অনলাইন ডেস্ক: রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের সৃষ্টি মিয়ানমারে, সমাধানও রয়েছে মিয়ানমারে।

আজ সোমবার বিকেলে গণভবনে জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৪ সেপ্টেম্বর সাধারণ অধিবেশনের বিতর্ক পর্বে বক্তব্য রাখি। কোভিডমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে টিকার সার্বজনীনতা ও সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করতে গুরুত্ব আরোপ করি। টিকা বৈষম্য দূরীকরণে কোভিড টিকাকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানাই।’

‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর ক্ষতি কমাতে ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, ক্ষতিপূরণ প্রদান, টেকসই অভিযোজনের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের অনুরোধ জানাই।’

‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম এবং ভালনারেবল গ্রুপ-২০ এর সভাপতি হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন সমৃদ্ধি পরিকল্পনা দশক ২০৩০ বা মুজিব জলবায়ু পরিবর্তন সমৃদ্ধি দশক ২০৩০ এর কার্যক্রম সম্পর্কে বিশ্বের নেতৃবৃন্দকে অবহিত করি।’

‘পাশাপাশি করোনা মহামারিতে শিক্ষা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ডিজিটাল সরঞ্জামাদি ও সেবা, ইন্টারনেটের সুবিধা সহজলভ্যতা, শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আমি জাতিসংঘকে অংশীদারিত্বমূলক সম্পদ নিশ্চিত করতে অনুরোধ জানাই।’

‘অভিবাসীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার, তাদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।’

‘রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আমি আবারো বলি যে রোহিঙ্গা সংকটের শুরু মিয়ানমারে, সমাধানও মিয়ানমারে। রাখাইন রাজ্যে মাতৃভূমিতে তাদের টেকসই প্রত্যাবাসন হলে এ সংকটের সমাধান হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘২১ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, সৌদি আরব, ওআইসি, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, গাম্বিয়া ও বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশ নিই। এতে আমি মূল বক্তব্য উপস্থাপন করি।’

‘সেখানে এ অনুষ্ঠানে তুরস্ক, গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, ভারত, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্সের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা এবং আসিয়ানের স্পেশাল এনভয় বক্তব্য দেন। সেখানে কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দিই। সেগুলো হলো-প্রত্যাবাসনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সব কার্যক্রম পরিচালনা করা, মিয়ানমারের পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে প্রত্যাবাসনের স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা, প্রত্যাবাসনে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর কার্যকর ভূমিকা পালন, জাতিসংঘ উন্নয়ন সহযোগীদের প্রত্যাবাসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও প্রকল্প গ্রহণ এবং রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা ও জাতিগত নিধনের বিচার নিশ্চিত করতে আইসিজেসহ অন্যান্য সংস্থাকে সহযোগিতা নিশ্চিত করা,’ বলেন তিনি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনা মহামারি শুরুর পর প্রায় ২ বছর পর এটাই সশরীরে তার প্রথম কোনো সম্মেলনে যোগদান। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের মূল সভাসহ মোট ১০টি সভা ও ৮টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি অংশ নেন।

করোনা মহামারি এবারের অধিবেশনের মূল উপজীব্য ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মহামারি থেকে টেকসই উত্তরণ ছিল এবারের লক্ষ্য। এছাড়া, কোভিড-১৯ টিকার সার্বজনীন প্রাপ্যতা, সহজলভ্যতা, মহামারি থেকে টেকসই উত্তরণ এবারের আলোচনায় প্রাধান্য পায়। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়ন, অন্তর্ভুক্তি, বর্ণবাদ, এসডিজি, পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ ইত্যাদি বিষয়গুলো বিভিন্ন আলোচনায় উঠে আসে।’

২০ সেপ্টেম্বর ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্কের (এসডিএসএন) পক্ষ থেকে ২০১৫-২০ সময়কালের এসডিজি অর্জনে সর্বোচ্চ সাফল্যের জন্য বাংলাদেশকে এসডিজি প্রগ্রেস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্যে এ পুরস্কার বাংলাদেশের জনগণকে উৎসর্গ করেছি।’

জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে একটি বৃক্ষরোপণ করা হয় এবং বৃক্ষের নিচে একটি বেঞ্চ স্থাপন করা হয়। জাতিসংঘ সদর দপ্তর চত্বরে কোনো রাজনৈতিক নেতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নিদর্শন এটাই প্রথম।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২১ সেপ্টেম্বর ইউএস বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের আয়োজনে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেই। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিজনেস প্রতিষ্ঠান সেখানে অংশ নেয়। সেখানে আমি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধা তুলে ধরি এবং বিনিয়োগের আহ্বান জানাই।’

‘২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে কোভিড-১৯ বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশ নেই। সেখানে মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরেছি।’

২৩ সেপ্টেম্বর স্পেন, কোস্টারিকা, সিয়েরা লিয়নের প্রেসিডেন্ট ও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সমতা অর্জন ও অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন বৈষম্য ও ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণ এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য বিশেষ অর্থায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বক্তব্য দেন।

এবারের অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাসীর জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও প্রাধান্য পায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে বাংলাদেশের সফলতা তুলে ধরেন তিনি। এ সময় তিনি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলা এবং খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠনের আহ্বান জানান।

এবারের অধিবেশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন। এর মধ্যে বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী, কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘের মহাসচিব, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি ও নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন। তাদের সঙ্গে তিনি পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ছাড়াও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।

২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসীদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। ডেইলি স্টার