সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় পরিচালিত ত্রাণ কর্মসূচির পরিচালন ব্যয় এবং প্রাপ্ত তহবিলের স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার ০১ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন বক্তারা। ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে কোস্ট ট্রাস্ট আয়োজিত ইন্টিগ্রেশন অব গ্রান্ড বারগেন কমিটমেন্টস এন্ড লোকালাইজেশন: এইড ট্রান্সপারেন্সি এন্ড সলিডারিটি এপ্রোচ শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় উক্ত আলোচনা সভায় রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় গৃহীতব্য জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) ২০১৯-এ ককক্সবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি এবং পরিবেশের উন্নয়নে মানবিক এবং উন্নয়ন কর্মসূচির পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এতে বাংলাদেশে স্থানীয়করণের উপর একটি সমীক্ষার ফলাফলও তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মুখ্য সচিব এবং পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আব্দুস সালাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ উইংয়ের মহাপরিচালক নাহিদা সোবহান, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কাারী মিয়া সাপ্পো, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর বাংলাদেশ প্রধান জর্জ জিওগারি, ইউএনএইচসিআর এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি পাপা কাইসমা সিলা, অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি এবং গ্লোবাল লোকালাইজেশন ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য অনিতা কাট্টাখুজি, কক্সবাজার সিএসও এন্ড এনজিও ফোরাম এর কো-চেয়ার আবু মুর্শেদ চৌধুরী, এডাবের পরিচালক জসিম উদ্দীন, ডিজাস্টার ফোরামের গওহর নঈম ওয়ারা এবং কনসার্ন ওর্য়াল্ডওয়াইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর একেএম মুশা।

কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী রোজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, একই সংস্থার মো. মজিবুল হক মনির। এতে স্থানীয় জনপ্রধিনিধিদের কিছু বক্তব্য একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়, যেখানে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে তাঁরা স্থানীয়দের বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করেন।

মো. মুজিবুল হক মনির বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ অঙ্গসংস্থাগুলো এই পর্যন্ত যে ৬৮২ মিলিয়ন ডলার তহবিল পেয়েছে, তাতে প্রতিটি রোহিঙ্গার জন্য মাথাপিছু করে প্রায় ৫৭ হাজার টাকা এসেছে। এই তহবিলের কত অংশ রোহিঙ্গাদের জন্য আর কত অংশ সংস্থাগুলোর প্রধান কার্যালয় বা মাঠ পর্যায়ে তাদের পরিচালন ব্যয় বাবদ কত খরচ হয়েছে এই বিষয়েও তথ্য প্রকাশ করা উচিৎ। আন্তর্জাতিক এনজিও এবং জাতিসংঘ অঙ্গসংস্থাগুলো তাদের পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার মানে হলো তারা সরাসরি প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে স্থানীয় অংশীদারদের তিদয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ উইংয়ের মহাপরিচালক নাহিদা সোবহান বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য টেকসই, নিরাপদ এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন। এই মানবিক সংকটে বৃহত্তর সমন্বয় খুব প্রয়োজন। স্থানীয় এনজিওদেরকে এই সমন্বয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ করতে হবে।

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কাারী মিয়া সাপ্পো বলেন, অংশীদারিত্বই আমাদের প্রয়াসে সাফল্য আনতে পারে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্মান জানাতে হবে। উন্নয়ন কার্যক্রমে আমাদের আরও বেশি বিনয়ী এবং সহযোগিতার মনোভাব সম্পন্ন হতে হবে এবং উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে আমাদেরকে আশাব্যঞ্জক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ইউএনএইচসিআর এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি পাপা কাইসমা সিলা বলেন, কক্সবাজারের জনগণের উপর থেকে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা কমিয়ে আনা আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনই এক্ষেত্রে সবচেযে কার্যকরী সমাধান। মায়ানমার সরকারের সঙ্গেও আমাদের কাজ করতে হবে, যাতে এই রোহিঙ্গারা নিরাপদে ফিরে যেতে পারে।

এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আব্দুস সালাম বলেন, প্রত্যাবাসন বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কাজ করা উচিৎ নয়। এনজিওদের কাজ মানবিক সহায়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।

গ্লোবাল লোকালাইজেশন ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য অনিতা কাট্টাখুজি বলেন, উন্নয়নের স্থানীয়করণের সুপারিশের জন্য আমাদের অপেক্ষা করলে চলবে না, আমাদেরকে সংশ্লিষ্ট প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে স্বউদ্যোগী হতে হবে, কারণ এটি শুধু স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের বিষয় নয়।

পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল করিম বলেন, নিরাপদ প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষায় আমাদেরকে সচেষ্ট থাকতে হবে। আমাদেরকে শুধু উন্নয়ন সহায়তার স্বচ্ছতা নয়, উন্নয়ন সহায়তার কার্যকারিতা নিয়েও ভাবতে হবে।

কক্সবাজার সিএসও এন্ড এনজিও ফোরাম এর কো-চেয়ার আবু মুর্শেদ চৌধুরী রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দের মোট ২৫ শতাংশ স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য বরাদ্দ করার জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জাতিসংঘের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) ২০১৯ এ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করে।

কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার জেলায় পরিবেশ, শিক্ষা ও অর্থনীতির ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার, আইএনজিও এবং জাতিসংঘ মিলে একটি মানবিক ও উন্নয়ন বিষয়ক সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

কনসার্ন ওয়াল্ডওয়াইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর একে এম মুশা বলেন, উন্নয়ন সহায়তার স্থানীয়করণের ব্যাপারে সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কিন্তু মূল চালিকাশক্তি বড় দাতা সংস্থাগুলো, জাতিসংঘ বা আইএনজিও নয়। আমরা কিভাবে তাদের সম্পৃক্ত করতে পারি সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

ডিজাস্টার ফোরামের গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, বলা হয় যে স্থানীয় এনজিওদের সক্ষমতা নেই, কিন্তু তাই যদি হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের কর্মী নিয়ে যাচ্ছে কেন? অস্বস্তিকর হলেও আমাদের প্রশ্নটা তুলতে হবে যে দাতা সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের নামে কত টাকা সংগ্রহ করেছে।