আমি ফুলের সাথে মানুষের জীবন তুলনা করছি, কেননা আজ আমাদের সমাজের মানুষ মানুষকে পচে যাওয়া ফুলের মত ডাস্টবিনে ফেলে রাখে। আমার মতে মানুষ যদিও তার সৌরভ হারিয়ে ফেলে তারপরেও আমাদের মাঝে বিরাজ করতে পারে। সৌরভ হারিয়ে গেলেও ওনাদের কাছে কিছু না কিছু শিখার থাকে। মানুষ তার সৌরভ হারাতে পারে তবে আদর্শ নয়। তবে তাদের হারানো থেকে কিছু শিক্ষা নিয়ে আমাদের জীবন সৌরভময় হিসেবে গড়তে পারি।

প্রবন্ধ লেখক: মেজবাহ তাহমিদ – টেকনাফ মডেল পাইলট হাই স্কুল থেকে এবার মাধ্যমিক দিয়েছেন। টেকনাফ, পুরাতন পল্লান পাড়া ।