ইমরান হোসেন মুন্না


যদি বলি “নারীর অধিকার হরণে নারীরাই বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ন।”
খুব কি ভুল হবে? একেবারেই না।কেননা, বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যানকর তার অর্ধেক যেমন নারী সৃষ্টি করেছে তেমনি ট্রয় নগরী ধ্বংস থেকে শুরু করে অসংখ্য নারীর প্রতিভা আর নারী ক্ষমতায়নের পিছে লাগামটিতেও ওই

নারীই অগ্নিপাত করেছে।হনুমানের লেজে আগুন ধরিয়ে সমস্ত লঙ্কা পুড়িয়ে দেবার দায় তবে কার?কখনোই এক পাক্ষিকভাবে পুরুষের নয়।বরঞ্চ বর্তমান যুগে আধুনিক পুরুষরা নারীর প্রতি হয়ে উঠেছে যথেষ্ট সহানুভূতিশীল।
.
পরিবারের শাশুরী কিংবা ননদিনী বাড়ির বউটির প্রতি যে রায় বাঘিনীর ভূমিকায় অবতীর্ন হন স্বামী বেচারা কিংবা শশুর মশাই কিন্তু সেক্ষেত্রে ততোটাই জল ঢালার ভূমিকায় অবস্থান গ্রহণ করেন।অর্থাৎ তারা বউটির প্রতি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই পজিটিভ থাকেন।কদাচিৎ নিষ্পেষনকারী পিশাচ স্বামী ব্যাতীত।
.
প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন, আমাদের সমাজে কিন্তু পরিবার থেকেই শুরু হয় এই অধিকার হরণ, বরণ, মরণ,ধরন খেলা।কিছু সমঝদার পরিবার বাদ দিলে অধিকাংশ শিক্ষিত পরিবারেই দেখা যায় ওই পরিবারের মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়া মানে বৃক্ষের ডাল কেটে ফেলার মতো পরিস্থিতি গড়ে তোলা হয়।

যে ডাল পরবর্তীতে পরিবার নামক বৃক্ষের গায়ে জন্ম জন্মান্তর অতিথি নামেই পরিচয় বহন করে।যে অতিথি আর কখনোই সে পরিবারের সকল সিদ্ধান্তে নিজ ভূমিকা রাখতে সম্মান জনক অবস্থান পায় না।
.
প্রায়শই দেখবেন, সম্পত্তিগত দিক থেকে মুসলিম আইনে বরাদ্দ নিয়মেরও বাইরে চলে যায় কোন কোন পরিবার।ন্যায্য সম্পদ বন্টনের পরিবর্তে মেয়েটিকে লামছাম ধরিয়ে দিয়ে যেন ঋণ পরিশোধ করার দায় সারা হয়।যেখানে সেই

পরিবারের ছেলেটি ভবিষ্যৎে বউ বাচ্চা সমেত কোথায় থাকবে সেরকম সুসজ্জিত আবাস, কি খাবে তার যোগ্যতা গড়ে তুলতে ভালো সাবজেক্টে অধিক অর্থ ব্যয় করে পড়িয়ে ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করার মতো সব রকম ব্যবস্থাই রাখা হয়।
.
পক্ষান্তরে মেয়ে সন্তানটিকে কোন মতে কলেজ গন্ডি পাড় করিয়ে দায় সারতে পাত্র পক্ষের কাছে বাজারদর অধিক উচ্চে তুলতে কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েই মায়েরা যাকে কাছে পান তাকে ধরেই বলতে থাকেন মেয়ে বড় হচ্ছে ভালো ছেলে পেলে দিয়েন ভাবী।আহারে,

বড় হতে হতে মেয়েটা যে তার বাড়ির ছাদ ফুঁড়ে মাথা উড়ে তালগাছের মতো আকাশ ছুঁতে যায় সে কথা কি আর বলতে! ঘরে ছাদের তলায় জায়গা হবে না বলেই না জলে পড়ে যাবার মতো কন্যা দায় গ্রস্থ মাতা শাশুরী হবার নেশায় রঙ্গিন স্বপ্নে মেতে ওঠেন।এরপর ভালো ছেলে পেয়ে গেলেই পড়ার বারোটা বেজে

ক্যারিয়ারের তেরোটা ঝুলে গেলেও বিয়ের মতো অতীব ফরজ কাজ আদায় করে ফেলেন সেই মাতা।খোঁজ নিলে হয়তো দেখা যাবে ফরজ ফরজ বলে উৎকণ্ঠিত মাতা নামাজের মতো এক নাম্বার ফরজটিও আদায় করেন কিনা সন্দেহ।আহারে পাক্কা মুসলীম নারী!
.
শিক্ষা জীবনে দেখেছি কি করে একজন নারী শিক্ষার্থী আরেকজন নারী শিক্ষার্থীর পিছে পড়ে থাকে, হিংসে করে অথবা শত্রুতামী কিংবা কূটকাচালীতে মত্ত থাকে।যা একজন ছেলে শিক্ষার্থী কখনোই তার বান্ধবীর সাথে করে না।
.
আপনি দিনে দিনে সুন্দরী হয়ে উঠছেন।পরিচিত পুরুষ থেকে ফেসবুক তালিকার পুরুষ বন্ধুরা পর্যন্ত আপনার প্রশংসা করবে।অথচ, মহিলারাই বলে উঠবেন ” ও ভাবী দেখেছেন অমুক ভাবীর অবস্থা? দিন দিন কেমন যুবতী হয়ে উঠছেন।হবে না? নির্ঘাত পার্লার বেটে চেটে ঘেটে খেয়ে নিচ্ছে।”আপনি আধুনিক কোন পোশাক পরবেন?আপনাকে দেখে প্রথম টিপ্পনীটি কাটবে পুরুষের আগে ওই নারীরাই। এরপরেও আপনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে, নারীর শত্রু আগে নারীরাই?
.
দেশে ধর্ষনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।এতে দায় কার সে যুদ্ধ অনেকবার করেছি।তবে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, যেখানে দেশের প্রধান মন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী দুজনই নারী সেখানে নারী হয়ে তারা কেনো নারীর নিরাপত্তা বিধানে অক্ষম?কেবল মাত্র চাকুরীতে কোটা,শিক্ষা কোটা, বাসে এক্সট্রা সীট বরাদ্দ করে “লেডিস ফার্স্ট” ডায়ালগের তলায় যে নারী হয়ে নারী জাতির মাথায় বাঁশ ভাঙ্গছেন সে খেয়াল তাদের আছে?
.
বাংলাদেশ মাত্র একটি দুটি পরিবার নিয়ে গঠিত নয়।নারীর ক্ষমতায়নে প্রধান অন্তরায় একজন নারীই।এই নারীই যদি বিয়ের পর কোন ক্রমে সংসার বিচ্যুত হয় তার দায়ে সারাদিন কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করে কানের পোঁকা বের করেন বাড়ির অন্যান্য নারী সদস্যরাই।অনেক

পরিবার আছে উপরোক্ত আলোচনার উদাহারণের বাইরে অবস্থান করছেন।আজকের আলোচনা তাদের নিয়ে নয় বলে সেইসব আপুরা দয়া করে আমার উপর তো পারবেন না।
.
কিয়দাংশ নারীরা নিজেদের চরিত্রটিকে দয়া করে বদল করে উন্নয়নের জোয়ারে কিছুটা হলেও গা ভাসান।নইলে অচিরেই সমগ্র নারী জাতি সমেত ডুবে যেতে হবে আপনাদের ।যে সমস্ত নারীরা এগিয়ে চলেছে তাদের পিছে লাগাম টানা থেকে বিরত থাকুন।পরিবারে পুত্র সন্তান, কন্যা সন্তানের জন্য দুই রকমের আহ্লাদ বন্ধ করে স্বাভাবিক সমতায় ভালোবাসতে

শিখুন।নারী হয়ে নারীর পিছনে গীবত চর্চা বন্ধ করে নিজের কপালের নিন্দুক টিকাটি মুছে ফেলুন।সম্মানিত আপুরা, নিজেদের ঘষেটি বেগম চরিত্রে আর অবস্থান না করিয়ে এবার থেকে মহিয়সী নারী যেমন- মাদার তেরেসা কিংবা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হয়ে দেখান.

মনে রাখুন, নারীরা সব পারে।আর নয় কূটকাচালী।”গঠন মূলক নারীতে” রূপান্তর হোন।