কুতুব উদ্দিন :

বাংলাদেশের সমকালীন রাজনৈতিক অঙ্গনে তরুণ প্রজন্মের নেতা তারুণ্যের প্রতীক খ্যাত তারেক রহমান। আজ এই নেতার ৫২তম জন্মদিন পালিত হতে যাচ্ছে।

তারেক রহমান এমন নেতা যার রয়েছে জনগণকে আপন করে কাছে টেনে নেয়ার ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বের গুণাবলি। আর এসব গুণাবলিই তাকে জনপ্রিয়তার অধিকারী করে তোলে। আমার সৌভাগ্য হয়েছে দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে তার চিন্তা-ভাবনার দু-চারটি কথা শোনার। তার সংস্পর্শে এসে নিজের চিন্তাচেতনায় আধুনিকতার পরশ লাগাতে পেরেছি।

মা, মাটি ও মানুষকে কেন্দ্র্র করেই তারেক রহমান তার সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। পিতার পথ ধরেই শহরকেন্দ্রিক রাজনীতিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেন গ্রামগঞ্জে, হাটে-মাঠে-ঘাটে। তৃণমূল রাজনীতির প্রাণপুরুষ হয়ে ওঠেন তিনি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের হাতে হাত রেখে, তাদের সুখ-দুঃখে অংশীদার হয়ে ঠাঁই করে নেন তাদের মনে। এ দিকে তারেক আতঙ্কে ভুগতে থাকে বিপরীত রাজনৈতিক শিবির। তার উত্থানকে তারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে বেছে নেয় ষড়যন্ত্রের পথ। সে পথ ধরেই আসে এক-এগারো। কিছু দিন না যেতেই এরা হাজির হয় ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নিয়ে। সত্যিকারার্থে তাদের এ ফর্মুলার মাঝে লুকায়িত ছিল মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা। ১/১১-এর সরকারের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে এটাই মনে হয়। তাদের রোষানলে পড়ে বিএনপি, বিশেষত জিয়া পরিবার। আর আওয়ামী লীগ ‘এক-এগারো’র সরকারকে তাদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের সর্বাত্মক সমর্থন জুগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে উঠেপড়ে লাগে।

বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্রকারী এবং তাদের দেশী-বিদেশী প্রভু ও কুশীলবেরা ঐক্যবদ্ধ হয় যে করেই হোক জাতীয়তাবাদী শক্তির বিনাশ করতে হবে। তা না হলে তাদের সব অশুভ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা যাবে না। বেগম জিয়ার পরই জাতীয়তাবাদী শক্তির ধারক ও বাহক হিসেবে উঠে আসে তারুণ্যদীপ্ত তারেক রহমানের নাম। প্রতিপক্ষ জানে, তারেক রহমানকে অক্ষত রেখে তাদের স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কারণ তাদের অপকর্মের বৈধতা তারেক রহমান দেবেন না এবং তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলে এমন কোনো স্বার্থান্ধ দলকে ক্ষমতায় আনা সহজ হবে না।

তাই ১/১১-এর সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হন তারেক। কোনো প্রকার মামলা ছাড়াই ২০০৭-এর ৭ মার্চ রাতে তাকে গ্রেফতার করে যৌথ বাহিনী। একে একে তার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা দায়েরের পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা আইনে ডিটেনশনও দেয়া হয়। এভাবে ছয় দফায় ১৩ দিন রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। চাপ প্রয়োগ করা হয় দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য এবং রাজনীতি না করার জন্য। কিন্তু তিনি দেশের কথা, জনগণের কথা ভেবে তাদের কোনো প্রস্তাবেই রাজি হননি। তার এক বক্তব্যেই এটা ফুটে ওঠে।

২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে দেয়া এবং ভিডিওতে ধারণকৃত বক্তব্যে তারেক রহমান তার ওপর বর্বর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর রিমান্ডে থাকাকালে আমার ওপর নানা রকম দৈহিক নির্যাতন করা হয়। এর মধ্যে একটি ছিল অনেক ওপর থেকে বারবার ফেলে দেয়া। অসহ্য যন্ত্রণায় আমি কুঁকড়ে উঠেছি। কিন্তু ওইসব অফিসারদের বিন্দুমাত্র দয়ামায়া হয়নি। ওদের দায়িত্ব ছিল আমাকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলা। তার পর থেকে দীর্ঘ সময় আমি কারাগারে। কোনো ডাক্তার নেই। চিকিৎসা হয়নি। প্রতিটি দিন কেটেছে নারকীয় যন্ত্রণায়।’ এতেই প্রতীয়মান হয়, ১/১১-এর মূল লক্ষ্য ছিল মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা।

এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে বিশেষ জোটকে ক্ষমতার মসনদে বসানো হয়। সবার আশা ছিল ১/১১-এর সরকার থেকে শিক্ষা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার কিছুটা হলেও গণতান্ত্রিক হবে। দেশে আবার ফিরে আসবে গণতন্ত্রের আবহ। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা বাস্তবায়নের জন্য সরকার মরিয়া হয়ে ওঠে। আবার প্রতিহিংসার শিকার হলো জিয়া পরিবার। এই পরিবারকে আক্রমণ কিংবা কটাক্ষ না করে সরকারপ্রধান বক্তব্য-বিবৃতি শেষ করেন না। তারেক রহমানের রাজনৈতিক উত্থানকে তিনি মেনে নিতে নারাজ। অথচ তারেক পোড় খাওয়া রাজনীতিক হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন। হৃদয় দিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করেছেন সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও করুণ অবস্থা।

সরকার তারেক রহমানকে এতটাই ভয় পায়, তিনি যাতে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কিংবা বিপদ-আপদে তাদের দু-চারটি আশার বাণী শোনাতে কিংবা সহমর্মিতা-সহানুভূতি জ্ঞাপন করতে না পারেন।

আওয়ামী লীগ, তাদের দোসর ও আধিপত্যবাদী শক্তির গোয়েবলসীয় প্রচারণার লক্ষ্যবস্তু তারেক রহমান। প্রচারযন্ত্রের মাধ্যমে তার স্বচ্ছ ইমেজকে কালিমা লেপনের মাধ্যমে কার্যত তাকে খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ করতে মহলবিশেষ উঠেপড়ে লাগে। তার দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ ও সাংগঠনিক দক্ষতাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি সরকারের কোনো অংশ না হয়ে দলীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে সব সময় ব্যস্ত ছিলেন। দূর থেকেই সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেছেন। রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন অনেক দূর। তাই সরকার তার বিরুদ্ধে করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা প্রত্যাহার করে তাকে দেশে আসতে দিতে ভয় পাচ্ছে। যারা তারেক রহমানকে ভালোবাসেন, তার সংগ্রামকে চালিয়ে নিয়ে যেতে চান; তাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

পরিশেষে জন্মদিনের এই ক্ষণে তারেক রহমানকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন তাকে পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে এনে কর্মচঞ্চল ও সফল করে তোলেন।

কুতুব উদ্দিন

সাবেক সদস্য সচিব কক্সবাজার পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ও সহ-পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক