শিব্বীর আহমদ, অতিথি লেখক:

তওবা-ইস্তেগফার মুমিনের বড় গুণ। গোনাহের অভিশাপ থেকে নিজেকে পবিত্র করার বড় মাধ্যম। মানবীয় দুর্বলতার কারণে মানুষ শিকার হয় শয়তানের কুমন্ত্রণার। আর তখন বিভিন্ন গোনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে। নবীগণকে আল্লাহতায়ালা সব ধরনের পাপাচার থেকে মুক্ত রেখেছিলেনন। তারা নিষ্পাপ। কিন্তু তাদেরকে ছাড়া অন্য সবার জীবনেই তো কমবেশি গোনাহ হয়ে থাকে। সে গোনাহ থেকে মুক্তির পথই হচ্ছে তওবা ও ইস্তেগফার- অর্থাৎ কৃত গোনাহের জন্যে আল্লাহর কাছে অনুতাপ ও অনুশোচনার সঙ্গে ক্ষমা প্রার্থনা করা; ভুল পথ ছেড়ে মহান প্রতিপালকের দিকে ফিরে আসা।

ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায়, মানুষ কোনো পাপে লিপ্ত হওয়ার পর যদি সে তার ভুল বুঝতে পারে এবং এ জন্যে সে কায়মনোবাক্যে তার মহান প্রভুর কাছে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করে, তাহলে সে গোনাহ যত বড়ই হোক না কেন, তা ক্ষমা করে দেওয়া হয়।

তবে শর্ত হচ্ছে, তাকে তওবা করতে হবে খাঁটি মনে। অতীতের গোনাহের জন্যে অনুতপ্ত হয়ে ভবিষ্যতে সে অন্যায় আর কখনও না করার জন্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। এমন তওবাই আল্লাহর নিকট গৃহীত হয়। যারা এমনভাবে তওবা করে, আল্লাহর ক্ষমার বর্ষণে তারাই সিক্ত হয়।

শুধু মুখে মুখে তওবা করা কিংবা অন্যদের দেখাদেখি তওবার জন্যে কিছু বাক্য মুখে আওড়ানো তওবার জন্যে যথেষ্ট নয়। তওবা করতে হবে অবশ্যই মন থেকে এবং আর কখনও ওই গোনাহটি না করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মন নিয়ে। হ্যাঁ, প্রথমবার যেমন শয়তানের প্ররোচনায় গোনাহ হয়ে গেল, তেমন তো পরে আবারও হতে পারে। তা হোক, যখনই গোনাহে জড়াবে, তখনই যদি আবার সে গোনাহের জন্যে অনুতপ্ত হয় এবং আবারও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়- এ কাজ আর কখনও করবে না, তাহলে প্রতিবারই আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করবেন।
আমরা তার গোলাম, তার বান্দা, তিনি আমাদের প্রভু, আমাদের প্রতিপালক। দুনিয়াতে কোনো কর্মচারী বা ভৃত্য যদি তার মনিবের কোনো আদেশ অমান্য করে এসে আকুতি ভরে ক্ষমা চায়, তাহলে মনিব তাকে ক্ষমা করে। অথচ আল্লাহতায়ালা মহা ক্ষমাশীল। পাপ যত বড় হোক, যত বেশি হোক, তার রহমত ও অনুগ্রহ দয়া ও ক্ষমার তুলনায় তা মোটেও বড় নয়। বান্দা যখন তার কাছে ক্ষমা চেয়ে হাত বাড়ায়, তিনি তাতে অত্যন্ত খুশি হন।

হাদিস শরিফে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে এভাবে, এক লোক নির্জন মরুভূমিতে সফর করছে। তার সঙ্গে রয়েছে তার বাহন উট এবং সে উটের উপরই রয়েছে তার খাবার ও পানি। সফরের এক পর্যায়ে সে উট থেকে নীচে নেমে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম থেকে জেগে দেখল, তার উটটি তাকে রেখে চলে গেছে। মরুভূমির গরমে তার প্রচণ্ড তৃষ্ণা পেল। কিন্তু তৃষ্ণা মেটাবার কিংবা সেখান থেকে ফিরে আসার অথবা পায়ে হেঁটে কোনো লোকালয়ে চলে যাওয়ার মতো কোনো পথ তার সামনে ছিল না। মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষায় তখন একমাত্র পথ। নিরাশ মনে সে তখন ভাবল, যেখানে ঘুমিয়েছিলাম, সেখানেই আবার ঘুমিয়ে পড়ি। এমন এক মুহূর্তে তার হারিয়ে যাওয়া উটটি ফিরে এলো। উটটি পেয়ে যেন সে মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এলো। খুশির আতিশায্যে দিশেহারা হয়ে সে বলে উঠল, হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রভু আর তুমি আমার গোলাম! হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনো বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তওবা করে, তখন তিনি তার তওবায় মরুভূমিতে উট হারিয়ে ফিরে পাওয়া এ ব্যক্তিটির চেয়েও বেশি খুশি হন। -মুসলিম শরিফ