সরওয়ার আলম শাহীন, উখিয়া:

ক্যাম্প এলাকায় ত্রাণের গাড়ী দেখলেই তাদের ছুটোছুটি, হুড়োহুড়ি। গাড়ীর পেছনে লাইনের পর লাইন। নারী,পরুষ, বৃদ্ধ, শিশু কে নেই সে লাইনে। ত্রান শেষ হয়ে যায় কিন্ত লাইন শেষ হয়না। এটা এখন উখিয়ার কুতুপালং থেকে পালংখালী পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বস্তি এলাকার প্রতিদিনকার চিত্র। রোহিঙ্গাদের কাছে একটু ত্রান যেন এক টুকরো চাঁদ। প্রসাশনের নির্ধারন করে দেওয়া ১২ টি স্পটে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকিতে ত্রান বিতরনের ফলে বিশৃংলা ও যানজট কিছুটা কমলে রোহিঙ্গাদের ভোগান্তি কমেনি। ক্যাম্প বা বস্তি এলাকার দুর দুরান্তে এমনও অসহায় পরিবার রয়েছে যাদের হাতে এখনো কোন ত্রান পৌঁছায়নি। দূর্গম পাহাড় ও জঙ্গল ঘেরা এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্টি তীব্র কষ্টে দিনানিপাত করছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও জ্বালাও-পোড়াও শুরুর পর দলে দলে রোহিঙ্গারা জিরো পয়েন্টে আশ্রয় নেয়। প্রথম কয়েকদিন বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু করলেও ৩১ আগস্ট থেকে সীমান্ত প্রায় উন্মুক্ত হয়ে যায়। বাংলাদেশে দলে দলে ঢুকতে শুরু করেন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু। বিশেষ করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়ার কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে ¯্রােতের মতো আসতে থাকেন রোহিঙ্গারা। নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী ও ‘মগ’দের নির্যাতন ও বর্বরতার করুণ কাহিনী শুনে বিশ্ববিবেক থমকে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ সরকারও মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেয় নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের প্রতি। বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে উখিয়া-টেকনাফে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ৪ লাখ ৯০ হাজার বলা হলেও এ সংখ্যা কয়েকগুন বেশী হবে বলে স্থানীয়দের অভিমত। উখিয়ার পথে পথে ক্ষুধার্ত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া ও খাবারের আর্তি দেখে চোখের পানি ফেলেছেন মানুষ। একসঙ্গে এত মানুষের ভার নিতে গিয়ে হিমশিম খায় প্রশাসন। তাদের আশ্রয় প্রদান, খাদ্য ও ত্রাণের জোগান দেয়া কিংবা স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে পড়তে হয় বিপাকে। ত্রাণ বিতরণে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রানের গাড়ী আসছে,এসব ত্রান প্রসাশনের নির্ধারিত উখিয়া উপজেলার কুতুপালং অস্থায়ী ক্যাম্প ১ ও ২, বালুখালী অস্থায়ী ক্যাম্প ১ ও ২, বাঘগুনা, হাকিমপাড়া, তাজনিমারঘোনা বস্তি এলাকায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে বিরতন করা হচ্ছে। এতে ত্রাণ বিতরনে অনেকটা শৃংখলা ফিরে এসেছে। সড়কের উপর যত্রতত্র ত্রান বিতরনের ফলে এতদিন যে যানজট ছিল তাও কমে এসেছে। তবে বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা এখনো কোন ত্রানের দেখা পায়নি। যারা ক্যাম্পের লোকজন ও মাঝিদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলে তারাই ত্রান পাচ্ছে। তাছাড়া অনেকদুর পর্যন্ত বস্তি ছড়িয়ে যাওয়ায় বস্তির প্রবেশমুখে ত্রান বিতরনের খবর অসহায় রোহিঙ্গাদের কাছে পৌছেনা। এতে বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা এখনো ত্রান বঞ্চিত । এসবের মাঝেও প্রতিদিন ত্রান আসেছে,ত্রান পাচ্ছে রোহিঙ্গারা,ত্রানের লাইন দাড়াচ্ছে প্রতিদিন। কেউ পাচ্ছে কেউ পাচ্ছেনা। আশা পরদিনতো পাবো। এদিকে গত দু’ তিনদিন থেকে উখিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টগুলো দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের হার অনেকটা কমে গেছে বলে সীমান্তবর্তী লোকজন জানান।

বিশেষ করে উখিয়ার হাতিমোড়া, ডেইলপাড়া, ঘুমধুম, বাইশফাঁড়ি, আচারতলী, চাকমা পাড়া, রেজু আমতলী, থাইংখালী, রহমত বিল সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা প্রবেশ হচ্ছে গুটিকয়েক। এরা প্রতিদিনই ঢুকছে বস্তিগুলো,নিচ্ছে ঝুপড়ির নিচে একটু স্বস্তির পরশ। একটু ঘুমিয়েই বেরিয়ে পড়ছে খাবারের সন্ধানে,ত্রানের সন্ধানে। ত্রান বিরতনের ব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন জানান, প্রসাশনের বেধে দেওয়া নির্ধারিত স্থানে ত্রান বিতরনের ফলে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা,তাই হয়তো অনেকেই ত্রান পাচ্ছেনা।পর্যায়ত্রুমে সবার ত্রান প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে।