৪র্থ  মৃত্যু বার্ষিকী আজ

মোঃ নাজমুল সাঈদ সোহেল ,চকরিয়া :

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালির ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকী আজ। ২০১৪ সালের এইদিনে কক্সবাজারের চকরিয়া লক্ষ্যারচরস্থ ছিকলঘাট পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন।১১ মার্চ সকাল ৭টায় হার্ট এ্যাটাকে উপজেলার উত্তর লক্ষ্যারচর নিজ বাস ভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বিকাল সাড়ে ৫টায় আমজাদিয়া মাদ্রাসা মাঠে তার নামাজে জানাজা শেষে রাস্ট্রীয় মর্যদায় স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তিনি স্ত্রী, ৫ ছেলে, ৩ কন্যা সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধের সময় আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী যুদ্ধকালীন কমান্ডার হিসাবে দায়ীত্ব পালন করেন। তিনি কক্সবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক কমান্ডার ও সরকারের উদ্যোগে গঠিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের চকরিয়ার সদস্য সচিব। আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী চকরিয়া থানায় দায়ের করা যুদ্ধাপরাধী মামলার বাদী। বর্তমানে ওই মামলাটি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তনাধীন রয়েছে।চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিষ্ঠাকালীন কমান্ডার ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামিলীগের দপ্তর সম্পাদকের দ্বায়িত্বভার পালন করেন।মৃত্যুর ৪র্থ বার্ষিকীতে মুক্তিযুদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালি ট্রাষ্টের উদ্যোগে খতমে কোরান,দোয়া ও অসহায় এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিম এবং তাঁহার শোকাহত পরিবারবর্গ আত্নার মাগফেরাত কামনায় সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন।

যুদ্ধকালীন সময়ে আনোয়ার বাঙ্গালির ভূমিকা সংক্ষিপ্ত বিবরণ: ২৩শে মার্চ চকরিয়া বিমান বন্দরের সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।প্রবীনদের ভাষ্যমতে তখনকার সময়ে দশহাজারের অধিক লোকের সমাগম হয়েছিল। মূলত জনসভার পর থেকে চকরিয়া বাসী স্বাধীনতা উত্তাল স্বপ্নের ব্যাকুল মদিরতায় আরো গভীর সংকল্পের ঐক্যবদ্ধ শক্তিতেি বলিয়ান হয়ে উঠে।স্বাধীন বাংলা বিনির্মাণেরর দীপ্ত শফথে অপ্রতিরুদ্ধ হয়ে উঠে তাদের মন ও মনন।সিপাহী এনামুল হক ২৫শে মার্চ কালো রাতে ১২জন বাঙালী সিপাহীসহ পাক বাহিনীর হাতে বন্দী হন।২৬শে মার্চ তাদেরকে হত্যা করার জন্য ট্রাকযোগে আগ্রাবাদ নিয়ে যাবার পথে সুকৌশলে ট্রাক ড্রাইভারকে হত্যা করে ট্রাকসহ সুদূর টেকনাফে চলে যান।কেরানী পাড়ার যুদ্ধে পাক বাহিনীর ঘাটি ধ্বংসের অভিযানের সময় সিপাহী এনামুল হক শহীদের মিছিলে শামিল হন।পালাকাটা গ্রামের শহীদ সিপাহী গোলাম কাদেরকে ৭১ এর ২৫শে মার্চ গভীর রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনা নিবাসে গুলি করে হত্যা করা হয়।চট্রগ্রাম বন্দরে ভারী অস্ত্্র নামানোর বিষয়ে অগ্নিঝরা প্রতিবাদকারীদের অন্যতম ছিলেন চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের সন্তান শহীদ গোলাম সত্তার।২৮শে মার্চ সংগ্রাম কমিটির সিদ্ধান্তে শহীদ হাবিলদার আবুল কালাম,নায়েক বদিউল আলম,নায়েক আশরাফ,হাবিলদার গোলাম কাদের,মোজাম্মেল হক,শামশুল হুদা,শের আলম,শাহনেওয়াজ,আনোয়ার হোসেন বাঙ্গাল,খলিলুর রহমান,আবুল কাশেম প্রমুখ যোদ্ধারা চকরিয়া থানায় এক সাহসী হামলা চালিয়ে ১১টি৩০৩ রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য নিয়ে আসে, ৩০শে মার্চ চকরিয়া থেকে সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ৫ট্রাক খাদ্যশস্য চট্রগ্রাম রেস্ট হাউজ,পটিয়া, কালুরঘাট ও অন্য কয়েকটি এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযুদ্ধের জন্য সাহায্য হিসাবে পাঠানো হয়।১৮ই এপ্রিল মোজাম্মেল হক বিএ এর নেতৃত্বে আরেকদল মুক্তিবাহিনী একটি সাদা টয়োটা কারসহ চারজন সশস্ত্র লোককে গ্রেপ্তার করেন।এরমধ্য দুজনকেই চকরিয়ার মেইন বাস স্টেশনে চিরিংগায় গুলি করে হত্যা করা হয় এবং বাকী দুজনকেই ফাঁসিয়াখালী ঢালায় গুলিকরে আহত করা হয়।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হলেও সত্য ২৭শে এপ্রিল হানাদার বাহিনী চকরিয়ার প্রতিরোধ বুহ্য ভেঙ্গে চকরিয়ায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।জনগণ ও ট্রেনিংপ্রাপ্ত গেরিলাদের সক্রিয় সংগ্রামে পাকহানাদার বাহিনীকে দীর্ঘ ১মাসের বেশি কোনঠাসা করে রাখতে সক্ষম হয়নি চকরিয়াবাসী।২৭শে এপ্রিল প্রত্যুষে কালুরঘাট সেতুতে পাকবাহিনীর সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লে.শামসুল মুমিন আহত অবস্থায় হানাদার বাহিনীর হাতে ধৃত হয় এবং ক্যাপ্টেন হারুণ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হানাদার বাহিনীর বনদীত্ব থেকে সহযোগীদের সহায়তায় পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।দুপুরে আহত ক্যাপ্টেনকে ডা.শামসুদ্দিন ও আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালি  প্রথমে পটিয়া হাসপাতালে  এবং পরবর্তীতে স্থায়ী চিকিৎসার জন্য চকরিয়াস্থ মালুমঘাট খৃষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে আসেন।পাক বাহিনীদের চকরিয়া আয়ত্তে আসার পর চকরিয়া কলেজে ক্যাম্প স্থাপন করে একটি মিনি ক্যান্টনমেন্ট গড়ে তুলে।পাক সেনারা প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে চিরিংগার হিন্দুপাড়া আক্রমন করে সমুদয় ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
হানাদার বাহিনী তুচ্ছ কারণে সাধারণ লোকের উপর অকথ্য অত্যাচার এবং সহায় সম্পদ লুট করে ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দিতে থাকে।চকরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ বিশেষ করে চিরিংগা, বড়ইতলী,হারবাং, লক্ষ্যারচর,ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা পাক বাহিনীরলুটপাটের প্রধান লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়।পাকসেনারা মেজর জামানের সহযোগিতা ও মদদে ১৯৭১ সালের ১২ই মে ফাঁসিয়াখালীর স্বনামধন্য মহাজন পিয়ারে মোহন দে-কে চকরিয়া থানায় নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালানোর পর ফাঁসিয়াখালীর ঢালায় নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।লুণ্ঠনকালে তার বাড়িতে আড়াইমন স্বর্ণ, ২২মন রৌপ্য এবং নগদ সাড়ে ৪লক্ষ্য টাকা লুণ্ঠনকারীরা নিয়ে যায়।মাতৃভূমি রক্ষার জন্য মাহবুবুর রহমান,আব্দুল হামিদ,জহিরুল ইসলাম,নজির আহমদ ও আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীসহ সাতজনের একটিদল সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য ভারত গমন করেন।