সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে স্বাধীন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করার সরকারি অপচেষ্টায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও এর অঙ্গীভ’ত সারাদেশের ১১টি সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। এক যুক্ত বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা কুখ্যাত ৫৭ ধারার বিষয়গুলো নতুনরূপে বহাল রাখা এবং ভয়ানক নিবর্তনমূলক ৩২ ধারা সংযোজনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণে নতুন নতুন কালাকানুন করা বর্তমান সরকারের মজ্জাগত অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার হরণকারি সরকার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য গণমাধ্যমে পায়ে শেকল পরাতে মরিয়া।

যুক্ত বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, তথ্য প্রযুক্তি আইনের কুখ্যাত ৫৭ ধারা বাতিলের দাবিতে দেশের সাংবাদিক সমাজ দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত শতাধিক সাংবাদিককে এ কালো আইনে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হয়েছে। সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিবাদের মুখে সরকার ৫৭ ধারা বাতিলের ঘোষণা দেয়। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি যে, ৫৭ ধারা বিলুপ্তির প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে ওই ধারার বিষয়গুলোকে ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১- এ ৪টি ধারায় বিভক্ত করে নতুনরূপে সংযোজন করা হয়েছে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। একই সঙ্গে অনুসন্ধানী ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করতে নতুন করে ভয়ঙ্কর ৩২ ধারা যুক্ত করে কথিত গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে কঠোর শাস্তির বিধান করা হয়েছে।

বিবৃতিদাতা সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ হচ্ছেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র সভাপতি শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)’র সভাপতি আবদুল হাই শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শামসুল হক হায়দরি ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সরদার আবদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল আউয়াল, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন-খুলনার সভাপতি আনিসুজ্জমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হিমালয়, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি নূর ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক এম আইয়ুব, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি মীর্জা সেলিম রেজা ও সাধারণ সম্পাদক গণেশ দাস, সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সভাপতি মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হাসানুর রশীদ, কুমিল্লা জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহ আলম শফি, সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুরের সভাপতি জিএম হিরু ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহফিজুল ইসলাম রিপন, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সভাপতি এম আইয়ুব আলী ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এবং সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুরের সভাপতি এইচ এম দেলোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ হেদায়েত উল্লাহ।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ওয়েবসাইট বা ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রচারণার জন্য যেমন বিধান রাখা হয়েছে, তেমনি মানহানি, আইন-শৃঙ্খলা অবনতির শঙ্কা, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন এবং ধর্মীয় অনুভ’তিতে আঘাতের মত বিষয়ে কঠোর দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এমনকি আক্রমনাত্মক ও ভীতি প্রদর্শন করার মত বিষয়ে দীর্ঘ মেয়াদে জেল ও উচ্চ হারে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংবাদমাধ্যমবিরোধী সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিধান সংযোজিত হয়েছে ৩২ ধারায়। এতে সরকারি অফিসে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ ও কোন নথির ছবি তোলাকে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হিসেবে গণ্য করে ১৪ বছরের কারাদন্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এখানে ‘বেআইনীভাবে প্রবেশ’ বা ‘গোপন নথি’র বিষয়টি প্রমাণসাপেক্ষ। কিন্ত তার আগেই কোন সংবাদকর্মীকে গ্রেফতার ও হয়রানি করা যাবে। এ ধারার ফলে দুর্নীতি, লুটপাট ও অনিয়মের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পথই শুধু রুদ্ধ হবে না অনুসন্ধানী বা সত্যিকারের সাংবাদিকতাই আর চলবে না। ফলে গোটা সাংবাদিক সমাজ উদ্বিগ ও বিচলিত। এ বিধান দেশে দুর্নীতিকে অবারিত ও অপ্রতিরোধ্য করে তুলবে। বিপন্ন করবে বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর সাংবাদিকতাকে।

সংসদে পাশ করার আগে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারি সকল ধারা বাতিল করার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ। তা না হলে দেশের সাংবাদিক সমাজ অতীতের মতই ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে সকল কালাকানুন প্রতিহত করবে বলে উল্লেখ করেন সাংবাদিক নেতারা।