সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অনুপ্রবেশের এক বছর উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়েছে। ২৫ আগষ্ট বিকাল সাড়ে ৫টায় পালস কক্সবাজারের সাব অফিসে সিএসওএনজিও ফোরামের সদস্যদের সমন্বয়ে উক্ত আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএসও এনজিও ফোরামের কো-চেয়ার আবু মোর্শেদ চৌধুরী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, মানবিক মর্যাদার সাথে ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গার নিরাপদ প্রত্যাবাসন জরুরি এবং সেই ক্ষেত্রে আর্ন্তজাতিক মহলের ইতিবাচক ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর্ন্তজাতিক মহলের ইতিবাচক মনোভাব ছাড়া প্রতাবাসন কোন ভাবেই সম্ভব নয়।

সিএসও এনজিও ফোরামের সদস্য সচিব মকবুল আহামদ বলেন, প্রায় দশ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী পলিথিনের ছাউনির নিচে ভয়াবহ গরমে, প্রবল বৃষ্টির মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি, বিশ্ববাসী এই ভয়াবহ দুর্ভোগ চোখের সামনে দেখেও একটিবারের জন্য এর পেছনে দায়ী মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও সরকারকে অভিযুক্ত করছে না। একটিবারের জন্যও বলছে না, এই এক মিলিয়ন মানুষের নিজ গৃহে ফিরে যাবার অধিকার আছে। মুক্তির নির্বাহী পরিচালক বিমল চন্দ্র দে বলেন, মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ আমাদেরকে অব্যাহত রাখতে হবে অন্যথায় প্রত্যাবাসন খুব সহজ হবেনা। রোহিঙ্গা কার্যক্রমের সাথে লোকাল ক্লাব, ইউনিয়ন পরিষদকে আরো অর্ন্তভূক্তি করার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।

আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইপসার কর্মকর্তা মো: ওমর সাদেক, একলাব’র কর্মকর্তা জুলফিকার আলী, আরএফএস এর নির্বাহী পরিচালক এ্যাড. আবু মুসা মোহাম্মদ, কোস্ট ট্রাস্টের আঞ্চলিক টিম লিডার জাহাঙ্গীর আলম, নোঙ্গর এর নির্বাহী পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ, পালস কক্সবাজার’র কর্মকর্তা আবিদুর রহমান, আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রধান নির্বাহী এমএসএইচডি, মহসিনুজ্জামান পরিচালক-কর্মসূচি-নোঙ্গর, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন-প্রধান নির্বাহী পি.এ.আর.সি এবং রেজাউল করিম মোহাম্মদ তারেক সভাপতি পি.এ.আর.সি। কোস্ট ট্রাস্টের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, জাহেদা বেগম, জুলফিকার হোসেন, মো: হেলাল উদ্দিন, নুর মোহম্মদ এবং আসমাউল হোসনা। অনুষ্টান সঞ্চালনা করেন সিএসও এনজিও ফোরামের সদস্য সচিব মকুবল আহামদ।

সভায় সবার উপস্থিতিতে সিএসও এনজিও ফোরামের পক্ষে নিম্নোক্ত দাবি সমূহ জানানো হয়:
সবার আগে রাখাইন প্রদেশে সংঘটিত গণহত্যার জন্য এককভাবে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও সরকারকে অভিযুক্ত করে তাদেরকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের অধীনে ন্যায়বিচারের মুখোমুখী করতে হবে। বিশেষ করে চীন, রাশিয়া, ভারত সহ সকল দেশকে এ ব্যাপারে দ্বিধাহীনভাবে এগিয়ে আসতে হবে ও মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

জাতিসংঘকে শুধু ত্রাণ বিতরণ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেই হবে না। রুয়ান্ডার অবহেলায় লক্ষ প্রাণের বিনাশের কথা স্মরণ করে মিয়ানমারের গণহত্যার ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে এবং দ্রুত সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়াসহ, হত্যা, ধর্ষনের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিতে হবে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক মর্যাদা পাবার অধিকার রয়েছে। তাদের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সকল পক্ষকে একসঙ্গে ‘সামগ্রিক সমাজ এপ্রোচে’ কাজ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইতিমধ্যে তাদের কথা হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। সেজন্য এ ব্যাপারে এখনই কাজ শুরু করতে হবে।
আমরা লক্ষ্য করছি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক সংগঠনের কাছে ত্রাণ বিতরণ ও অন্যান্য শরণার্থী সেবা প্রদান একটি বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। একটি মানবিক সাড়াপ্রদান নিয়ে বাণিজ্য অত্যন্ত গর্হিত কাজ। একারণেই দ্রুত একটি হিসাবে আসতে হবে- ইতিমধ্যে কত টাকা শরণার্থীদের নামে এসেছে এবং তার কত অংশ কোথায় ব্যয়িত হচ্ছে তার একটি চিত্র প্রকাশ করা প্রয়োজন যাতে স্থানীয় এবং জাতীয় অর্থনীতিতে কোনরুপ নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।

নাফ নদীর ওপাড়ে তথা রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের নিজ গৃহে ফিরে যাবার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর দায় বাংলাদেশ একা নিতে পারবে না, কারণ এর জন্য কোনোভাবেই বাংলাদেশ দায়ী নয়। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জাতিসংঘের যৌথবাহিনীর নেতৃত্বে সেখানে রোহিঙ্গা বসবাসের মতো সম্পূর্ণ উপযোগী নিরাপদ পরিবেশ তৈরির কাজ অবিলম্বে শুরু করতে হবে। বাংলাদেশের কূটনীতির সমঝোতার সুযোগ নিয়ে অপ্রয়োজনীয় ও অর্থহীন বক্তব্য প্রদান থেকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে বিরত থাকতে হবে।

উপরিক্ত দাবী গুলোর স্বপক্ষে রোববার বেলা ১১টায় ঢাকা প্রেস ক্লাব সম্মুখে সিসিএনফ, ইক্যুইটিবিডি এবং কোস্ট ট্রাস্টের উদ্যেগে একটি মানববন্ধন অনুষ্টিত হয়েছে ।