ইমাম খাইর, সিবিএন:
আওয়ামী লীগ সরকার থাকলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হবেনা বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আহবায়ক মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে আওয়ামীলীগ রাজনীতি করছে। ভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ত্রাণ দিতে বাঁধাগ্রস্ত করছে।
আমার দেশ, দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভিসহ বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়ার দাবীতে কক্সবাজারে পেশাজীবী সমাবেশে মাহমুদুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মিয়ানমার ১৮ বার আকাশ সীমা লঙ্ঘন করার পরও প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি সরকার। এই সরকার অনির্বাচিত ও গণবিচ্ছিন্ন। নতজানু নীতির কারণে দেশের এ অবস্থা।
বাংলাদেশে কোন নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি নেই। বাংলাদেশ দিল্লির উপনেবিশ রাষ্ট্র। সরকার দিল্লির কথায় ওঠে আর বসে।
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের অভিজাত হোটেলের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার ও আমার দেশ পাঠক মেলা যৌথভাবে সমাবেশ আয়োজন করে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদদের করুন দশা। এতগুলো রোহিঙ্গার কি অবস্থা হবে? তাদের কোন ধরণের স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে মহিলাদের রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। রোহিঙ্গাদের চরম মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করে আমার দেশ সম্পাদক বলেন, যে পরিমান ত্রাণ আসছে তার অধিকাংশ বেসরকারিভাবে। সরকারীভাবে কোন ত্রাণ দেয়া হয়নি। বরং আওয়ামীলীগ নেতারা ত্রাণের ট্রাক লুট করছে। রোহিঙ্গাদদের মূল্যবান সহায় সম্পদ ছিনিয়ে নিচ্ছে। ত্রাণ বিতরণে কোন নিয়ম নেই। সেনা বাহিনীকে দায়িত্ব দিলে তিনি শৃঙ্খলা আসতে পারে মন্তব্য করেন।
বন্ধ মিডিয়া প্রসঙ্গ টেনে মাহমুদুর রহমান বলেন, বন্ধ মিডিয়া খোলতে আইনি লড়াই করছি। মনে হয় না সুরাহা হবে। তিনি বলেন, তথ্যবহুল সংবাদ ছাপলে আদালত অবমাননা হয়। কিন্তু বিচারককে গালমন্দ ও জামা খুলে ফেললেও অবমাননা হয়না।
দেশে কি কোন আইন আছে? প্রশ্ন রেখে কারা নির্যাতিত সাংবাদিক নেতা মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের আদালত আইন পরিবর্তন করে আমাকে সাজা দিয়েছে। ৮০ বছর বয়সী আমার মা এবং আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।
আমি কাউকে ভয় করিনা। আল্লাহ আমার আয়ু যতদিন রেখেছেন ততদিন বেঁচে থাকব। ১০০ শেখ হাসিনাও আমার ক্ষতি করতে পারবেনা। কারণ, আমি সত্য লিখি। সত্য বলি। আমি কোন অপরাধ করিনি। আমি কারো কাছে ক্ষমা চাইনা। ক্ষমা চাইতে হলে আল্লাহর কাছেই চাই। যত দিন বেঁচে আছি শেখ হাসিনার অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে যাব।
দালাল মিডিয়ার সমালোচনা করে মাহমুদুর রহমান বলেন, কিছু দালাল মিডিয়ার কারণে সত্য সংবাদ প্রকাশ হয়না। অনেকে দিল্লির দালালিতে ব্যস্ত। কিছু মিডিয়াকর্মী দিল্লির চাকরে পরিণত হয়েছে। অধিকার আদায়ে সবাইকে এক হওয়ার আহবান জানান তিনি।
সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার (জেইউসি) এর সভাপতি বিশিষ্ট লেখক গবেষক মুহম্মদ নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক হাসানুর রশীদের পরিচালনা অনুষ্ঠিত সমাবশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ডাঃ শাহাদত হোসেন বলেন, গণতন্ত্র হত্যা করার মূলমন্ত্র গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করা। স্বাধীন মত প্রকাশে সম্প্রচার নীতিমালা বাতিল করতে হবে। গণতন্ত্রের সংগ্রামে জয়ী হতে সবাইকে সোচ্ছার হতে হবে।
তিনি বলেন, একটা ইস্যু ঢাকতে আরেকটা ইস্যু সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ। হলমার্কের দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে রামুতে বৌদ্ধমন্দিরে হামলা-অগ্নিসংযোগ করা হয়। আওয়ামী লীগের লোকজনই এই ঘটনার সাথে জড়িত। স্বৈরাচারী এই সরকারের পতন ঘটাতে রাজপথে নামতে হবে।
বিএনপির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, আমার দেশ পত্রিকাকে ভোটবিহীন সরকার ভয় পায় বলেই বলেই সম্পাদককে গ্রেফতার করে। গায়ের জোরে পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। আওয়ামীলীগ উত্তর কোরিয়ার কিমের মতো আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চায়। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও আওয়ামীলীগ পুরোপুরি স্বৈরতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা দিল্লি থেকে ধার নেয়া কথায় দেশ চালাতে চায়।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে প্রথম দিকে সরকারে অবস্থান স্পষ্ট করলে এই পরিণতি হতোনা। এ বিষয়ে সরকারের কোন নীতিমালাই নেই।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব এম. আবদুল্লাহ বলেন, আমার দেশ চালু থাকলে সরকারের মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতির সংবাদ ছাপানো হতো। গণমাধ্যমগুলো আরো বেশি স্বাধীনভাবে লিখতে পারতো। আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি বন্ধের মাধ্যমে সরকার তাদের মত বিরোধী গণমাধ্যমকে অশনি সংকেত দিয়েছে। এই সরকারের সময়ে ৩০ সাংবাদিক খুন হয়েছে। আইসিটি মামলা দিয়ে গণমাধ্যম দৃনের চেষ্টা করছে। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে মুক্ত গণমাধ্যম দরকার।
দৈনিক আমার দেশ এর নির্বাহী সম্পাদক জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, সরকার বাকশাল কায়েম করতে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। আমার দেশসহ অনেক মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৮৭ টি মামলা দিয়েছে। তার বৃদ্ধ মা মাহমুদা খাতুনকেও আসামী বানানো হয়েছে। সরকারের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বক্তব্য রাখেন- এ্যাŸের সহসভাপাতি রিয়াজুল ইসলাম রিজু, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, এ্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা মো. আফজাল হোসেন সবুজ, রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইসচেয়ারম্যান ফজলুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান, কক্সবাজার পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট অধ্যক্ষ দিদারুল্লাহ প্রমুখ। পরে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় মাহমুদুর রহমানকে।
সমাবেশে কক্সবাজার এর বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী, পেশাজীবী ও রাজনীতিবিদরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে কারা নির্যাতিত কলম সৈনিক মাহমুদুর রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করা হয়। সমাবেশের আগে মাহমুদুর রহমান কুতুপালং, বালুখালীসহ বেশ কিছু রোহিঙ্গ এলাকায় ত্রাণ বিতরন করেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।