মহসীন শেখ:

আলহামদুলিল্লাহ্, পবিত্র ওমরাহ্ হজের সুবাধে আরবে দেখা জীবন্ত ইসলামএবং ইসলামের বিভিন্ন ইতিহাসকে সকলে কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমার লেখা ১১টি খন্ডে। শেষ এ খন্ডেএকনজরে আরবের ঐতিহাসিক স্থান সমূহ দর্শনের সৌভাগ্যের চিত্র আবারও তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র এসব স্থানের মধে মক্কায় কা’রা শরীফ তওয়াফ, মসজিদুল হারাম, সাফা মারওয়া পাহাড় তওয়াফ, মাকামে ইব্রাহিম, জান্নাতুল মাওয়া কবরস্থান, জবলে নূর, জবলে সুর, জবলে রহমত, আরফাতের ময়দান, মিনা, মসজিদুল আয়েশা, তায়েফ ভ্রমণ, জিদ্দায় মা হাওয়ার কবর জিয়ারত, আরব সাগর থেকে শুরু করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানের চিত্রসহ ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমার লেখা ০১ থেকে ১১ খন্ডে। একইভাবে পবিত্র মদিনায় বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ(স.) এবং হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত উমর (রা.)-এর মাজার জিয়ারত, জান্নাতুল বাকী কবরস্থান জিয়ারত, মসজীদে নববীতে নামাজ আদায়, নবীজীর চাচা হযরত আমীর হামজা এর কবর জিয়ারত, মসজিদুল কুবা, মসজিদুল কিবলাতাইন, মসজিদুল সাবা, বায়তুল মাকদাস ও উহুদ রোমা পাহাড় সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানের কথা মুসলমান ভাই বোন সহ প্রিয় পাঠকদের সুবিধার্থে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

চলতি বছরের গত ১মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত এ ২৪ দিনে স্বস্ত্রীক পবিত্র উমরাহ হজ্জ পালনে গিয়ে নিজেকে ধন্য মনে হলো। মনে হয়েছে হাজার কৌটি টাকার বিনিময়ে আমেরিকা সহ সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে বৈধ অল্প অর্থ ব্যয়ে পবিত্র আবর দেখার সৌভাগ্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মুসলমানের জন্য। অতীতের সব পর্বে তুলে ধরেছি একটি কথা, তা হল ধনাঢ্য ব্যক্তিরা বিপুল অর্থের বিনিময়ে বিশ্ব ভ্রমণ করলেও জীবন্ত ইসলামের দেশ পবিত্র সৌদি আরব ঘুরতে যাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। প্রবাদ রয়েছে, যতক্ষণ আল্লাহপাক রব্বুল আল আমীন দোয়া কবুল করবেন না ততদিন মুসলমানদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র স্থান আরবে মক্কা মদিনায় যাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ্পাকের দরবারে আবারও শুকরিয়া আদায় করছি আমাকে আরবে জীবন্ত ইসলামকে দেখার সুযোগ দেওয়ার জন্য। সুবহানআল্লাহ। সকল মুসলমানকে অন্তত একটিবার হলেও পবিত্র মক্কা মদিনা দেখার সুযোগ দেওয়ার জন্য আল্লাহ্র দরবারে দোয়া করছি। আমীন।

এবার পবিত্র মক্ক মদিনার কিছু সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরলাম:

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী মুসলিম মাত্রেই মক্কা শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। মক্কা শব্দটি উচ্চারিত হতেই তিনি হৃদয়ে এক গভীর ভালোবাসা অনুভব করেন। তার অন্তরে এ নগরীকে দুচোখ জুড়ে দেখার এবং এখানে অবস্থিত আল্লাহর মহাপবিত্র ঘর কা’বা যিয়ারতের একান্ত আকাক্সক্ষা লালন করেন। আর যারা হজ বা উমরা করতে চান, তাদেরকে অবশ্যই এ পবিত্র ভূমিতে গমন করতে হয়। তাই এ সম্মানিত শহর স¤পর্কে জানা প্রতিটি মুসলিমের একান্ত কর্তব্য। নিুে তাই পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে

এ মহান নগরীর কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল :

কুরআন কারীমে পবিত্র মক্কা নগরীর কয়েকটি নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, ১- মক্কা{আল-ফাতহ : ২৪}; ২- বাক্কা {সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৬}; ৩- উম্মুল কুরা (প্রধান শহর){সূরা আশ-শূরা, আয়াত : ৭}; ৪- আল-বালাদুল আমীন (নিরাপদ শহর) {সূরা আত-তীন, আয়াত: ৩}। বস্তুত কোনো কিছুর নাম বেশি হওয়া তার মর্যাদা ও মাহাÍ্যরেই পরিচায়ক।

আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমে হারাম শরীফের সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। জিবরীল আলাইহিস সালাম কা’বা ঘরের নির্মাতা ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে হারামের সীমানা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর দেখানো মতে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তা নির্ধারণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে হারামের সীমানা সংস্কার করা হয়। [আল-ইসাবা : ১/১৮৩]

ইমাম নববী রহ. বলেন, হারামের সীমানা স¤পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এর সঙ্গে অনেক বিধি-বিধানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। [তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত : ৩/৮২]

মক্কা নগরীতে আল্লাহ তা‘আলার অনেক নিদর্শন রয়েছে : যেমন, আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এ মর্মে বলেন,

﴿ فِيهِ ءَايَٰتُۢ بَيِّنَٰتٞ مَّقَامُ إِبۡرَٰهِيمَۖ ﴾ [ال عمران: ]

তাতে (মক্কা নগরীতে) রয়েছে অনেক সু¯পষ্ট নিদর্শন যেমন মাকামে ইবরাহীম। [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ৯৭]

কাতাদা ও মুজাহিদ রহ. বলেন, প্রকাশ্য নিদর্শনগুলোর একটি হলো মাকামে ইবরাহীম। [তাফসীরে তাবারী : ৪/৮]

মূলত মক্কা নগরীর একাধিক নাম, এর সীমারেখা সুনির্ধারিত থাকা, এর প্রাথমিক পর্যায় ও নির্মাণের সূচনা এবং একে হারাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ নগরীর সম্মান ও উঁচু মর্যাদার কথা ফুটে ওঠে। তাই দেখা যায় ইতিহাসের পর¤পরায় সবসময়ই পৃথিবীর বুকে মানুষ পবিত্র মক্কার আলাদা মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য মেনে নিয়ে এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে।

মক্কার অতুলনীয় মর্যাদা :

আল্লাহ্ তা’আলা মক্কা নগরীকে হারাম (সম্মানিত) ঘোষণা করেছেন :

আল্লাহ তা’আলা যে দিন যমীন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই মক্কা ভূমিকে সম্মানিত করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

﴿ إِنَّمَآ أُمِرۡتُ أَنۡ أَعۡبُدَ رَبَّ هَٰذِهِ ٱلۡبَلۡدَةِ ٱلَّذِي حَرَّمَهَا ﴾ [النمل:]

আমিতো আদিষ্ট হয়েছি এ নগরীর মালিকের ইবাদাত করতে যিনি একে সম্মানিত করেছেন। [সূরা আন-নামল, আয়াত : ৯১]

একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় আল্লাহর প্রিয় রাসূলের মুখেও। ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

্রإِنَّ هَذَا الْبَلَدَ حَرَّمَهُ اللهُ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ فَهُوَ حَرَامٌ بِحُرْمَةِ اللهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.

এ শহরটিকে আল্লাহ যমীন ও আসমান সৃষ্টির দিন থেকেই হারাম অর্থাৎ সম্মানিত করেছেন। আল্লাহ্কর্তৃক সম্মানিত এ শহরটি কিয়ামত পর্যন্ত সম্মানিত থাকবে। [মুসলিম : ১৩৫৩]

আল্লাহর খলীল ইবরাহীম(আ.) মক্কাকে হারাম হওয়ার ঘোষণা দেন। আল্লাহর নির্দেশে তিনি আল্লাহর ঘর কা’বা নির্মাণ করেন এবং একে পবিত্র ঘোষণা করেন। অতপর মানুষের উদ্দেশে তিনি হজের ঘোষণা দেন এবং মক্কা নগরীর জন্য দু’আ করেন। আবদুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

্রإِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ وَدَعَا لَها.

নিশ্চয় ইবরাহীম মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেন এবং শহরটির জন্য দু‘আ করেন। [বুখারী : ১৮৮৩; মুসলিম : ১৩৮৩]আল্লাহ্ মক্কা নগরীর কসম খেয়ে তাকে সম্মানিত করেছেন :

আল্লাহ্ কর্তৃক কোনো কিছুর কসম খাওয়া তার সম্মানের প্রমাণ বহন করে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ এই মক্কার কসম খেয়েছেন। মক্কা নগরীর কসম খেয়ে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,

﴿ وَٱلتِّينِ وَٱلزَّيۡتُونِ وَطُورِ سِينِينَ وَهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ ٱلۡأَمِينِ﴾ [التين: ،

কসম তীন ও যাইতূনের। কসম সিনাই পর্বতের। এবং কসম এ নিরাপদ শহরের। [সূরা আত-তীন, আয়াত : ১-৩]আয়াতে এই নিরাপদ শহর বলে মক্কা নগরী বুঝানো হয়েছে। আরেক আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ لَآ أُقۡسِمُ بِهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ وَأَنتَ حِلُّۢ بِهَٰذَا ٱلۡبَلَدِ ﴾ [البلد:]

আমি কসম করছি এ শহরের। আর আপনি এ শহরের অধিবাসী।’ [সূরা আল-বালাদ, আয়াত : ১-২]

মদিনা মুসলমানদের প্রাণের ভূমি। মদিনা হলো নবীজি (সা.)-এর শহর; শান্তির নগর। রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল। (সহিহ মুসলিম)। যে হজ করল কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না; সে আমার প্রতি জুলুম করল। (তিরমিজি) ফকিহগণের মতে, হাজিদের জন্য মদিনা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নত। হাজি সাহেবদের জন্য রওজা শরিফ জিয়ারত করা ওয়াজিব। ইসলাম-পূর্ব যুগে মদিনার নাম ছিল ইয়াস্রিব। রাসুলে কারিম (সা.)-এর হিজরতের পর এই শহরের নাম হয় মদিনাতুন্নবী বা নবীর শহর। সংক্ষেপে এখন বলা হয় মদিনা। মদিনা শরিফ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আশ্রয়ভূমি; প্রেম, ধৈর্য ও আতœত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তস্থান এবং সত্যনিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণতার অদ্বিতীয় কর্মক্ষেত্র। মদিনাবাসীর ব্যবহার অতি মধুর, তাঁদের বাক্যালাপ অতি মিষ্ট এবং তাঁদের সঙ্গ অতি পবিত্র। সর্বদা সতর্ক থাকবেন যেন মদিনা শরিফে কোনোরূপ বেয়াদবি না হয়। মদিনাবাসীকে সব সময় ইজ্জত ও সম্মান প্রদর্শন করা জরুরী।মদিনায় অবস্থানকালে প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য হচ্ছে মসজিদে নববিতে হাজিরা দেওয়া এবং সেখানে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। এখানে একাদিক্রমে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে নববিতে জামাতের সঙ্গে পড়ার অবশ্যই চেষ্টা করবেন।

নবী করিম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার মসজিদে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছে আর কোনো নামাজ কাজা করেনি, সে নিফাক (মোনাফিকি) আর দোজখের আজাব থেকে নাজাত পাবে, সুবহানআল্লাহ। মসজিদে নববিতে এক রাকাত নামাজের সওয়াব পঞ্চাশ হাজার রাকাত নামাজের সমান। মসজিদে নববির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান নবীজির রওজা শরিফ। হজরত আয়েশা (রা.)-এর হুজরার মধ্যে তাঁর পবিত্র মাজার শরিফ অবস্থিত। তাঁরই পাশে হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত উমর (রা.)-এর মাজার। (এর পাশে আরেকটি কবরের জায়গা খালি আছে, এখানে হজরত ঈসা (আ.)-এর সমাধি হবে)। রওজা শরিফ জিয়ারতের মাহাÍ্য স¤পর্কে আরও বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর তাঁর রওজা মোবারক জিয়ারত করল, সে যেন রাসুল (সা.)কে জীবদ্দশায় দর্শন করল।

মসজিদে নববির পশ্চিম পাশের প্রবেশপথকে বাবুস সালাম বলা হয়। এ দরজা দিয়ে মসজিদে নববিতে প্রবেশ করতে হয়। মসজিদে নববির পূর্ব পাশের বহির্গমন দরজাকে বাবে জিবরাইল বলা হয়। এখানে হজরত জিবরাইল (আ.) ওহি নিয়ে এসে প্রায়ই অপেক্ষা করতেন। তাই এ নাম হয়েছে।রওজা শরিফ এবং এর থেকে পশ্চিম দিকে রাসুলে কারিম (সা.)-এর মিম্বর পর্যন্ত স্বল্প পরিসরের স্থানটুকুকে রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগিচা বলা হয়। এটি দুনিয়াতে একমাত্র জান্নাতের অংশ। এই স্থানে স্বতন্ত্র রং (ধূসর সাদাটে) কার্পেট বিছানো থাকে। রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার রওজা ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানে বেহেশতের একটি বাগিচা বিদ্যমান। এখানে প্রবেশ করা মানে জান্নাতে প্রবেশ করা। রাসুলে কারিম (সা.) যে স্থানে দাঁড়িয়ে নামাজের ইমামতি করতেন, সেই মেহরাবকে মেহরাবুন নবী বা নবীজি (সা.)-এর মিহরাব বলা হয়। হজরত জিবরাইল (আ.) যে স্থানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছেন, সেখানকার মেহরাবটি মেহরাবে জিবরাইল বা হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মিহরাব নামে পরিচিত।

হাদিসে বর্ণিত, প্রথম দিকে হুজুর (সা.) একটি খেজুরগাছের খাম্বার সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে জুমার দিনে খুতবা দিতেন। যখন মিম্বর বানানো হলো, তখন হুজুর (সা.) মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা বয়ান করতেন। এই খাম্বা হুজুর (সা.)-এর বিচ্ছেদের কারণে এমন করে কান্না শুরু করে যে মসজিদের সব লোক স্তম্ভিত হয়। হুজুর (সা.) মিম্বর থেকে নেমে এসে খাম্বার গায়ে হাত বুলিয়ে তাকে সংবর্ধনা দিলে সে শান্ত হয়। পরে সেই খাম্বাটিকে দাফন করা হয়। আবু লুবাবা নামক এক সাহাবির তওবা কবুল হয় যেখানে, সেটি উস্তোয়ানা আবুলুবাবা (রা.)হিসেবে পরিচিত। ইতিকাফের সময় হজরত মা আয়েশা (রা.) যে জায়গায় থেকে জানালার মধ্য দিয়ে নবীজি (সা.)-এর খেদমত করতেন, তা হচ্ছে উস্তোয়ানা আয়েশা (রা.)। ইতিকাফের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য খাট-বিছানা যেখানে পাতা হতো, তা হচ্ছে উস্তোয়ানা সারির। হজরত আলী (রা.) যেখানে দাঁড়িয়ে নবীজিকে পাহারা দিতেন, তা হচ্ছে উস্তোয়ানা আলী (রা.)। আর উস্তোয়ানা ওফুদ হচ্ছে সেই স্থান, যেখানে বসে রাসুলে কারিম (সা.) দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতেন। মসজিদে নববির পূর্বদিকে অবস্থিত জান্নাতুল বাকি গোরস্থানে অসংখ্য সাহাবা, আউলিয়া, বুজুর্গ এবং ধার্মিক মুসলমানদের মাজার রয়েছে। এর মধ্যে হজরত ফাতিমা (রা.), হজরত উসমান (রা.), উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.), হুজুর (সা.)-এর চাচা হজরত আব্বাস (রা.), হুজুরের ছাহেবজাদা হজরত ইব্রাহিম (রা.), হজরত হাসান (রা.), হজরত জয়নুল আবেদিন (রা.), হজরত উসমান ইবনে মজউন (রা.), হুজুরের ছাহেবজাদি হজরত রোকাইয়া (রা.), হজরত আলী (রা.), হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.), হজরত সাআদ ইবনে আবিওয়াক্কাছ (রা.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), হজরতের দুধমা হালিমা সাদিয়া (রা.), ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রা.), ইমাম জাফর সাদিক (রা.), হজরত বাকির (রা.) প্রমুখের মাজার শরিফ উল্লেখযোগ্য। হুজুর (সা.) প্রায়ই শেষ রাতে জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং দোয়া করতেন।

পবিত্র মদিনা শহরের ঠিক উত্তর-পূর্ব দিকে ঐতিহাসিক ওহুদ পাহাড় অবস্থিত। মসজিদে নববি হতে এর দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। এই ওহুদ প্রান্তরেই বিধর্মীরা নির্মমভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র দন্ত মোবারক শহীদ করে। এই রণক্ষেত্রে নবীজির চাচা মহাবীর হজরত হামজা (রা.) এবং হজরত আকিল ইবনে উমাইয়া (রা.)সহ সত্তরজন সাহাবা শহীদ হয়েছিলেন। হজরত আমির হামজা (রা.) ও হজরত আকিল (রা.)কে একই কবরে দাফন করা হয়। এখানে একটি মসজিদ আছে। শহীদানদের মাজার জিয়ারত করা উচিত।মসজিদে কিবলাতাঈন হচ্ছে সেই মসজিদ, যেখানে বসে তখনকার কিবলা বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে জোহরের নামাজ পড়ার সময় নবীজির কাছে ওহি নাজিল হয় যে, আপনি এখনই এই অবস্থায় কাবার দিকে কিবলা করে নামাজ সমাধা করুন। (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৪৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) মাত্র দুই রাকাত ফরজের ইমামতি করেছেন। আদেশ পাওয়ামাত্র তিনি কাবা শরিফের দিকে ঘুরে বাকি দুই রাকাত নামাজ সমাধা করেন।

মসজিদে কোবা হচ্ছে ইসলাম জগতের সর্বপ্রথম মসজিদ। এটা হজরত রাসুলে কারিম (সা.)-এর নিজ হাতে তৈরি। মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববি ও মসজিদুল আকসার পরই মসজিদে কোবার সম্মান। এখানে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়লে এক উমরাহ্’র সওয়াব পাওয়া যায়। খন্দক প্রান্তরের পাশে অল্প পরিসর স্থানে কাছাকাছি ছয়টি মসজিদ আছে। এগুলো হচ্ছে মসজিদে ফাত্তাহ, মসজিদে সালমান ফারসি (রা.), মসজিদে আবু বকর সিদ্দিক (রা.), মসজিদে উমর (রা.), মসজিদে আলী (রা.) ও মসজিদে ফাতিমা (রা.)। বনিসালেম মহল্লায় অবস্থিত মসজিদে জুমুআ মসজিদেই হজরত রাসুলে কারিম (সা.) প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) যে মসজিদে ঈদের জামাতে ইমামতি করেছেন এবং একসময় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার (বৃষ্টি প্রার্থনা) নামাজ পড়েছিলেন, তা মসজিদে গামামা নামে পরিচিত। গামামা হচ্ছে মেঘ। এ জন্য এই মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে মসজিদে গামামা। বদরের যুদ্ধের সময় হজরত রাসুলে কারিম(সা.) মসজিদে সাকিয়ায় নামাজ পড়েছিলেন এবং মদিনাবাসীর জন্য দোয়া করেছিলেন।

হে আল্লাহ্, যেন সকল মুসলমানকে পবিত্র সৌদিআরবে জীবন্ত ইসলামকে দেখার সুযোগ দান করুণ, আমীন।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক সকালের কক্সবাজার। মোবাইল:- ০১৬১৯০৭০৫১৩