শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি:

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার রাবার শিল্প নগরী হিসেবে পরিচিত বাইশারী আর ‘ফাঁরিখাল’ বাইশারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি নদী। এখানে মানুষের একমাত্র পেশা কৃষি কাজ আর উপজাতীয়দের জুম চাষ। ১৯৯৬ সালের আগে এই পাহাড়ী জনপদে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছোঁয়া মোটেও লাগেনি। সড়ক না থাকায় সবাই চলাচল করত নৌকায়। এলাকার মানুষ বিকাল হলেই কেউ বাড়ি থেকে বের হতো না ডাকাতের ভয়ে। কিন্তু ক্রমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছোঁয়ায় পাল্টে যাচ্ছে এ বাইশারীর মানুষের জীবনযাত্রার চিত্র। ফলে ভিত্তশালীরা হাজার হাজার একরের পাহাড় লিজ নিয়ে বন জঙ্গল আবাদ করে, এতে রাবার চাষের মাধ্যেমে বাগান করে পরিচিত হয়ে উঠেছে ”রবার শিল্প নগর” এই বাইশারী ইউনিয়নটি।
অন্যদিকে পাহাড় ও নদীবেষ্টিত এ জনপদে দীর্ঘকাল যাবত একটি ব্রীজের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজ দিয়ে চলাচল করে আসলেও নদীর এপার-ওপার জনসাধারণ গাড়ী দিয়ে চলাচল অনুপোযোগী হওয়ায় স্থানীয় সংসদ বিভিন্ন জনসভার প্রতিশ্রুতিবদ্ধতায় মধ্যে এই ফাঁরিখালের ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রীজের কাজের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে।

এ নির্মাণাধীন ফাঁরিখালের ব্রীজের কাজ শেষ হলে বাইশারী ইউনিয়নের সাথে উপজেলার-বিভিন্ন ইউনিয়নের যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের দ্বার খুলে যাবে। এ আশায় বাইশারীর হাজারো মানুষের চোখে-মুখে দেখা দিয়েছে খুশির ঝিলিক আর উচ্ছ্বাস।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবছার কন্স্ট্রাকশন ব্রীজটি কাজ করে যাচ্ছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে প্রায় ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বিশাল আকৃতির ব্রীজটির কাজ বিগত চার মাস আগে শুরু হয়েছে। বর্তমানে ব্রীজের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবার পথে। উক্ত ব্রীজের উপর দিয়ে দূর্গম পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ী-বাঙালী জনগোষ্ঠী সহ হাজার হাজার জনসাধারণ যাতায়াত করেন। ব্রীজটির কাজ সম্পন্ন হলে হাজারো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন সহ পাল্টে যাবে বাইশারীর চিত্র।

এলাকাবাসীরা জানান, বাইশারী-চাকপাড়া সড়কে রাজঘাট এলাকায় ফাঁরিখালের উপর মাত্র একটি ব্রীজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এলাকার প্রায় দশ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ বর্ষা মৌসুম ও শুষ্ক মৌসুমে যাতায়াতের জন্য চরম কষ্টে দিন অতিবাহিত করছিল। এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজের উপর দিয়ে দশ গ্রামের কয়েক হাজার জনসাধারণ ছাড়াও রাবার বাগান মালিক, ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাগামী ছাত্র-ছাত্রীরা যাতায়াত করতেন। ফাঁরিখালের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজটি ভেঙ্গেঁ ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকার বরাদ্ধের নতুন ব্রীজ নির্মাণের কাজ দেখে আমাদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস বেড়ে গেছে।ব্রীজের কাজ শেষ হলে দূর্গম পাহাড়ে উৎপাদিত পণ্য, শাক-সবজি, ফল-ফলাদি, রাবার, গাছ, বাঁশ সহ নানা ধরনের দ্রব্য পণ্য সহজভাবে গাড়িযোগে বাজারজাত সম্ভব হবে।

ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আলম কোম্পানী জানান, ’৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ বাইশারী ইউনিয়নে উন্নয়নের ছোঁয়া শুরু হয়েছিল। কালক্রমে সরকার পট পরির্বতন আর সংসদ আওয়ামীলীগের হওয়ায় উন্নয়নের ছোঁয়া স্থবির হয়ে পড়ে। বর্তমান এ সরকারের প্রচেষ্টায় বাইশারীর প্রত্যান্ত অঞ্চলে এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। শুধু ব্রীজ নয়, একাধিক সেতু নির্মাণ হয়েছে। অসংখ্য কালভার্ট, সড়ক, বিদ্যুৎতায়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেচ প্রকল্প ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা সহ নানা ধরনের উন্নয়ন মূলক কাজসহ রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্টে নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পথে। এসব নির্মাণধীন কাজসহ ফাঁরি খালের ব্রীজের কাজ শেষ হলে পাহাড়ী জনপদ বাইশারী উন্নীত হবে উন্নয়ন সমৃদ্ধির মডেল জনপদে। চলছে।এই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং (এমপি)’র মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায়। এতে বাইশারী ইউনিয়টি আজ সমৃদ্ধির মডেল জনপদে রূপান্তরিত হয়েছে।

ঠিকাদার মোঃ আবছার বলেন, এলাকার উন্নয়নের জন্য গুণগত মান সম্পন্ন মালামাল দিয়ে তিনি ব্রীজটির কাজ করে যাচ্ছেন। ব্রীজটি নির্মাণে তিনি এলাকাবাসীর ও সহযোগিতা কামনা করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী ত্রিদীপ কুমার ত্রিপুরা ও ফিল্ড সুপার ভাইজার প্রশান্ত ভট্টাচার্য্য ব্রীজটির কাজ সার্বক্ষনিক তদারকি করছেন। তারা জানান, কাজের ব্যাপারে কোন ধরনের গাফিলতি এবং নি¤œমানের দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। তারা উভয়ে সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আজিজ বলেন, নো কম্প্রমাইজ নীতিতে তিনি অটল। নিন্মামানের কোন প্রকার মালামাল ব্যবহার করা হলে কাজ বন্ধ করে উন্নত মানের মালামাল দিয়ে পুনরায় কাজ আদায় করে নিবেন।