হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ:

মাধ্যমিক স্তরের সফল শিক্ষা প্রকল্প ‘সেকায়েপ’ কর্তৃক নিয়োগ দেয়া টেকনাফ উপজেলার ১৯টি স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মরত ৪০ জন এসিটি শিক্ষকের চাকুরী স্থায়ী করণের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লেখা এ স্মারকলিপি ১৩ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে টেকনাফ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের দায়িত্বে নিয়োজিত একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ নুরুল আবসার গ্রহণ করেন।

জানা যায়, ‘গুণগত শিক্ষা-উন্নত জীবন’ প্রতিপাদ্যে সেকায়েপ কর্তৃক পদায়নকৃত টেকনাফ উপজেলার ১৯টি স্কুল ও মাদ্রাসায় কর্মরত ৪০ জন ইংরেজী, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষকদের এসিটি (এডিশনাল ক্লাস টিচার) ম্যানুয়েলের আলোকে চাকুরী স্থায়ী করণের দাবিতে উপজেলার সকল প্রতিষ্ঠান প্রধান, সুপার ও অধ্যক্ষদের উপস্থিতিতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। টেকনাফ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের দায়িত্বে নিয়োজিত একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ নুরুল আবসার স্মারকলিপি গ্রহণকালে উপস্থিত এসিটি শিক্ষকগণের সংগঠন বাংলাদেশ এসিটি এসোসিয়েশন টেকনাফ উপজেলা নেতৃবৃন্দের যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায্য দাবি এবং বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শোনেন। তিনি গুরুত্ব সহকারে যথাযথ কতৃপক্ষের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পৌঁছে দেবেন বলে এসিটি নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্থ করেন। তাছাড়া টেকনাফ এজাহার গার্লস হাইস্কুলের কয়েকজন ছাত্রী এসিটি শিক্ষকগণের বদৌলতে দুর্বল শিক্ষার্থীরা আশাতীত সফলতার কথা তুলে ধরেন।

টেকনাফ উপজেলায় সেকায়েপভুক্ত ১৯টি স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মরত শিক্ষকবৃন্দরা হলেন সাবরাং হাইস্কুলের আমিনুল্লাহ সাঈদ, মিনহাজুল হক। হ্নীলা বালিকা হাইস্কুলের শহিদুল্লাহ, শাহরিন সালমা রুমকী। এজাহার বালিকা হাইস্কুলের নুরুল হুদা, তোফাজ্জল হোসেন। পাইলট হাইস্কুলে আহছান উল্লাহ, আহমদ হোছাইন। হ্নীলা হাইস্কুলে মঈন উদ্দিন মিলকী, বাবুল চৌধুরী। শামলাপুর হাইস্কুলের আব্দুল মালেক, জসিম উদ্দিন। শাহপরীরদ্বীপ হাজী বশির আহমদ হাইস্কুলের মোঃ আলী সোহাগ, আবু বকর ছিদ্দিক, ফারহানা কাদেরী রিমি। মারিশবনিয়া হাইস্কুলের আবু রায়হান, শহীদুল আলম। আলহাজ্ব আলী-আছিয়া হাইস্কুলের জুলকারনাইন, তোফাজ্জল হোছাইন। নয়াবাজার হাইস্কুলের এমডি মাসুদ পারভেজ, আরফান উল্লাহ। কাঞ্জরপাড়া হাইস্কুলের মহি উদ্দিন, মোঃ হোছাইন কুতুবী। সেন্টমার্টিনদ্বীপ বিএন ইসলামিক হাইস্কুলের আনোয়ার হোছাইন। নয়াপাড়া হাজী নবী হোসেন হাইস্কুলের জুয়েল বড়য়া, কামাল হোছাইন। লম্বরী মলকাবানু হাইস্কুলের আমিনুল হক। রঙ্গিখালী খাদিজাতুল কোবরা (রাঃ) মহিলা দাখিল মাদ্রাসার মোহাম্মদ ইদ্রিস, মোঃ আশরাফুল মুহিত ভূঁইয়া। বাহারছড়া তাফহীমুল কোরআন দাখিল মাদ্রাসার আরিফুল ইসলাম, আনিছুল ইসলাম। শামলাপুর দাখিল মাদ্রাসার আজমল হোছাইন সাজ্জাদ, মকছুদ হোসাইন, সুখময় চাকমা। কাটাখালী রওজাতুন নবী (সাঃ) দাখিল মাদ্রাসার বদরুল আলম, মোঃ আসাদুর রহমান রিফাত। মৌলভীবাজার জমিরিয়া দারুল কুরআন আলিম মাদ্রাসার আতিকুর রহমান সজিব, মোঃ ছিদ্দিকুল ইসলাম, মোঃ তারিকুল ইসলাম।

সাবরাং হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মফিজ উদ দৌলা, মৌলভীবাজার জমিরিয়া দারুল কুরআন আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওঃ ফরিদুল আলম নুরী, রঙ্গিখালী খাদিজাতুল কোবরা (রাঃ) মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার হাফেজ মাওঃ ফখরুল ইসলাম ফারুকী, লম্বরী মলকাবানু হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইসমাইল, টেকনাফ এজাহার গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শিউলী চৌধুরী বলেন ‘সারা দেশের মধ্যে শিক্ষার হার সর্ব নিম্ম হচ্ছে টেকনাফ উপজেলা। পিছিয়ে পড়া টেকনাফ উপজেলায় শিক্ষার উন্নয়নে ১৯টি স্কুল-মাদ্রাসায় ‘সেকায়েপ’ প্রকল্প থেকে ইংরেজী, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয় ভিত্তিক ৪০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ দিয়েছিল ২০১৫ সালের মার্চ মাসে। উচ্চ শিক্ষিত ও দক্ষ এসব শিক্ষকগণের বদৌলতে অবহেলিত টেকনাফ উপজেলায় শিক্ষার মান উন্নতির দিকে ধাবিত হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাবে। কিন্ত উচ্চ শিক্ষিত ও দক্ষ এসব শিক্ষকগণের চাকুরী সার্কুলার অনুসারে নতুন প্রকল্পভুক্ত এবং এমপিওভুক্ত করা হয়নি। সার্কুলার অনুসারে নতুন প্রকল্পভুক্ত করা না হলে যদি পাঠদান বন্দ হয়ে যায় তবে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোতে শিক্ষা ব্যবস্থায় ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। অপুরণীয় ক্ষতি হবে সীমান্ত জনপদের শিক্ষার্থীদের। পিছিয়ে পড়া টেকনাফ আরও পিছিয়ে পড়বে’।

স্মারকলিপি হস্তান্তকালে উপস্থিত এসিটি শিক্ষকগণ বলেন ‘আর মাত্র কয়েকদিন পরেই প্রকল্পের মেয়াদপুর্তি হবে। কিন্ত সার্কুলার অনুসারে ব্যবস্থা না নেয়া এবং এখনও কোন ঘোষণা না আসায় আমরা চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শংকিত। এব্যাপারে আমাদের শেষ ভরসা স্থল প্রধানমন্ত্রী। আমরা এর সন্তোষজনক সমাধান কামনা করছি’।

উল্লেখ্য, সারাদেশের ৬৪টি জেলার ৬৪টি উপজেলায় ২ হাজার ১২টি স্কুল ও মাদ্রাসায় ৬ হাজার জন এসিটি শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত রয়েছেন।