বিশেষ প্রতিবেদক:
জনপ্রিয়তা ও উন্নয়নের প্রতি ঈর্ষান্তিত হয়ে রামু উপজেলার ঈদগড় ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভুট্টুকে একের পর এক মিথ্যা ও সাজানো মালায় হয়রানী করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতি।
রোববার বিকাল ৫টায় শহরের একটি আবাসিক হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ও চাকমারকুল ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার বলেন, ঈদগড়ের কুখ্যাত ডাকাত আন্তঃজেলা ডাকাত সর্দার ও অপহরণচক্রের মূল হুতা শাহাব উদ্দিন হত্যা মামলা, মহিউদ্দিন হত্যা মামলা এবং শাহাব উদ্দিনের বাড়ী ভাঙচুর মামলায় পরাজিত শত্রুরাই মামলার বাদীপক্ষকে ম্যানেজ করে চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভুট্টুকে দীর্ঘ দিন ধরে হয়রানি করছে নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী নুরুল ইসলাম বাঙ্গালী। সাথে সহযোগিতায় রয়েছে নুরুল আলম ও আবুল কাশেম নামে আরো দু’ব্যক্তি।
এরা বিভিন্ন হত্যা মামলায় তদন্তকারি কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করে ফিরোজ আহমদকে মামলায় জড়িয়ে দেয়। একারণে চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করতে গিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন তিনি।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রমজানে রোজা রাখার জন্য সেহেরি খেতে উঠলে নিজ বাড়িতে নির্মমভাবে খুন হন ঈদগড় ইউনিয়নের পূর্ব হাছনাকাটা এলাকার কবির আহমদের স্ত্রী লায়লা বেগম। পরে কবির আহমদ (বর্তমানে মৃত) দাবী হয়ে ১০ জনকে এজাহার নামীয় আসামী করে রামু থানায় মামলা দায়ের করে। থানা মামলা নং- ৩২, জিআর মামলা নং-২০৯/১৩ (রামু)। পরে আটক আসামীদের জবানবন্দি ও রিমান্ডের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরো ৭ জনকে আসামী করে প্রথম দফা চার্জশিট দেয় পুলিশ। কিন্তু বাদী পক্ষ সন্তুষ্ট না হওয়ায় মামলাটি পূণরায় তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়।
পরে আদালত ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) মামলাটি পূণরায় তদন্তের জন্য দেয়। ইত্যবসরে মামলার বাদী কবির আহমদ মারা যান। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৬ সালের ২৮ মে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ফিরোজ আহমদ ভুট্টু কাছে পরাজিন হন নুরুল ইসলাম বাঙালী। হেরে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকে লায়লা বেগম হত্যাকান্ডে কিভাবে চেয়ারম্যান ভুট্টুকে জড়ানো যায় সেজন্য তৎপর হয়ে ওঠেন পরাজিত প্রার্থী বাঙালী।
পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ক্যশৈনু মার্মা স্বাক্ষী ও আটক আসামীদের পূণরায় রিমান্ডে এনে তাদের জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালিন ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ এবং ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার নুরুল আমিনসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সম্পূরক চার্জশিট (অভিযোগ পত্র) আদালতে দাখিল করে। সম্পূরক অভিযোগ পত্রে ইউপি চেয়রম্যান ফিরোজ আহমদ ও সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল আমিনকে হত্যাকান্ডের মূলহোতা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। আর তাদের নির্দেশেই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে আদালত ওই সম্পূরক অভিযোগ পত্র আমলে নিয়ে গত ১৩ জুলাই কক্সবাজার সদর আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহ ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদসহ পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ পলাতক রয়েছেন।
চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম সিকদার বলেন, ২০১১ সালে ঈদগড় ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত ফিরোজ আহমদ। এরপর ২০১৬ সালে ফের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এবারের নির্বাচনে তাঁর কাছে হেরে যান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরুল ইসলাম বাঙ্গালী। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার কারণে ফিরোজ আহমদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে নুরুল ইসলাম বাঙ্গালী ও তাঁর সহযোগি নুরুল আলম। একারণে মামলার এজাহারে না থাকলেও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করে সম্পূরক অভিযোগ পত্রে আসামী করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সাহাব উদ্দিন ছিল ঈদগড়ের কুখ্যাত অপহরণকারি। জনতা অতিষ্ঠ হয়ে তাকে গণধোলাই দিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় পুলিশ অজ্ঞাতনামা ২/৩শ লোককে আসামী করে হত্যা মামলা (জিআর-৯/১৪) দায়ের করে। দীর্ঘদিন পর নুরুল ইসলাম বাঙ্গালীর প্ররোচনায় ফিরোজ আহমদ ভুট্টুকে প্রধান আসামী করে বিজ্ঞ আদালতে আরেকটি মামলা (জিআর১৮/১৪) দায়ের করে তাঁর স্ত্রী পারভীন আক্তার। মামলা দু’টি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় রামু থানা পুলিশ। এমনকি ভুট্টু একটি হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় সিআইডি ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দিয়ে তাকে আরেকটি মিথ্যা হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো অপচেষ্টা চালানো হয়।
তিনি বলেন, লায়লা বেগম খুন হয়েছে ২০১৩ সালে। ওই সময় এজাহার ছাড়াও পর পর দুই বার অভিযোগ পত্রেও ফিরোজ আহমদের নাম ছিল না। কিন্তু পরবর্তী না রাজি দিয়ে পিবিআই’র মাধ্যমে মামলাটি ফের তদন্তের জন্য দেয় আদালত। পরে পিবিআই’র কর্মকর্তা নানা নাটক সাজিয়ে চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদকে আসামী করে আদালতে সম্পূরক অভিযোগ পত্র দেয়। পরে গত ১৩ জুলাই আদালত ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ করে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। বর্তমানে গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদকে হয়রানি থেকে রক্ষা করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান আলী হোসেন কোম্পানী, রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফতেখারকুল ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম, গর্জনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, রাজারকুল ইউপি চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান, কাওয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ, কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু মো. ঈসমাইল নোমান, রশিদনগর ইউপি চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলম, জোয়ারিয়ানালা ইউপি চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন প্রিন্স, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টু।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।