বিদেশ ডেস্ক:
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের সোপিয়ান জেলায় সেনাবাহিনীর এক টহল গাড়িতে হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে এক সন্দেহভাজন হামলাকারীসহ ৫ জন নিহত হয়েছে। রবিবার (৪ মার্চ) রাতে এ ঘটনা সংঘটিত হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, বাকি চারজন নিহতের মধ্যে তিনজনই হামলাকারীর সহযোগী। তবে স্থানীয়দের দাবি, ওই তিন ব্যক্তি সাধারণ জনতা এবং সেনাবাহিনীর গুলিতে তারা নিহত হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, হামলাকারী ছাড়া নিহত চতুর্থ বেসামরিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে একটি গাড়ির ভেতর থেকে। সে একজন শিক্ষার্থী।

এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সোপিয়ানের পোহন এলাকার পাশে সেনাদের টহল ভ্যান একটি গাড়িকে থামার নির্দেশ দেয়। কিন্তু গাড়ি থামানোর বদলে সেখান থেকে সেনাকর্মীদের দিকে ছুটে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি। জবাবে গুলি চালান সেনাকর্মীরাও, সেসময় নিহত হয় এক জঙ্গি। গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় একটি আগ্নেয়াস্ত্র। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে কিছু দূরে আর একটি দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি থেকে তিন তরুণের দেহ উদ্ধার করে তারা। কর্তৃপক্ষের দাবি, এই তিন ব্যক্তি হামলাকারীর সহযোগী ছিল। যদিও স্থানীয় মানুষের দাবি, তারা সাধারণ নাগরিক ছিল।

সন্দেহভাজন হামলাকারীর নাম সাহিদ আহমেদ দার বলেও জানিয়েছে সেনাবাহিনী। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দ জানায়, ২০ বছরের সাহিদ ১ মার্চ লস্কর ই তৈয়বায় নাম লেখায়। ২ তারিখ লস্করের সদস্য নাবিদের সঙ্গে তার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। এই নাবিদকে ৬ ফেব্রুয়ারি শ্রীনগরের এসএমএইচ হাসপাতালে ২ পুলিশকর্মীকে হত্যার ঘটনায় দায়ী করা হচ্ছে। তার খোঁজে এখনও তল্লাশি চলছে।

মানবাধিকার সংস্থা, ইতিহাসবিদ আর রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মির ক্রমেই ভারত-পাকিস্তানের সমরাস্ত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আর তাতে প্রাণ হারিয়েছে লাখ লাখ মানুষ। মানবাধিকারকর্মীদের দাবি অনুযায়ী, ৪৭-এর পর থেকে অন্তত পাঁচ লাখ কাশ্মিরি নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও দশ লাখের মতো। খোদ ভারতের সরকারি হিসাবে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রভাবশালী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এক রিপোর্টে জানাচ্ছে, ১৯৯০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে কেবল ১১ বছরেই ৪৩,৪৬০ জন কাশ্মিরি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক কাশ্মিরি। আর মানবাধিকার কর্মীদের দাবি অনুযায়ী ওই ১১ বছরে নিহতের সংখ্যা ১ লক্ষাধিক এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আরও ১ লাখ। এই হত্যাকাণ্ডগুলোর একটা বড় অংশ সংঘটিত হয়েছিল বারামুলা জেলা এবং আফজাল গুরুর জন্মস্থান সোপোরেতে। ‘আফজাল গুরুর ফাঁসি ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য কলঙ্ক’ শীর্ষক নিবন্ধে বুকারজয়ী বিখ্যাত ভারতীয় লেখক ও মানবাধিকারকর্মী অরুন্ধতী রায় কাশ্মির সম্পর্কে বহু আগেই বলেছিলেন, ‘এটি একটি পরমাণু যুদ্ধক্ষেত্র এবং পৃথিবীর সবচেয়ে সামরিকীকরণকৃত এলাকা। এখানে রয়েছে ভারতের পাঁচ লাখ সৈনিক। প্রতি চারজন বেসামরিক নাগরিকের বিপরীতে একজন সৈন্য! আবু গারিবের আদলে এখানকার আর্মি ক্যাম্প ও টর্চার কেন্দ্রগুলোই কাশ্মিরিদের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের বার্তাবাহক। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিতে সংগ্রামরত কাশ্মিরিদের জঙ্গি আখ্যা দিয়ে এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজার মুক্তিকামীকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১০ হাজারকে গুম করা হয়েছে। নির্যাতিত হয়েছে আরও অন্তত এক লাখ লোক।’