সিটিজি টাইমস ডট কম:
সারা দেশের ন্যায় একাদশ নির্বাচনের ভোটের রাজনীতিতে সরগরম চট্টগ্রাম-২ সংসদীয় ফটিকছড়ি আসনেও। এখানে চলছে ত্রি-মুখী ভোটের রাজনীতি। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও এখানে রয়েছে ১৪ দলীয় জোটের শরীক দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। যদিও বা দলটির নিজস্ব সমর্থক কিংবা সাংগঠনিক অবস্থান চোখে পড়ার মতো নয়।

বর্তমানে এ সংসদীয় আসনের সাংসদ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রতীক ফুলের মালার পরিবর্তে আ.লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারো তিনি জোটের হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি হতে চান।

তবে, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে কোনভাবেই ছাড় দিতে রাজী নন দীর্ঘদিন যাবৎ দলের জন্য কাজ করা ত্যাগী আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তাদের দাবী, আ.লীগ সরকারের দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া দলীয় এমপি না থাকায় ফটিকছড়িবাসী বঞ্চিত হয়েছে। একই সাথে দলীয় পছন্দ অনুযায়ী উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হয়নি। তাদের এ দাবীর সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগও। এক কথায় তাদের ভয়, আবারো যদি জোটের প্রার্থী সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে দলের হাইকমান্ড থেকে নৌকা দিয়ে পাঠানো হয়।

উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী বলেন,‘ ফটিকছড়ির উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনায় বর্তমান এমপি উপজেলা আ.লীগ থেকে কোন প্রকার পরামর্শ কিংবা সমন্বয় করেন না। আ.লীগের দলীয় প্রার্থী হলে আমরা উন্নয়ন কিংবা সুখ দু:খের সবকিছুতে এমপির সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারতাম। আমরা আশা করি, আগামীতে নেত্রী আমাদের এ আাসনে জোটের নয়, নিজেদের দলীয় ত্যাগী নেতাকে মনোনয়ন দিয়ে সংসদে ফটিকছড়ির প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেবেন।’

এ আসনে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে যারা আলোচনায় রয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নবম জাতীয় সংসদের ফটিকছড়ি আসন হতে নৌকা প্রতীকে লড়ে বিএনপি প্রার্থী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কাছে পরাজিত হওয়া আ.লীগের কেন্দ্রিয় নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। তিনি সেবার দলীয় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পরাজয় বরণ করেছেন বলে দাবী করেন। আ.লীগের টিকিট পাওয়ার আলোচনায় রয়েছেন উত্তরজেলা আ.লীগের নেত্রী ও সাবেক সাংসদ রফিকুল আনোয়ারে একমাত্র কন্যা খাািদজাতুল আনোয়ার সনি। গতবার নৌকার টিকিট পেয়ে জোটের কারণে ছাড় দিলেও এবার শতভাগ আশাবাদী দল তাকেই মনোনয়ন দেবে।

আরো যারা আলোচনায় রয়েছেন, তারা হলেন-উত্তরজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফটিকছড়ির বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এম. তৌহিদুল আলম বাবু, জেলা আ.লীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ফখরুল আনোয়ার, সদস্য আমেরিকা প্রবাসী মোহাম্মদ শাহজাহান।

অপরদিকে ভোটের রাজনীতিতে সরগরম বিএনপিও। ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা এখন মাঠে ঘাটে। দলের আন্দোলনের সময় এদের অনেককে দেখা না গেলেও ভোট গ্রহনের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তারাও এখন মাঠে আসছেন। এ আসনে বিএনপির নিরব ভোট ব্যাংক রয়েছে বলে জনশ্র“তি রয়েছে। বিশেষ করে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির মনোনিত প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে, যা অতীতের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়। তবে, সাংগঠনিকভাবে বিভিন্ন গ্র“প-উপগ্র“পে বিভক্ত থাকায় এবং দীর্ঘদীন ক্ষমতার বাহিরে থাকায় দলটির সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক।

বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের ভয় ভোটে; অর্থাৎ মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে কিনা তার নিশ্চিয়তা নিয়ে। নির্দলীয় সরকার তথা নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে বলে তাদের যুক্তি। বিএনপির এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন, সাবেক বিচারক ও বিএনপির জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, কেন্দ্রীয় তথ্য ও গভেষণা বিষয়ক সহ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বিএনপি নেতা ও পেশাজীবি নেতা ডা.খোরশিদ জামিল। এছাড়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাদ কাদের চৌধুরী কিংবা সাকার পুত্র হুম্মাম কাদেরও রয়েছেন আলোচনায়। তবে, তাদের কোন উপস্থিতি এ উপজেলায় দেখা যায় না। এ উপজেলায় বিএনপির দু:সময়ে মাঠে থেকে দলকে আগলে রাখা ছালাউদ্দিন আহমেদ ও সরোয়ার আলমগীরও ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী।