রোমানা তাছলিমা :

কোন কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারী,প্রেরণা দিয়েছেন, শক্তি দিয়েছে বিজয়ী লক্ষ্মী নারী। – কাজী নজরুলের এই কথা গুলো থেকে প্রমাণ মেলে নারীর অবদান ও গুরুত্ব। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে সব বিজয়ে,বিপদে-আপদে পুরুষের পাশে ছিল নারীরা,সব মানব সন্তানের জন্ম কোন না কোন নারীর গর্ভে,সব মানুষের প্রথম শিক্ষক কোন না কোন নারী,সব মানুষের প্রথম আবেগ ও ভালবাসা কোন না কোন নারী,একজন নারী /মা ছাড়া একটি পরিবার কল্পনা করা অসম্ভব।একজন নারী /মা/বোন/ স্ত্রী /কন্যাই আদর, স্নেহ, ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখে একটি পরিবার কে, পরিবারের সকল সদস্যদেরকে ।শুধু পরিবার নয় সমাজ ও দেশকে সুন্দর করতেও তাদের অবদান রয়েছে। ইতিহাস কথা বলে, ইতিহাস মুছে ফেলা যায়না কখনো। ভাষা আন্দোলন,৭১এর মুক্তিযুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও সংক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল, অবদান ছিল। তা এখনো আছে,থাকবে চিরকাল।নারীরা এখন রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা অবদান রাখছে প্রশংসিয়ভাবে।

নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ শীর্ষে।গত ২৮ বছর ধরে দেশের সরকার প্রধান নারী,বিরোধী দলীয় প্রধানও নারী,বর্তমান স্পিকার ও নারী,বর্তমান সব চেলেঞ্জিং পেশা গুলোতেও নারীর প্রশংসনীয় অবস্থান রয়েছে। তারপরও এখনো আমাদের সমাজের কিছু লোক নারীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে। নারীর সব যোগ্যতা থাকা শর্তেও এখনো আমাদের সমাজ নারী বলে বেশ করে। নারী যে সব ক্ষেত্রে সমান যোগ্য তার জলন্ত প্রমাণ স্বয়ং আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি, পরিবার, সমাজ সব সামলাচ্ছে নারীরা এখন। তারপরও ঘরে বাইরে কোথাও না কোথাও নারীরা প্রতিদিন নানারকম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। জেন্ডার বৈষম্য, যৌন হয়রানী,ধর্ষণ,খুন,এমনকি বাকস্বাধীনতার শিকার হচ্ছে আমাদের সমাজের নারীরা। একজন নারী ধর্ষণ বা যৌন হয়রানীর শিকার হওয়ার পর তখনও আমাদের সমাজ দোষ চাপায় নারীর উপর।ধর্ষকের উপর নয়।অপরাধীর কোন দূষ নেই। সব দূষ যেন নারীর,নারী বাইরে কেন, নারীর পোষাক এমন কেন সব কিছু নিয়ে প্রশ্ন তুলে।
এছাড়াও এখনো আমাদের সমাজের নারীরা নানা ধর্মীয় গোড়ামী ও নানা আচারের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।দেশের ৮০ভাগ নারী কোন না কোন সহিংসতার শিকার হচ্ছে।পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব নারীর ক্ষমতায়নে প্রতিনিয়ত বাধা হয়ে দাড়ায়।আমাদের সমাজ, দেশকে সভ্য সমাজের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে অবশ্যই আমাদের সকলের নারী অধিকার ও নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রতিটি নারী পুরুষের যত্নশীল হতে হবে। দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকরও বেশি নারীসমাজকে বাদ দিয়ে,নারী উন্নয়নকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।মানুষ হিসাবে পুরুষের মত একজন নারীও সবকিছুতে পরিপূর্ণ অধিকার দাবী করতেই পারে। আসুন এই অভ্যাসটা নিজের পরিবার থেকে শুরু করি। নিজের মা, বোন, স্ত্রী, বোন,মেয়েকে একটু সুযোগ দিই,ভালবাসি,সহযোগিতা করি, সম্মান দিই।সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে একজন নারী অবশ্যই নিজেকে যোগ্য করে তুলতে পারে। আর নারীদেরকে বলছি আমি নারী আগে এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। তবেই কোনকিছু করা সম্ভব।এইক্ষেত্রে একজন নারীর ভূমিকাও কম না। একজন মা তার সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই শিখাতে পারে নৈতিকতা, নারীকে সম্মান দেওয়া,জেন্ড়ার বৈষম্য না করে ছেলেকে বল, গাড়ি, ঘোড়া ও মেয়েকে পুতুল তুলে নাদিয়ে দুজনকেই একই রকম খেলনা দেওয়া। জেন্ডার সেনসেটিভলি আচরণ না করার শিক্ষা দেওয়ার।
আমরা নারীরা কারো করুণা চাইনা নিজেদের অধিকার চাই পারিবারিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। দিবস ও করুণা দিয়ে নই নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে নিজেদের পরিচয় গড়তে চাই।
নারী চাই ভাল রাখতে, নারী চাই ভাল থাকতে।
নারী চাই একটু সম্মান ও ভালবাসা।
ভাল থাকুক সকল নারী।
আমার মা সহ সকল নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।

রোমানা তাছলিমা ,নারীর অধিকার সচেতন এক নারী।