হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ:
টেকনাফে অতি কৌশলে ও সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে অপর্যাপ্ত কাগজপত্র দাখিল করে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত রোহিঙ্গারা ভোটার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ অনেক প্রকৃত বাংলাদেশী নাগরিক যথামসয়ে চাহিত মতে কাগজপত্র জমা দিতে না পেরে ভোটার হতে পারেননি। এনিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অভিযোগে জানা যায়, মৃত উলা মিয়ার পুত্র খলিল আহমদ প্রকৃতপক্ষে একজন মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গা। তিনি টেকনাফ পৌর এলাকার কেকেপাড়া জমি ও ঘর কিনেছে। তেমনি ভাবে গোদারবিলের ফকির আহমদ এবং হ্নীলা বা কেকেপাড়ার ঠিকানায় মোঃ ইউনুস প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গা। এরা বর্তমানে চলমান ভোটার হালনাগাদে বাছাইয়ে রহস্যজনকভাবে উৎরে গেছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় সচেতন মহলের মতে সন্দেহভাজন আবেদন ফরমগুলো গৃহীত হলেও পূণরায় অধিকতর তদন্ত করা না হলে অতি কৌশলে ও সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকাভুক্ত হয়ে যাবে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহিদ হোসেন সিদ্দিক ৩১ জানুয়ারী দুপুরে এপ্রসঙ্গে বলেন ‘রোহিঙ্গারা যাতে কোন অবস্থাতেই ভোটার হতে না পারে সে ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। টেকনাফে বিশেষ কমিটির বাছাইয়ে বাতিল হওয়া ফরমগুলো আপীলে বৈধতা পাওয়াদের মধ্যে রোহিঙ্গা থাকলে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। টেকনাফের নতুন নির্বাচন অফিসার এব্যাপারে সততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপরও সুনিদ্দিষ্টভাবে কোন মিয়ানমার নাগরিক কৌশলে ভোটার হওয়ার অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

এদিকে রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে ও পাসপোর্ট করাতে না পারে সে ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান। তিনি বলেন ‘একটি বিশেষ মহল সরকারকে বিভ্রান্তিতে ফেলার উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না যেতে ভুল বুঝাচ্ছে। পাশাপাশি সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডেও উৎসাহ জোগাচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোন মূল্যে এ দেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে’। মঙ্গলবার ৩০ জানুয়ারী দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের চিহ্নিতকরণ সংক্রান্ত বিভাগীয় কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন ‘নির্যাতনসহ বিভিন্ন কারণে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে সাড়ে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া, কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। রোহিঙ্গারা এখানে পাহাড়ি এলাকা ও জমি দখল, পরিবেশ বিনষ্ট, বনভূমি উজাড় ও পড়ালেখার সিস্টেম বিঘ্নিত করছে। তাদের অনেকের কাছে অস্ত্র ও মাদক রয়েছে। তারা বেশি দিন থাকলে আমাদের আরো কী ক্ষতি হতে পারে, এ বিষয়ে সরকারের একটি নীতি নির্ধারণীমূলক চিন্তাভাবনা রয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে নিবন্ধনের আওতায় আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও অন্য বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে মনিটর করা হচ্ছে। তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের সমন্বয়ে যৌথ সভা সম্প্রতি মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠানো পর্যন্ত নিরাপদে রাখা এবং আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখাসহ যাবতীয় বিষয় মনিটর করতে প্রশাসন ক্যাডারের ২০ জন কর্মকর্তা ও প্রতি ব্যাটালিয়নে ৭৫০ জন করে দুই ব্যাটালিয়নে এক হাজার ৫০০ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন নিয়োজিত থাকবে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো সমন্বয় করে কাজ করবে। নোয়াখালীর ভাসান চরে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গাকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে’।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিভাগীয় পরিচালক (স্থানীয় সরকার) দীপক চক্রবর্তী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী, সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ-উল-হাসান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এসএম রোকন উদ্দিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আদিল চৌধুরী, লে. কর্নেল মোহাম্মদ খালিদ আহমদ পিবিজিএম, পিএসসি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব আলম তালুকদার, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুকুর রহমান সিকদার প্রমুখ।