যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ সরকারের কৌশলগত সংলাপ

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৮:৫২

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য সরকারের এফসিডিও-এর চতুর্থ বারের মতো বার্ষিক যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : ইউএনবি

সিবিএন ডেস্ক:
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের গুরুত্ব, জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে সুশীল সমাজের উপস্থিতি, মতপ্রকাশ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য।

গতকাল শুক্রবার ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন জানিয়েছে, ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে উঠে আসা বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রভাব, বিধিবহির্ভূত আটক, বিধিবহির্ভূত বিচারপ্রক্রিয়া এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাজ্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য সরকারের এফসিডিও-এর চতুর্থ বারের মতো বার্ষিক যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ কৌশলগত সংলাপের নেতৃত্বে ছিলেন এফসিডিও-এর পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি স্যার ফিলিপ বার্টন কেসিএমজি ওবিই ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এফসিডিও-এর দক্ষিণ এশিয়া ও কমনওয়েলথ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী উইম্বলডনের লর্ড তারেক আহমেদ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে স্বাগত জানান।

লর্ড আহমেদ বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও আমি যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যকার দৃঢ় সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছি। আমরা উভয়েই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভবিষ্যতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যকে আরও শক্তিশালী করার সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেছি।’

সংলাপে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতার শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্য নিয়ে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।

যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে কোভিড-১৯ চলাকালে যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছে, তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানায় সংলাপে অংশগ্রহণকারী সদস্যরা। দেশব্যাপী কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি, বিশেষ করে কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া টিকার মাধ্যমে পরিচালনার জন্য যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানায়।

সংলাপে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ইস্যু, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অংশীদারত্ব, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাসহ যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।

যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ উভয়পক্ষ ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো সশরীরে সাক্ষাতের সুযোগকে স্বাগত জানিয়ে সংলাপ শুরু করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে অনুষ্ঠিত এবারের কৌশলগত সংলাপ যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে বলে সংলাপে উল্লেখ করা হয়েছে। উভয় দেশের প্রতিনিধিরা যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রবাসী সংযোগ ও কমনওয়েলথের সদস্যপদের কারণে মানুষের সঙ্গে মানুষের সুদৃঢ় সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সংঘাত প্রতিরোধ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা সমর্থনসহ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একে অপরকে সহযোগিতা করতে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে উভয় দেশই প্রশিক্ষণ, পেশাগত সামরিক শিক্ষা ও ইনস্ট্রাকশন এক্সচেঞ্জসহ যৌথ সহযোগিতাকে স্বাগত জানায় এবং এ বছরের শেষের দিকে একটি প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংলাপ উদ্বোধনের আশা ব্যক্ত করেন।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ বিশ্বের সব দেশকে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে। গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে যুক্তরাজ্য। আগামী বছরগুলোতে কার্বন নির্গমন হ্রাস ও ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো নির্গমনসহ একটি নিট জিরো টার্গেট ও কয়লা শক্তির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশের নেতৃত্বকে আরও উত্সাহিত করে। বিভিন্ন উৎস থেকে আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্যের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন হওয়া ইউকে-বাংলাদেশ ক্লাইমেট পার্টনারশিপের জন্য উভয় দেশই কৃতজ্ঞতা জানায়।

২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার জন্য জাতিসংঘের সুপারিশ লাভ করায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। এই উত্তরণকে সফল করতে, সাহায্য করতে ও বাংলাদেশ যেন তাদের রপ্তানিভিত্তিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পারে তাই যুক্তরাজ্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত তাদের দেশের বাজারে বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটা মুক্ত প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভ করলে উভয় দেশ তাদের উন্নয়ন অংশীদারত্বের ভবিষ্যৎ রূপ নিয়ে আলোচনায় বসবে বলে সম্মত হয়েছেন।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগকারী হিসেবে যুক্তরাজ্য ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউকে-বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ডায়ালগের উদ্বোধনকে স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতির গুরুত্ব এবং বাজার প্রবেশাধিকার বাধা হ্রাস করার ওপর যুক্তরাজ্য জোর দিয়েছে।

উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় অভিবাসন ও সম্পর্কের গভীরতাকে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ স্বাগত জানায়। চলাচল ও অভিবাসন বিষয়ক একটি পার্টনারশিপ গঠনে যুক্ত হতে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক অংশীদারত্ব বৃদ্ধি করতে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে ‘ক্রস বর্ডার উচ্চশিক্ষা আইন’ বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ জানায়।