জাগো নিউজ:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোট সম্প্রসারণের নীতি গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এটি নিয়ে জোটের শরীকদের মধ্যে চলছে ‘মনোমালিন্য’। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট একটি আদর্শিক জোট। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোই এই জোটে থাকুক। সেক্ষেত্রে এই আদর্শে বিশ্বাসী যেকোনো দল জোটে যোগ দিতে পারে। সেই রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র যাচাই করে তবেই জোটে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ১৪ দলের কলেবর বাড়তে পারে। জোটের আদর্শ মেনে কেউ যদি আসতে পারে তাহলে তো অসুবিধা নেই। আর আদর্শিক জোট ও নির্বাচনী জোটে পার্থক্য আছে। ১৪ দল একটি আদর্শিক জোট।

আদর্শিক জোটে নতুন কোনো দল আসার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন জোটের কোনো কোনো শরীক। তবে আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনী জোট সম্প্রসারণ করতে চায় তাতে শরীকদের আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।

১৪ দলীয় জোটে নতুন কোনো দল আনার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘১৪ দলে নতুন কোনো দলের প্রয়োজন নেই। এমন কোনো দল নেই যে তারা ভোটে বা আন্দোলনে গতি বাড়িয়ে দেবে। তাই নতুন করে কাউকে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন নেই।’

এ বিষয়ে জোটের শীর্ষনেতা ও গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। ক্ষমতায় যেতে তারা অনেক কৌশল নিতে পারেন। নির্বাচনে জিততে অন্যান্য দলের সঙ্গে কথা বলতেই পারেন। জোটের ২-৩টি দল সরকারে আছে, বাকিরা নেই। কিন্তু আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি নির্দিষ্ট ২৩ দফার ভিত্তিতে।

‘আমরা কঠিন সময়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। এখন এর কলেবর বৃদ্ধি হলে সেটা জোটের আদর্শ মেনেই হতে হবে, আলোচনার ভিত্তিতে’- যোগ করেন তিনি।

মূলত গত মে মাসে ইসলামী ফ্রণ্ট বাংলাদেশ’র ১৪ দলীয় জোটে যোগদানের প্রস্তাব নিয়ে জোটনেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জোট সম্প্রসারণের বিষয়টি সামনে আসে। এর আগে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও দলটির সভাপতি সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী জয়লাভ করতে পারেননি। তবে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে নিয়মিতই সরব ছিল দলটি।

১৪ দলীয় জোটের আলোচনায় দলটির অন্তর্ভুক্তির প্রথম বিরোধিতা করে জোটের আরেক ইসলামী দল ‘তরিকত ফেডারেশন’। গত সংসদ নির্বাচনের আগে ১৪ দলে আসা দলটি ইসলামী ঐক্যফ্রন্টের আদর্শসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

গত ২ জুলাই ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ-কে ১৪ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আলোচনায় বসেন জোটের নেতারা।

সেখানে জোটের শরীক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ১৪ দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আবারও আপত্তি তোলেন।

ওই বৈঠকে তিনি বলেন, ‘ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ-কে ১৪ দলের অন্তর্ভুক্ত করতে হলে তাদের গঠনতন্ত্র-ঘোষণাপত্র ভালো করে যাচাই-বাছাই করা উচিত। ১৪ দলের সঙ্গে আদর্শিক পার্থক্য থাকলে সেটি বিশেষ ভাবে দেখতে হবে। আমাদের জোট অক্ষুণ্ন রাখতে হবে।’

জানা গেছে, ৩ জুলাই ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের নেতারা ১৪ দলীয় জোটের কাছে দলীয় গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেন। এ বিষয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ১৪ দলীয় জোটে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না, তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোটে দলটি যোগ দিতে পারে- বলে জানানো হয়।

এ বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ (একাংশ) সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, ‘আমি ওই বৈঠকে ছিলাম না। তবে জোটনেতাদের কাছ থেকে শুনেছি ১৪ দলীয় জোটে ইসলামিক ফ্রন্টকে নেয়া হচ্ছে না। তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটে দলটি থাকতে পারে।’

২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর আওয়ামী লীগের জোট গঠনের উদ্যোগ থেকে পরের বছর ২৩ দফার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয় ১৪ দল। তবে জাসদ ও ন্যাপের সঙ্গে এই জোটে আসা বাম-প্রগতিশীল জোটের ১১ দলের মধ্যে সিপিবি, বাসদসহ চারটি দল পরে বেরিয়ে যায়। এছাড়া পরবর্তী সময়ে গণফোরামকে বাদ দেয়া হয়।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১৪ দলে নেয়া হয় তরিকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টি (জেপি)-কে। এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত আরও কয়েকটি দলকে জোটে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। অবশ্য ১৪ দলে বর্তমানে চারটি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে।