আলমগীর মানিক,রাঙামাটি :

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্বত্য রাঙামাটি আসনে নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখান করেছেন জনসংহতি সমিতির সমর্থিত সিংহ প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদার। সেই সাথে তিনি নির্বাচনকালীন সময়ে অবৈধভাবে আটককৃতদের নি:শর্ত মুক্তির দাবিও জানিয়েছেন। ২৯৯-পার্বত্য রাঙামাটি আসনের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল বাতিল করা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে দায়ি থাকবে বলেও তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। মঙ্গলবার ১লা জানুয়ারি ২০১৯ বিকেলে রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ি সড়কে অবস্থিত একটি রেস্টুরেন্টে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।

উষাতন তালুকদারের পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব শরৎ জ্যোতি চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য উয়দন ত্রিপুরা, জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য সাথোয়াই প্রু মারমা, সৌখিন চাকমা, জড়িতা চাকমা ও ধীর কুমার চাকমা, রাঙামাটি জেলা কমিটির সহ সভাপতি কিশোর কুমার চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক নীলোৎপল খীসা প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে ঊষাতন তালুকদার আরো বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ২৯৯-পার্বত্য রাঙামাটি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নজিরবিহীন কারচুপি, কেন্দ্র দখল, প্রতিপক্ষ পোলিং এজেন্টদেরকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া কিংবা ঢুকলেও পরে বের করে দেয়া, ভোট দেয়া হয়ে গেছে বলে ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা, পরিচয়পত্র না থাকার অজুহাতে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা প্রদান করা হয়েছে। প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী এবং তাতিন্দ্র ও সুদর্শন চাকমার নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থীদের সহায়তায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে আমার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে।

জনাব তালুকদার আরো বলেন, সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে আওয়ামীলীগের কর্মীরা প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় লংগদু উপজেলার ১৭টি কেন্দ্র, বাঘাইছড়ি উপজেলার ১৭টি ভোটকেন্দ্র, কাপ্তাই উপজেলার ৬টি কেন্দ্র, কাউখালী উপজেলার ১৩টি কেন্দ্র, নানিয়ারচর উপজেলার ২টি কেন্দ্র, বিলাইছড়ি উপজেলার ২টি কেন্দ্র এবং রাজস্থলী উপজেলার ১টি ভোটকেন্দ্র দখল করে আমার পোলিং এজেন্টদেরকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। এসময় রিটার্নীং অফিসার সহকারি রিটার্নীং অফিসার, আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি। ভোট গ্রহণকালে দুপুর ১২ টার দিকে এসব অনিয়ম ও কারচুপি বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলার রিটার্নিং অফিসার তথা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

আওয়ামীলীগ ও নিরাপত্তা বাহিনী অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও নির্বাচনে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য তাতিন্দ্র ও সুদর্শন চাকমার নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নানাভাবে মদদ দিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে উষাতন বলেন, রাঙামাটি জেলাবাসীর সংবিধান-স্বীকৃত ভোটাধিকার তথা গণতান্ত্রিক অধিকার জোর করে কেড়ে নেয়া হয়েছে। এটা রাঙামাটি জেলাবাসী কখনোই গ্রহণ করবে না।

নির্বাচন চলাকালীন নিরাপত্তা বাহিনী, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাতমূলক হস্তক্ষেপ এবং তাতিন্দ্র ও সুদর্শন চাকমার নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলা, আটক, হুমকি, অপহরণ ও বাধা প্রদান সত্ত্বেও সিংহ মার্কায় লক্ষাধিক ভোটার সিংহকে ভোট দেয়ায় এবং ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কারচুপির কারণে যারা ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের সকলের প্রতি তথা রাঙামাটিবাসীর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন ঊষাতন তালুকদার।