নুরুল কবির বান্দরবান:

বান্দরবানে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে অতি ভারী বর্ষন ও বন্যার কারণে নতুন করে এই সংকট তৈরী হয়েছে। বন্যার কারণে নীচু এলাকার অধিকাংশ রিং ওয়েল, টিউব ওয়েল নষ্ট হয়ে গেছে। এই সাথে ভারী বর্ষনের কারণে পাহাড়ী বিভিন্ন এলাকায় জিএফএস’র মাধ্যমে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে পানি সরবরাহ প্রকল্প গুলোর অধিকাংশ ধ্বস হয়ে গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটের কবলে পড়েছে।

গত ১৩ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত তিন দিনের টানা ভারী বর্ষনে বান্দরবান জেলার ৭ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২৪ ঘন্টায় ৩০৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকড করা হয়। মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মামবুবুল ইসলাম জানান, ২৪ ঘন্টায় ৩০৮ মিলিমিটার বৃষ্টি নতুন রেকড সৃষ্টি করেছে। ২ দর্শকের মধ্যে এ ধরনের ভারী বর্ষন লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধস ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পাহাড়ী জনপদ, গ্রামীন অবকাঠামো, জমির ফসল, গাছ-পালা ও পানীয় জলের সংস্থান গুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী জানান, ভারী বর্ষনে পাহাড়ী জনপদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হঠাৎ ভারী বৃষ্টি হওয়ার ফলে পাহাড়ী ঢলের সাথে পলি মাটিও নেমে এসেছে। যার কারণে বন্যায় ডুবে থাকা রিং ওয়েল ও টিউব ওয়েল গুলো অকেজু হয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব পরিস্কার করা হচ্ছে।

এদিকে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানছি উপজেলায় পাড়া ভিত্তিক জিএফএস এর মাধ্যমে পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধিকাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে অনেক গুলো পাড়ায় জিএফএস সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি সমস্যায় পড়েছে।

বান্দরবান জন স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সোহরাব হোসেন জানান, সাম্প্রতিক সময়ে অতি বর্ষায় জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সঠিক সময়ে বরাদ্দ আসলে এই দ্রুত ভাবে কাজ করা সম্ভব। তিনি আরো জানান, জন স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের আওতায় ২০০৯ সালে পানির কাভারেজ ছিল ৩১ শতাংশ। যা জুন ২০১ তে এসে এই কাভারেজ দাড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে। পল্লী অঞ্চলে পানি সরবরাহের জন্য নতুন একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে যার প্রাক্কলিত ব্যয় ৪৫ কোটি ৩ লক্ষ টাকা যা ২০১৯ সালে শেষ হবে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বান্দরবান জেলায় পানির কাভারেজ হবে ৭৫ শতাংশ। এ ছাড়াও বান্দরবান পৌর সভায় ২০০৯ সালে পানির কাভারেজ ছিল ৩৮ শতাংশ যা বর্তমানে ৪৮.০৫ শতাংশ। নির্বাহী প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন আরো জানান, ২০৫০ সালকে টার্গেট রেখে বান্দরবানের ২টি পৌরসভাসহ ৩৩টি ইউনিয়নে শতভাগ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ৫শত ৫ কোটি টাকার একটি মেঘা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যাচাই কমিটিতে আছে। প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে গেলে অনুমোদন হতে পারে।