বিবিসি বাংলা:

১৭৬ জন যাত্রী নিয়ে যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে তার ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধারকৃত ব্ল্যাক বক্স ফ্লাইট রেকর্ডারটি বিমানের প্রস্ততকারক সংস্থা বোয়িং বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে না ইরান।

ইউক্রেনীয় বোয়িং ৭৩৭-৮০০ তেহরানের বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ার ঠিক কয়েক মিনিটের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়ে যায়, ওই ঘটনায় আরোহীদের কেউ বেঁচে নেই।

বৈশ্বিক বিমান বিধিমালার অধীনে, এই ঘটনার তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার ইরানের রয়েছে।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাধারণত এসব তদন্তে যুক্ত থাকে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, কয়েকটি দেশই ব্ল্যাক বক্সগুলো বিশ্লেষণ করতে সক্ষম।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ইরাকের দুটি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই এই বিমান দুর্ঘটনা ঘটে।

তবে দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকার কোনও প্রমাণ মেলেনি।

সাধারণত মার্কিন সংস্থা বোয়িং সম্পর্কিত যে কোনও আন্তর্জাতিক তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবহণ সুরক্ষা বোর্ড ভূমিকা রাখে।

তবে বোর্ডকে অবশ্যই অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুসারে কাজ করতে হয়।

ইউক্রেনীয় বিমান বিধ্বস্ত২০২০ সালের ৮ ই জানুয়ারী তেহরানের ইমাম খোমেনি বিমানবন্দরের কাছে ১৭৬জন যাত্রী নিয়ে ইউক্রেনীয় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরে লোকজন ধ্বংসস্তূপের পাশে ভীড় করে।

ইরানের রক্ষণশীল মেহের সংবাদ সংস্থায় প্রকাশিত বক্তব্যে ইরানের সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (সিএও) প্রধান আলী আবেদজাদেহ বলেছেন: “আমরা ব্ল্যাক বক্সটি বিমানটির প্রস্ততকারক সংস্থা বোয়িং অথবা যুক্তরাষ্ট্রকে দেব না।”

“এই দুর্ঘটনাটি ইরানের বিমান সংস্থা তদন্ত করবে তবে ইউক্রেনীয়রাও উপস্থিত থাকতে পারে,” তিনি যোগ করেন।

মিঃ আবেদজাদেহ বলেছেন যে এটি এখনও পরিষ্কার নয় যে কোন দেশ এই ব্ল্যাক বক্সগুলো বিশ্লেষণ করবে – যার মধ্যে রয়েছে একটি ককপিট ভয়েস রেকর্ডার এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার।

বোয়িং বলছে যে, “তারা যে কোনও প্রয়োজনে সহায়তা দিতে প্রস্তুত”।

এদিকে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন যে, তার দেশ তদন্তে ভূমিকা রাখতে চায় এবং এজন্য তিনি প্রযুক্তিগত সহায়তারও প্রস্তাব দিয়েছেন।

ধ্বংসাবশেষধ্বংসাবশেষের মধ্যে বিমানের একটি ইঞ্জিনের অংশবিশেষ পাওয়া যায়।

কি হয়েছিল?

বুধবার কিয়েভে যাওয়ার পথে ইউক্রেনের আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের পিএস-৭৫২ ফ্লাইটের উড়োজাহাজটি ১৭৬ জন আরোহী নিয়ে ইরানে বিধ্বস্ত হয়।

বিমানটিতে থাকা বেশিরভাগ যাত্রী ছিলেন ইরান এবং কানাডার নাগরিক।

ইউক্রেনের তেহরান দূতাবাস এই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে প্রথমে ইঞ্জিন ব্যর্থতার কথা বললেও পরে বিবৃতিটি সরিয়ে দিয়ে তারা জানায়, কমিশনের তদন্তের আগে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে কোন মন্তব্যই আনুষ্ঠানিক নয়।

উড়োজাহাজটি ইরানের রাজধানীর কাছাকাছি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় আবহাওয়া পরিষ্কার ছিল বলে জানিয়েছে ফ্লাইটরেডার-টোয়েন্টিফোর এভিয়েশন ওয়েবসাইট। এছাড়া বিমান সংস্থাটির কর্মকর্তাও বলেছেন যে বিমানটির ক্রুরাও ছিলেন অভিজ্ঞ।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেছেন, আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত “এই বিপর্যয় সম্পর্কে কোন অনুমান বা মনগড়া তথ্য দেয়া যাবে না।”

ইরানী গণমাধ্যম বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে প্রযুক্তিগত সমস্যাকে দায়ী করছে এবং বিমানের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে তারা বলছে যে কোনও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়নি।

মিঃ আবেদজাদেহ বলেছেন, এই দুর্ঘটনার সাথে সন্ত্রাসবাদের কোন যোগসূত্র নেই, জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম মেহের।

ইউক্রেন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের বিমানবিমান সংস্থাটি ২০১৬ সালে বোয়িং- এর “পরবর্তী প্রজন্মের” ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি কিনেছিল

বিমানটিতে কারা ছিল?

নিহতদের মধ্যে ৮২ জন ইরানি, ৬৩ জন ক্যানাডিয়ান, ১১ জন ইউক্রেনিয়ান, যাদের মধ্যে ৯ জনই ক্রু, ১০ জন সুইডিশ, চারজন আফগান, তিনজন ব্রিটিশ এবং তিনজন জার্মান নাগরিক ছিলেন।

নিহতদের মধ্যে ১৫ জন শিশু।

তবে পরে জার্মান সরকার বলেছে যে “ইরানের বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে জার্মান নাগরিক আছে কি সে বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই “।

ইরানের জরুরি অভিযানের প্রধান জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ১৪৭ জন ইরানী ছিলেন। ওই বিমানে ৬৫ জন আরোহীর দ্বৈত নাগরিকত্ব ছিল।

মিঃ ট্রুডো জানিয়েছেন, ফ্লাইটে ১৩৮ জন যাত্রী কিয়েভ হয়ে ক্যানাডা যাচ্ছিলেন।

মিঃ ট্রুডো বলেন, “যে সমস্ত লোকেরা তাদের বাবা-মা, তাদের বন্ধুবান্ধব, তাদের সহকর্মী বা তাদের পরিবারের কাছে ফিরবে না, তাদের সবারই অনেক সম্ভাবনা ছিল, এই জীবন থেকে তাদের আরও অনেক কিছু পাওয়ার ছিল”।

ইউক্রেনীয় এয়ারলাইন্স বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এর ফ্লাইটের ডেটা এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।

সেখানে দেখা গিয়েছে যে, বিমানটি তেহরান থেকে ছাড়ার সময় স্বাভাবিকভাবে উড্ডয়ন করেছিল।

বিমানের ধ্বংসস্তূপ।বিমানের ধ্বংসস্তূপ।

প্রায় ৮,০০০ ফিট (২,৪০০ মিটার) উঁচুতে পৌঁছানোর পরে বিমানের ডেটা হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়।

এটি অস্বাভাবিক। তবে ঘটনাটির কারণ জানানোর ব্যাপারে আমাদের কাছে এই পর্যায়ে কোনও প্রমাণ নেই।

পূর্বের কিছু বিমান দুর্ঘটনা তদন্তকারীর মতে, পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আগে ইঞ্জিন ব্যর্থতার কথা বলা ঠিক হবে না।

প্রাথমিক পর্যায়ে এই সম্ভাবনাটি উড়িয়ে দেওয়া যায় না তবে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এর মতো বিমানটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেটা ইঞ্জিনের ব্যর্থতা থাকা সত্ত্বেও যেন উড়তে পারে।

এছাড়াও, যদি ইঞ্জিনে কোন সমস্যা থাকে তাহলে ফ্লাইটের ডেটায় দেখা যাবে যে বিমান আরোহণের গতি কমে গেছে।