অহংকার বা অহমিকা মানুষের অধপতনের অন্যতম কারণ। অহংকার বা অহমিকা হলো শয়তানের অন্যতম প্রধান কাজ। যে কারণে শয়তান মুআল্লিমুল মালাইকা’র মতো সম্মানের স্থান থেকে চিরতরে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেল।

বিতাড়িত শয়তান মানুষের মনে যে মন্দ প্ররোচনা দেয় তার মধ্যে অন্যতম হলো অহংকারবোধকে জাগ্রত করে তোলা। কারণ আত্মার ব্যধিসমূহের মধ্যে অন্যতম ব্যধি হলো অহংকার। নিজেকে অন্যের তুলনায় বড় মনে করা বা অন্যকে তুচ্ছ বা নিকৃষ্ট মনে করাই হলো অহংকারের প্রবেশপথ।

‘আমি তার (আদম) অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; তুমি আমাকে অগ্নি দ্বারা সৃষ্টি করেছো এবং তাকে কাদা মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছো।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১২)

শয়তানের এ দৃষ্টতাপূর্ণ উক্তির পর আল্লাহ তাআলা সঙ্গে সঙ্গে বললেন-

তুমি এ স্থান থেকে নেমে যাও; এখানে থেকে অহংকার করবে তা হতে পারে না। সুতরাং বের হয়ে যাও। তুমি অধমদের অন্তর্ভূক্ত। (সুরা আরাফ : আয়াত ১৩)

অহংকারের কুফল অনেক বেশি। অহংকার মানুষকে তার কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছার পথে প্রধান প্রতিবন্ধক। অহংকারের চূড়ান্তরূপ হলো এমন যে, তা অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করা বা অন্যের সহযোগিতা লাভের মানসিকতাকে পর্যন্ত বিনষ্ট করে। অন্যের অধিকারের প্রতি হস্তক্ষেপ করে। কল্যাণের পথ বন্ধ করে দেয়।

মানুষের সঙ্গে ওঠা-বসা, চলা-ফেরা, পাহানাহার ও কথাবার্তাকে নিজের মর্যাদার খেলাপ মনে করে। যখন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তখন তার কামনা হয় এমন যে, ‘মানুষ তাকে সম্মান করবে।’ কিন্তু আল্লাহ তাআলা দাম্ভিক, অহংকারীকে অপছন্দের বিষয়টি কুরআনে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন-

‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা লোকমান : আয়াত ১৮)

আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার মানুষকে অহংকারমুক্ত থাকতে বলেছেন। হাদিসে কুদসীতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

‘বড়ত্ব আমার চাদর এবং মহানত্ব আমার ইযার (লুঙ্গি)। কেউ যদি এ দু’টির কোনো একটির ব্যাপারে আমার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (মুসলিম, মিশকাত)

পরিশেষে
অহংকার যে পতনের মূল কারণ; সে প্রমাণ রয়েছে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসে। তিনি ঘোষণা করেছেন-

‘যার অন্তরে এক যাররা (অণু) পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসলিম, মিশকাত)

তাছাড়া কুরআনে বর্ণিত আল্লাহ তাআলা কর্তৃক ইবলিসের প্রতি হজরত আদমকে সেজদার নির্দেশ। আর তা অমান্য করেছিল ইবলিস। ইবলিসের যুক্তি ছিল সে আগুনের তৈরি। আর হজরত আদম ছিল মাটির তৈরি। আগুন মাটি থেকে উত্তম। আর আদম থেকে উত্তম ইবলিশ, এ যুক্তি দিয়ে অহংকারবশত সে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করেছিল।

ফলশ্রুতিতে যখনই ইবলিস আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে অহংকার দেখালো তখনই সে চিরতরে প্রত্যাখ্যাত হয়ে গেলো। একেবারে চিরদিনের জন্য বিতাড়িত, পথভ্রষ্ট হয়ে গেল সে। অথচ সে ছয় হাজার বছর পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদতে মশগুল ছিলো। ফেরেশতাদের কাতারেও তার একটা বিশেষ পদমর্যাদা ছিলো।

হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও ইবলিসের মধ্যকার ঘটনা হোক মুসলিম উম্মাহর জন্য গ্রহণীয় শিক্ষা। প্রিয়নবির হাদিস হোক মানুষের অহংকার থেকে বিরত থাকার পাথেয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অহংকার, দাম্ভিকতা ও অহমিকা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।