সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে চলতে এবং নিজের আত্মবিশ্বাস বর্ধিত করতে নিম্নে উল্লিখিত ১৫টি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে যা আত্মবিশ্বাসী মানুষেরা করে না:

 

১। তারা অজুহাত দেখায় না

 

উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষরা তাদের নিজেদের চিন্তা-ভাবনা এবং কর্মের দায়িত্ব নিজেরাই নিয়ে থাকে । তারা ট্রাফিকের অজুহাত দিয়ে কর্মে দেরি করে পৌঁছানোর অক্ষমতা টি চাপা দেয়ার চেষ্টা করে না। তারা তাদের আসন্ন কাজকে এ বলেএড়িয়ে চলে না যে “তাদের হাতে সময় নেই” বা “তারা কাজটি করতে পারদর্শীনয়”।

তারা কাজটি সম্পন্ন করার জন্য সময় বের করে নেয় এবং আত্ম–উন্নয়নের প্রচেষ্টা করতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা কাজটিতে পারদর্শী হয়ে ওঠে।

 

২। তারা ভয়ংকর কোনো কাজকে এড়িয়ে চলে না

 

উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষরা তাদের জীবনকে ভয় দ্বারা প্রভাবিত হতে দেয় না।তারা জানে যে তারা নিজেকে যে মানুষটি হিসেবে গড়ে তুলতে চায় সে মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্যে তাদের অনেক সময়ই ঐ কাজগুলোই করতে হবে যে কাজগুলো তাদের কাছে ভীতিকর।

 

৩। তারা নিজেদেরকে আরামপ্রদতায় আবৃত্ত রাখতে নারাজ

 

উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষরা সাধারণত স্বাচ্ছন্দ্য কে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে ।তারা জানে যে  জীবনের স্বপ্ন গুলোর মৃত্যুর কারণই হচ্ছে এই আরামপ্রিয়তা । তারা সর্বদাই কোন না কোন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে। কারণ তারাজানে সফলতার জন্য নিজের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা প্রদান করাটা অত্যন্ত জরুরি।

 

৪। তারা কোনো কাজ পরে করার জন্য জমিয়ে রাখে না

 

উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষেরা জানে যে পরবর্তীতে অনেক বেশি ভালো পরিকল্পনাসম্পাদনের চেয়ে বর্তমানে একটি মোটামুটি ভালো পরিকল্পনা সম্পাদনঅনেক বেশী শ্রেয়।

 

তারা “সঠিক সময়” বা “সঠিক পরিস্থিতির” জন্য অপেক্ষা করে না, কারন তারাজানে এসব অনুভূতি গুলো শুধু মাত্র পরিবর্তিত পরিস্থিতির ভয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তারা যা করার তা এই জায়গায়, এই মুহূর্তে আর আজই করে ফেলে। কারণ শুধুমাত্র এভাবেই অগ্রগতি সম্ভব।

 

৫। তারা অন্যের মতামত দ্বারা প্রভাবিত হয় না

 

উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষেরা অন্যের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াকে তোয়াক্কা করে না। তারা অন্যের মঙ্গল কামনা করে এবং পৃথিবীতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যস্থির করে। যে সকল নেতিবাচক মতামতের পরিবর্তন করা তাদের পক্ষে সম্ভবনয়,তা নিয়ে তারা চিন্তা করে না। তারা জানে যে তারা যেমন সেভাবেই তাদেরকেতাদের প্রকৃত বন্ধুরা গ্রহণ করে নেবে,তাই বাকিদের বিষয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশকরে না।

 

৬। তারা মানুষকে নিয়ে সমালোচনা করে না

 

উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষেরা অপ্রয়োজনীয় বা স্ব-নির্যাতনমূলক নাটকীয়তায়কোনো রূচি রাখে না। তারা বন্ধু-বান্ধবদের অজান্তে তাদের অমর্যাদা করা, সহকর্মীদের বিরুদ্ধে সমালোচনায় অংশগ্রহণ করা বা বিভিন্ন অভিমতের মাধ্যমেআত্মীয় স্বজনদের কশাঘাত করে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না।

 

তারা নিজেদের নিয়ে এতোটাই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে যে অন্যকে উপেক্ষা করারকথা চিন্তাই করে না।

 

 

৭। সম্পদ হীনতা তাদের পথে বাঁধা হতে পারে না

 

উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষেরা তাদের কাছে থাকা সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতেপারে,তা যত অল্পই হোক না কেন। তারা হাল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায় কারনতারা মানে সৃজনশীলতার মাধ্যমে সবকিছুই করা সম্ভব। তারা বাঁধাগুলোকে যন্ত্রণাদায়ক মনে না করে তা সমাধানের উপর  গুরুত্বারোপ করে।

 

৮। তারা তুলনা করে না

 

উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষেরা জানে যে তারা কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। তারা  শুধু মাত্রসে মানুষটির সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত যে মানুষটি সে গতকাল ছিল, অন্য কারোসাথে নয়। তারা জানে যে প্রতিটি মানুষের জীবনের গল্প এতোটাই আলাদা যেএগুলোর মাঝে তুলনা করাটা সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক এবং কারো জীবনকে সরল ভেবে নেওয়াটা নিরর্থক।

 

৯। তারা সকলকে খুশি করায় আগ্রহী নয়

 

উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষদের যত জনের সাথে দেখা হয় তাদের সকলকেই খুশিকরার আগ্রহ তাদের মাঝে প্রতিফলিত হয় না। তারা এ ব্যাপারে অবহিত যে সকলমানুষ মানিয়ে চলার মত নয় এবং এটাই জীবনের সত্য । তারা তাদের সাথেসম্পৃক্ত মানুষের প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন, পরিমাণ সম্পর্কে নয়।

 

 

১০। তারা পুনরায় নিশ্চিত হতে চায় না

 

উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষ কোনো কিছু ধরে বসে থাকার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনা। তারা জানে জীবন সবসময় অনুকূল নয় এবং সবসময় তাদের পরিকল্পনাঅনুযায়ী সব কাজ না হওয়াটাই স্বাভাবিক। যেহেতু তারা তাদের জীবনে ঘটেযাওয়া প্রতিটি ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নয়,সেহেতু তারা ঐ ঘটনার প্রতিতাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

 

যে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে তারা তাদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেগ্রহণ করে নেয়,যা তাদের কে সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে।

 

১১। তারা জীবনের অস্বস্তিকর সত্যগুলো এড়িয়ে চলে না

 

কোনো সমস্যা অধিক পরিমাণে বিস্তৃ হওয়ার আগেই উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষরাতা গোড়া হতে সমাধান করার চেষ্টা করে। তারা জানে যে কোনো সমস্যাকে সমাধান না করে ঝুলিয়ে রাখলে তা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। তাই কোনোঅস্বস্তিকর আলোচনা ধামাচাপা দিয়ে রাখার বদলে তারা বর্তমানেই নিজের সঙ্গীর সাথে সেই বিষয়ে কথা বলার ঝুঁকি গ্রহণের প্রতি বিশ্বাস রাখে।

 

১২। ক্ষুদ্র বাঁধায় তারা হাল ছেড়ে দেয় না

 

উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষ যতবার ব্যর্থ হয় ততবারই উঠে দাঁড়ায় এবং পুনরায়শুরু করে। তারা জানে যে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ব্যর্থতা একটি অনিবার্য অধ্যায় যা এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব। তারা গুপ্তচরের মত নিজেদের কর্মে অসফলতার কারণঅনুসন্ধান করতে থাকে। পরিকল্পনার ধরন পরিবর্তনের পর তারা আবারো চেষ্টাশুরু করে, তবে এইবার আরো ভালো ভাবে।

 

 

১৩। তারা কাজ করার জন্য কারো অনুমতি প্রার্থী নয়

 

উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষরা কোনো সংশয় না করেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকে। তারা সবসময় এটাই চিন্তা করে, “যদি আমি না করি,তাহলে কে করবে?”

 

১৪। তারা ছোট্ট বাক্সে নিজেদের আবদ্ধ রাখে না

 

উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষরা শুধু একটি পরিকল্পনায় সীমাবদ্ধ থাকে না। তারানিরলস ভাবে সামনে থাকা সকল উপায়–উপকরণ গুলো ব্যবহার করে পরীক্ষাচালাতে থাকে এটা দেখার জন্য যে কোন  উপায় টি সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ, যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা সে কৌশল টি চিহ্নিত করতে পারে যা সবচেয়ে কম খরচেতার সময় ও প্রচেষ্টার সর্বোচ্চ ফল প্রদান করবে।

 

 

১৫। তারা চিন্তাভাবনা না করে ইন্টারনেটে পড়া বিষয় গুলো সত্যহিসেবে মেনে নেয় না

 

ইন্টারনেটে পাওয়া অনুচ্ছেদ গুলো কে উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষরা শুধু মাত্র এজন্যসত্য বলে মেনে নেয় না কারণ কিছু সংখ্যক লেখক এভাবে চিন্তা করে। তারা নিজের অনন্য দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে অনুচ্ছেদে থাকা প্রত্যেকটি বিষয় পর্যালোচনাকরে দেখে। তারা সবসময় একটা স্বাস্থ্যকর সন্দেহপ্রবনতা বজায় রাখে, এবংশুধুমাত্র সেসব উপাদান গুলো ব্যবহার করে যা তাদের নিজ জীবনের সাথেসম্পৃক্ত আর বাকি বিষয় গুলোতে ভ্রুক্ষেপ করে না।

 

যখন এধরনের অনুচ্ছেদ গুলো চিন্তা শক্তির ক্ষেত্রে একটি মজাদার অনুশীলনহিসেবে কাজ করে,তখন উচ্চ আত্মবিশ্বাসী মানুষরা জানে যে শুধুমাত্র তাদেরই এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে যে তাদের কাছে “আত্মবিশ্বাস” মানে কি।

 

জীবনে সফলতার জন্য যেমন আত্মবিশ্বাস থাকাটা জরুরী ঠিক তেমনি এই মনোভাবের সাথে সঠিক সময়ে, সঠিক সিদ্ধান্তে এগিয়ে যাওয়াটা আবশ্যিক যা আমরা পৃথিবীর সকল সফল ব্যাক্তিদের জীবনী থেকে বুঝতে পারবো। আর এই জিনিসগুলো নিজের মধ্যে ধারন করতে পারলে লক্ষ্য যতই কঠিন হোক না কেন, অর্জনে কেউ বাঁধা দিতে পারবে না।