সেলিম উদ্দীন

সাংবাদিকরা মাঝে মাঝে হলুদ হয়, সাদা, কাল,লাল,নীল,সবুজ কেন হয়না? হলুদ সাংবাদিকতা আমাদের সমাজে খুব প্রচলিত একটা শব্দ। যেটা বলতে আমরা সাধারণত মিথ্যা,অপপ্রচার, কাপুরুষোচিত সংবাদকেই হলুদ সাংবাদিকতা বুঝি। প্রশ্ন হলো হলুদ সাংবাদিকতা কেন বলা হয়। বিভিন্ন কালার তো আছে, হলুদ রঙের সাথে এর সম্পর্ক কি ? হাজারো পেশার মধ্যে সাংবাদিকতা একটি মহৎ ও সম্মানজনক পেশা। তবে এর সঙ্গে আর অন্য দশটি পেশার পার্থক্য অনেক। তাই মহান পেশায় থেকে দেশের জন্য কাজ করা হলো সাংবাদিকের পেশা এবং কাজ।

আজকাল এ পেশায় হলুদ সাংবাদিকতা বেড়ে গেছে আশংখ্যাজনক হারে। তারা প্রশাসনের তদবির ছাড়া কিছুই বুঝেনা। কিছু আছে সাংবাদিকতার নাম ভাঙ্গিয়ে চলে। ধরে নেয়া যাক তারা হলুদ, দূর্নীতিবাজ লোক তাদের দ্ধারা দেশ-জাতী কিভাবে উপকৃত হবে!

একজন ভালো ও পেশাদার সাংবাদিক হওয়ার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা করতে হবে এমনটা জরুরি নয়। তবে পড়ালেখা থাকলে ভালো সাংবাদিক হতে পারে। সাংবাদিকদের সব কাজের কাজী হতে হয়। অনেক বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান থাকা একজন সাংবাদিকের জন্য জরুরি। সেটা খেলা, অর্থনীতি-বাণিজ্য, আইন-আদালত, সংবিধান, জ্বালানির মতো বিষয় হতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত থেকে আমি নিজে যখন কিছু সাংবাদিকের বিভিন্ন কর্মকান্ড দেখে সমালোচনামূখর হই, তখন আমার সহকর্মীরাই আমার সমালোচনা করেন। যেখানে যাই ঘটুক না কেন, সবগুলোকে নিজেদের দলসূত্রে বেঁধে ফেলি। এর মাঝ দিয়ে হয়তো আক্রান্ত হওয়া থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়, কিন্তু নিজেদের দায়টুকুর দিকে নজর দেয়া হয়ে ওঠেনা। সব সাংবাদিক নির্যাতনই অপরাধীদের কাজ নয়, কখনও কখনও আমাদের পেশার প্রতি অন্য মানুষের দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভও হতাশা থেকেও এটি হতে পারে। আমরা যদি বারবার সাংবাদিক নির্যাতন বলে এড়িয়ে যাই, তাহলে এরকম ঘটনা বন্ধ হবেনা। আমাদেরকে খুঁজে দেখতে হবে সাংবাদিকদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনোভাব কী?

নিজ অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, এক শ্রেণির তথাকথিত সাংবাদিকদের কর্মকান্ডে মানুষ ধীরে ধীরে এই পেশার প্রতি শ্রদ্ধা হারাচ্ছে। এই সমস্যার বড় কারণ হরেদরে সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহারের সুযোগ। এই সুযোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং এই নিয়ন্ত্রণ আরোপে প্রকৃত সাংবাদিকদের সাহসী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। কক্সবাজারে মিডিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাংবাদিক। তাদের মধ্যে হকার, গাড়ির লাইনম্যান, ওষুধ কোস্পানির সেলসম্যান, ইন্সুরেন্সকর্মী, গরু চোর, জুয়াড়ি, মাদক ব্যবসায়ী, পরিবহণ শ্রমিক নেতাও রয়েছে। প্রতিভাবানরা এই সেক্টরে আসছেন না বলে অনেক সময় প্রায় অযোগ্য কিছু মানুষকে দিয়ে কাজ চালানো শুরু হয়েছে। এদের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেনি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। এসব প্রশিক্ষণবিহীন, সাংবাদিকতা সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞানবিহীন অদক্ষরা শিং-গজানো বাছুরের মতো বুকে আইডি কার্ড ঝুলিয়ে উন্মত্তের মতো আচরণ করছে। এরা সরকারি বেসরকারি অফিসে গিয়ে ধমক দিয়ে কাজ করাতে চায়। এর বাইরে আছে স্বঘোষিত ধান্দাবাজদের সাংবাদিক হয়ে ওঠা। পাড়া মহল্লার কিছু একটা ছাপিয়েই তারা স্বঘোষিত সাংবাদিক হয়ে উঠেছে। যেনতেন প্রকারের অনলাইন ২৪ পত্রিকা বের করে চলছে ব্ল্যাকমেইলিং আর চাঁদাবাজি। এসব সাংবাদিক’দের দায় নিতে হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকদেরকেও।

কথা হচ্ছে এসব টেলা সামলাবে কে? আমি এজন্য একটি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিধিমালা তৈরির দাবী জানাচ্ছি। সব পেশারই লাইসেন্স প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠান থাকে। সব বই পড়ে ঝালাপালা হয়ে গেলেও সনদ নিতে হবে। এসব সনদের কারণে একজন পেশাজীবী তার নিজের পেশার প্রতি সৎ থাকার অঙ্গীকার করেন। সনদ থাকার কারণে আমরা সাধারণ মানুষরা বুঝতে পারি যে, আসলেই আমাকে সেবা দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন কি না। সেবা প্রদানে গুরুতর কোনো অনৈতিকতা থাকলে আমরা বিচারপ্রার্থী হতে পারি এবং দায়ী ব্যক্তির সনদ বাতিল করে তাকে পেশা থেকে সরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা আছে। তাই এই ধরনের পেশাদারিত্বের নিবন্ধন ও সনদ একজন মানুষকে নিজ পেশায় দায়িত্বশীল হতে বাধ্য করে।

সাংবাদিকতা একটি স্পর্শকাতর পেশা। যে কারও হাতে যেভাবে ছুরিকাঁচি তুলে দিয়ে অপারেশনের সার্জন বানিয়ে দেয়া গ্রহণযোগ্য হয় না। একইভাবে যে কারও হাতে কলম-ক্যামেরা-বুম তুলে দিয়ে তাকে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারের দায়িত্ব দেয়াও উচিত নয়।

আমি আশা করি সাংবাদিকদের পেশাদারিত্বের সনদ দিয়ে মিডিয়া-সংশ্লিষ্ট সকল মহল গুরুত্ব দিবেন। অনেকেই হয়তো আমার এই প্রস্তাব সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণের মনোভাব হিসেবে দেখবে। আমার মনে হয় প্রকৃত সিনিয়র সাংবাদিকদেরই উচিত হবে এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নেয়া। নিজেদের পেশার সুনাম রক্ষার জন্যই সাংবাদিকতার বাগান থেকে আগাছা দূর করা জরুরি মনে করছি।

লেখক: সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও প্রতিনিধি-দৈনিক আজকের দেশবিদেশ ও দৈনিক পূর্বদেশ।