নুরুল কবির,বান্দরবান থেকে,
সাংঙ্গু নদীর তীরে অবস্থিত গোটা বান্দরবানে যেন মুগ্ধতার শেষ নেই। দিগন্ত জুড়ে রয়েছে সবুজের পাহাড় আর পাহাড় । একদিকে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আঁকা বাঁকা পথ, এবং পাহাড়ের ১১টি নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্রপূর্ণ জীবন অন্যদিকে রয়েছে মেঘের মিতালি। ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির নির্মল স্বাদ পেতে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা এখন পাহাড়ী জেলা বান্দরবান। পাহাড়-পর্বত ছাড়াও এখানে রয়েছে অসংখ্য ঝিরি-ঝর্ণা, মেঘলার লেক, নজরকারা স্বর্ণমন্দির। প্রতি বছরই ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নামে এ জেলায় । কিন্তু এবার ঈদের ছুটিতে ব্যতিক্রম। এ সময়ে যেখানে পর্যটকদের ঢল থাকার কথা, সেখানে বান্দরবান এখন পর্যটক শূন্য। খালি পড়ে রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। হোটেল-মোটেল রিসোর্টগুলো প্রায় ফাঁকা। অনেকে আগাম যে বুকিং দিয়েছিল তাও বাতিল করেছে। এই অবস্থা কেন জানতে চাইলে হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, এবার অতিবর্ষণ ও পাহাড় ধসে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক প্রাণ হানির ঘটনা সারা দেশকে নাড়া দিয়েছে। পর্যটকদের মধ্যেও একটু আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তাই অনেকে বান্দরবান বুকিং বাতিল করে কক্সবাজার গিয়েছেন। তিনি জানান, গত দুমাস থেকেই পর্যটন ব্যবসায় মন্দাভাব যাচ্ছে। ঈদের ছুটির এ সময়টার দিকে অনেকেই থাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু আশানুরুপ পর্যটক নেই। পাহাড় ধসের পর বান্দরবানের পরিস্থিতি ভালো হয়েছে তা হয়তো অনেকেই জানেন না। এ কারণে বান্দরবানে গত বছরের তুলনায় পর্যটক কম।হোটেল স্বপ্ন বিলাসের মালিক এন এ জাকির বলেন, যেভাবে পর্যটক আসার কথা ছিল সে তুলনায় এবার ছুটিতে পর্যটক আসেনি। বছরের কিছু সময়ে পর্যটন ব্যবসা ভালো হয়ে থাকে, বিশেষ করে এই মৌসুমে ব্যবসা হয়।রতিনি জানান, পুরো বছরের মধ্যে এ সময়ে পর্যটক ভালো হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ব্যবসায় ধস নেমেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারণা ভালো হলে হয়তো সমস্যা কেটে যেত।
এদিকে, বুধবার বিকালে বান্দরবানের নীলাচল, নীলগিরি, মেঘলা,স্বণ মন্দির,শৈল প্রভাতসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে তেমন পর্যটক নেই। অথচ এ সময়ে এসব জায়গায় তিল পরিমাণও ঠাঁই থাকে না।ঈদের দিন ও তার পরদিন বান্দরবানের পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া, লোহাগাড়া,পটিয়া, দোহাজারী, চন্দনাইশ, বাজালিয়া এসব এলাকা থেকে কিছু পর্যটক এসেছে। তবে এদের পর্যটক বলতে নারাজ হোটেল ব্যবসায়ীরা। স্বল্প সময় যারা ঘুরে যান বা অবস্থান করেন তাদের দর্শনার্থী বলেন তারা। যারা বেশ কয়েকদিন অবস্থান করে ঘুরে বেড়ান তাদের পর্যটক বলেন। এদের সংখ্যাই বেশি থাকে এ সময়ে। তবে বর্ষার সময়েও পর্যটক বেশি থাকে বান্দরবানে। কিন্তু এবার তাও নেই। হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান বান্দরবানে ৫২টি হোটেল, মোটেল, অবকাশ যাপন কেন্দ্রে প্রায় পাঁচ হাজার ধারণক্ষমতা রয়েছে। গত বছর এ সময়ে সব বুকিং থাকলেও এবার অর্ধেকেরও বেশি শূন্য। এতে করে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হবে। জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, অতিবৃষ্টিতে কিছু ক্ষতি হলেও বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ন ভালো। পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ হতে প্রচাার-প্রচাারণাও চালানো হচ্ছে।