শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি:

সন্ধ্যা নামলেই ডাকাতদলের বেপরোয়া ঘুরা-ফেরা। আতঙ্কে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সাতজ্জা পাড়ার উপজাতিয় চাক্ সম্প্রদায়ের পরবিারেরা এখন ঘরছাড়া। পাড়ার রাস্তাঘাট ও বসবাসরত ঘর-বাড়ী এখন ফাঁকা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি- সোনাইছড়ি সড়কে মাঝখানে জুমখোলা এলাকায় ৩০-৩৫জন সাধারণ পথযাত্রীদেরকে গতিরোধ করে টাকা-পয়সা, ব্যবহারের মোবাইলসহ আরও অন্যান্য জিনিস পত্র লুটপাট করে নেয় অস্ত্রধারী ডাকাতদলেরা। এতে যৌথবাহিনীর সরাষী অভিযানে ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে গিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের সাতগজ্জা চাক্ পাড়ার আশপাশে আশ্রয় নেয় । ১৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার অস্ত্র হাতে নিয়ে ঘুরাঘুরি করতে দেখে উপজাতিয় চাক্ সম্প্রদায়ের লোকজনেরা আতঙ্কে সেই রাতে সাত পরিবারের ছোট শিশু, বৃদ্ধসহ মহিলাদেরকে অন্যত্রে পাঠিয়ে দিয়ে পুরুষেরা ওইসব ডাকাতদলকে ধাওয়া করে ধরতে চাইলে ডাকাতদল ফাঁকা গুলির আওয়াজ দিয়ে আতঙ্কিত করে। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই অস্ত্রধারী ডাকাতদলেরা গহীন অরণ্যে ঢুকে পড়ে।

আর এদিকে ঘরছাড়া মহিলারা সদর ইউনিয়নের মধ্যম চাক্ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় নেয় সাত পরিবার। এরা হলেন, মংমং চাকের স্ত্রী মাইয়ে চাক্, ছাহ্লাথোয়াই চাকের স্ত্রী ইউ চিং চাক্, ক্যউহ্লা চিং চাকের স্ত্রী এ মাই চিং চাক্, থোয়াইছা প্রু চাকের স্ত্রী মা চা চিং চাক্ ও চিং থোয়াই চাকের স্ত্রী হ্লনি খাই চাক্ প্রমূখ।

সরজমিনে গিয়ে জানাযায়, সাতগজ্জা পাড়ায় মূলত সাত উপজাতিয় চাক্ সম্প্রদায় পরিবারের বসবাস। দীর্ঘ বছর ধরে পাহাড়ের ঝাঁড়-জঙ্গল আবাদ করে জুম চাষ করে আসছিল ওই সাত পরিবারের পুরুষ-মহিলারা। তবে তারা অস্ত্রধারী একদল যুবক ঘুরাফেরা করতে দেখে আতঙ্কিত হয়ে ঘরছাড়তে বাধ্য হলেন তারা। যৌথ অভিযানের মাধ্যমে ওই অস্ত্রধারী যুবকদলকে আটকাতে না পারলে পাড়ায় যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানান পলিয়ে আসা মহিলারা। তবে তারা আরও জানান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ পরিচালনায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে তাতে অবশ্যই আটকে যাবে অস্ত্রধারী যুবকদলটি।

আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে আসা হ্লানি খাই চাক্ এই প্রতিবেদককে জানান, গত শুক্রবার সকাল বেলায় আমার স্বামী দৈনন্দিন পালিত গরুর পাল নিয়ে জুম পাহাড়ে যাওয়ার সময় ১০-১৫ অস্ত্রধারী যুবকের কবলে পড়লে সে ভয়ে কাতর হয়ে যায়। তাকে গতিরোধ করে প্রথমে সাথে থাকা মোবাই নিয়ে ফেলা হয়। দ্ভোক্তি সুরে বলে কোন ধরনের পুলিশ-বিজিবিকে খবর দিলে একেবারে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।পরে মোবাই দিয়ে দেয়। তবে এখনো মাঝে মধ্যে মোবাইলে হুমখি দিয়ে বলে পুলিশ-বিজিবিকে কেন খবর দিলে। এলাকা ছেড়ে গেছ ভাল করনি। আমাদের পালিত গরুর গুলোর খবরাখবর ও নিতে পারচ্ছিনা । এই ঘটনার পর উপজাতি ও বাঙালীর মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। পাশাপাশি এলাকাগুলো এখনো পরিস্থিতি ছিল থমথমে।

আর এদিকে ডাকাতদলে আতঙ্কে ঘরছাড়া পরিবারদের ভাল মন্দ খবরা খবর নিতে গিয়ে প্রতি পরিবারের প্রধানকে তাৎক্ষুণিক ১০০০ টাকা করে হাতে তুলে দিয়ে আর্থিক সহযোগিতা করেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ সিনিয়র নেতা অধ্যাপক এম, শফি উল্লাহ। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী, যুবলীগ সহ-সভাপতি ক্যানো ওয়ান চাক্, ২৭০ নং মৌজার হেডম্যান বাচিং চাক্, প্রেসক্লাব সভাপতি শামীম ইকবাল চৌধুরী, যুগ্ন-সম্পাদক জাহাঙ্গী আলম কাজল,উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক উবাচিং মারমা ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মওলনা নুরুল আমিন প্রমূখ। আর্থিক প্রদানকালে অধ্যাপক এম, শফি উল্লাহ বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যে ভাবে অভিযানে নেমেছে আমার বিশ্বাস ওইসব সন্ত্রাসী রেহায় পাবেনা। যারা অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাস তারা কারো বন্ধু ও আত্মীয় হতে পারেনা। আপনারা নিরাপদে থাকার জন্য যা করতে হয় উপজেলা আওয়ামীলীগ দায়িত্ব নেবে এবং সবসময় সুখে দঃখে আপনাদের পাশে থাকব।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি মো: আলমগীর শেখ জানান, কয়েকজন অস্ত্রধারী যুবক সড়কে পথযাত্রীদেরকে গতি রোধ করে টাকা পয়সা ,মোবাইল চিনিয়ে নেয় । তবে ওই যুবকদেরকে ধরতে অভিযান অব্যহত রয়েছে। এসব অভিযানে জনসাধারণের সহযোগিতার প্রয়োজন। ঘটনার বিষয়ে গত শুক্রবার অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার আলী হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

উল্লেখ্য, নাইক্ষ্যংছড়ির সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জারুলিয়াছড়ি-জুমখোলা-সোনাইছড়ি সড়কে ও সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সাতগইজ্জা পাড়ায় অর্ধশতাধিক ডাকাতের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছিল এলাকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। গত (১৫ ফ্রেুয়ারি) বৃহস্পতিবার রাতে সড়কের জুমখোলা এলাকায় পথ যাত্রী ও ওই এলাকার ব্যবসায়ীদেরকে ১০-১৫ জনের অস্ত্রধারী একটি ডাকাত দল জিম্মি করে লুটপাট করে নেয়। এরপর থেকে এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালি মিলে রাতভর পালাক্রমে পাহারা দিয়ে আসছে। তবে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ মাঝে আতংকে বিরাজ করছে।ায় শঙ্খ নদীর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।