মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি :

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র (বিজিবি) নাইক্ষ্যংছড়ি জোনের আওতাধীন লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ত্রিশডেবা বিওপি ক্যাম্পের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে ত্রিপুরা কিশোরী ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ, দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার, ক্যাম্প বহাল রাখার দাবীতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ও বাঙ্গালীরা। বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি বনপুর বাজার এলাকায় এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। মানববন্ধনে স্থানীয় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ গ্রহন করেন। ক্যাম্প বহালের দাবি তুলে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, বনপুর বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান, মানবাধিকার কর্মী মুহাম্মদ কামালুদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম, স্থানীয় মনির আহমদ, রিংকু ধর, মনির আহমদ, মো. মোস্তফা প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এলাকাবাসীদেরকে গুলি করে মারার পর এলাকা থেকে বিজিবি ক্যাম্প প্রত্যাহার করতে হবে, তার আগে নয়। আমাদের প্রাণ থাকতে বিজিবি ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নিতে দেবো না। কারণ বিজিবি ক্যাম্প প্রত্যহার করে নিলে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের অপকর্মের কারণে আমরা ১০মিনিটও স্থায়ী হতে পারবো না। ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার মত স্থানও আমাদের নেই। বিজিবি সদস্য কর্তৃক ত্রিপুরা কিশোরী ধর্ষণের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে; তা মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবী করে তারা আরো বলেন, মূলত এলাকা থেকে যেন বিজিবি ক্যাম্পটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়, তার জন্যেই একটি কুচক্রী মহল বিজিবির সদসস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মত ঘটনার রুপ দিয়েছেন। এসব ষড়যন্ত্রকারীকে আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানান তারা। এরপর বাজাারের আশপাশ এলাকার বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন এলাকাবাসী।

এদিকে স্থানীয়রা অধিবাসীরা জানায়, এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ত্রিশডেবা বিওপি বিজিবি ক্যাম্পটি স্থাপন করা হয়। ক্যাম্পটির আশপাশে ৪১টি বাঙ্গালি পাড়া ও ২৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি পাড়া রয়েছে। ক্যাম্পটি স্থাপনের পর থেকে এলাকাবাসী নিরাপত্তার সাথে জীবন যাপন করে আসছে। এ এলাকায় আর কোন নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্প নেই। বিধায় এই মুহুর্তে ক্যাম্পটি প্রত্যাহার করে নিলে প্রায় ২০ হাজার বাঙ্গালি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়কে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতে হবে। এ কথায় বলা চলে, ক্যাম্প তোলে নিলে ১০ মিনিটও স্থায়ী হতে পারবেনা তারা। উল্লেখ্য, ত্রিপুরা কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ তুলে গত ২৩ আগস্ট বিজিবি‘র তিন সদস্যসহ চার জনের বিরুদ্ধে লামা থানায় মামলা করেন অভিভাবক। এর প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার পাবর্ত্য নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের উদ্যোগেও উপজেলা পরিষদ সম্মুখ সড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, এলাকাটি দীর্ঘ ও খুবই দুর্গম পাহাড়ি। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে বিজিবি ক্যাম্পটি বহাল রাখা অতীব জরুরী। জনসাধারণের জানমালের কথা চিন্তা করে বিজিবি ত্রিশডেবা বিওপি ক্যাম্পটি রাখতে সরকার ও বিজিবির কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল আসাদুজ্জামান জানান, ক্যাম্প প্রত্যাহারের বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে যদি ওপর মহল থেকে যে নির্দেশনা দিবেন, সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।