রফিক মাহমুদ, উখিয়া:
এখন দেশের আনাচে কানাচে ব্যাপক আকারে বিস্তৃতি লাভ করেছে ভয়ংকর মরণনাশক মাদকদ্রব্য ইয়াবা। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারসহ সারাদেশে মরননেশা ইয়াবা মজুদ ও সরবরাহ বাড়াতে আগে ভাগেই তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে সীমান্তবর্তী উখিয়া-টেকনাফের চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী বাঘা-বাঘা সিন্ডিকেট। সম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের ইনানী ও মনখালীর ব্রিজের নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে টেকনাফের শাহপরীদ্বীপ পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজভাবে চালু হওয়ায় এবং উক্ত সড়কে ইনানীর পর থেকে কোন ধরনের চেকপোষ্ট না থাকায় ইয়াবা ব্যবসায়ী নিঃসন্দেহে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার উদ্দেশ্যে ইয়াবা পাচার করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, এই পবিত্র রমজানের শেষে ঈদুল ফিরতকে টার্গেট করে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের ৪০টির অধিক পয়েন্ট দিয়ে অসাধু ইয়াবা সিন্ডিকেট সদস্যরা শত শত কোটি টাকার ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারের প্রস্তুতি নিয়েছে। এজন্যে তারা সড়কপথ ছাড়াও প্রয়োজনে টেকনাফ স্থল বন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর ও কক্সবাজার বিমান বন্দরের পাশাপাশি অভ্যন্তরীন বিভিন্ন নৌ পথকে নিরাপদ চ্যানেল হিসেবে বেছে নিয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃংখলা বাহিনীর অসাধু সদস্যদের ম্যানেজের মাধ্যমে ইয়াবা চক্রের সদস্যরা ইতোমধ্যে শত শত কোটি টাকা মূল্যের এসব ট্যাবলেটের বস্তা বস্তা চালান নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা, অসাধু সাংবাদিক ও একশ্রেণীর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দফারফা সম্পন্ন করেছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক ও বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি স্থায়ী ও অস্থায়ী চেকপোষ্ট থাকলেও শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা অভিনব কায়দায়, অটোরিক্সা সিটের নিচের থাকা ব্যাটারী টুলবক্সের ভেতরে ইয়াবাগুলো বহন করে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল-মোটেল ও পর্যটন নগরীর বিভিন্ন পর্যটন স্পটে নিরাপধ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে দিন দিন ইয়াবার চাহিদার পরিমাণ যেমন তুলনামূলক হারে বাড়ছে তেমনি বাড়ছে এর সেবনের পরিমাণও। এদিকে ইয়াবা আসার অন্যতম প্রধান রুট মিয়ানমার থেকে টেকনাফ, উখিয়া হয়ে কক্সবাজার। তাছাড়া সীমান্তের কুতুপালং ক্যাম্পের বস্তি এলাকা ও উখিয়ার গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন দোকানকে গুদাম হিসাবে ব্যবহারসহ পালংখালী, থাইংখালী, বালুখালী, উখিয়া সদর, কোটবাজার ও অন্যতম চেক পোস্ট পাশ্ববর্তি ষ্টেশন মরিচ্যা বাজার সহ তার আশ-পাশের বেশ কয়েকটি গুদামে ইয়াবার মজুদ বাড়াচ্ছে ইয়াবা সিন্ডিকেট। এসব ইয়াবা সিন্ডিকেটর মধ্যে উখিয়া উপজেলার বালুখালী, ঘিলাতলী, হাজীরপাড়া ও দুছড়ি, রতœাপালং, তেলীপাড়া, রাজাপালংয়ের যাদীমোরা, হিজলিয়া এলাকার কয়েকটি সিন্ডিকেট বর্তমানে দিনে-রাতে মিয়ানমার থেকে নির্দিষ্ট কয়েকটি গুদামে ইয়াবা মজুদ করে যাচ্ছে। মজুদকৃত এসব ইয়াবা সড়কপথে সুন্দরী নারীদের ঈদের কেনা-কাটার জন্য পর্যটন নগরী কক্সবাজার যাওয়া অজুহাতে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে অভিনব কায়দায় পায়ুপথ ব্যবহার করে পাচারে ব্যাস্ত রয়েছে শক্তিশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট। উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া শরনার্থী ক্যাম্প ভিত্তিক ২ শতাধিক রোহিঙ্গা মহিলা ছাড়াও কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তের অর্ধশতাধিক পয়েন্টে ৬শতাধিক পাচারকারী নারী-পুরুষ মরণ নেশা ইয়াবা পাচার কাজে জড়িত রয়েছে। যে বসয়ে কিশোর ও যুবকরা বই খাতা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা, সে বয়সে তারা হাত বাড়ালেই পাচ্ছে যৌন উত্তেজক ইয়াবা ট্যাবলেট সহ রকমারি মাদক দ্রব্য। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মাঝে মধ্যে ইয়াবা ও মাদকের বড় রড় চালান ধরা পড়লে ও গডফাদারেরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের আন্তর্জাতিক চোরাচালান সিন্ডিকেট এখন অস্ত্র ব্যবসার পরিবর্তে মাদক ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এ সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের অধিকাংশের বাড়ী কক্সবাজারের টেকনাফ, শাহপরির দ্বীপ, হ্নীলা, রঙ্গিখালী, মৌলভী বাজার, কানজর পাড়া, হোয়াইক্যং, উখিয়া, পালংখালী, থাইংখালী, বালুখালী, কোটবাজার, রতœাপালং, তেলীপাড়া ও সীমান্তের কাছাকাছি। মূলত তিন শতাধিক সদস্যের একটি শক্তিশালী দল সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইয়াবা ও মানবপাচার এক সুত্রে গাথা বলে স্থানীয় সচেতন মহল দাবী করেন। তবে মানবপাচারে এখন ভাড়ি পড়ায় মানবপাচারকারীদের বেশীরভাগ ইয়াবা ব্যাবসার সাথে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে। এদের অনেকেই ইতিমধ্যে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে। সীমান্তে দায়িত্বে নিয়োজিত বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদ্যসরা একের পর এক অভিযান চালিয়ে ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের চালান উদ্ধার করতে পারলেও শীর্ষ ইয়াবা পাচারকারীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায় কোন মতেই ইয়াবাসহ মাদক পাচার থামছে না কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে। যার কারণে সীমান্তে দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ইয়াবা প্রতিরোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের ৩শতাধিক নেতাকর্মী এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করলেও তাদের গায়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আচঁড় লাগছে না।
টেকনাফ উপজেলার শাহপরীরদ্বীপ, কালার পাড়া, নয়াপাড়া, সাবরাং, জালিয়া পাড়া, নাইটং পাড়া, জাদিমুরা, হ্নীলা, মৌলভী বাজার, উনচিপ্রাঙ্ক, হোয়াইক্যং, উলুবনিয়া, কাটাখালী, তুলাতলী, উখিয়া উপজেলার আঞ্জুমান পাড়া, পালংখালী বটতলী, রহমতের বিল, ধামনখালী, বালুখালী, কাটাপাহাড় সহ ৪০টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমান ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারকারী ও ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাজারজাত হয়ে আসছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশের মাদকের বাজারকে লক্ষ্য করে পাশ্ববর্তী মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে এই পযর্ন্ত ৩০টির অধিক কারখানায় বস্তা বস্তা পিস ইয়াবা উৎপাদন হয়ে থাকে বলে বিজিবি সুত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে উখিয়া-টেকনাফের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ইয়াবা আটকের ঘটনা ঘটছে, তবুও পবিত্র ঈদুল ফিরতকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগের চেয়ে বেশী তৎপর রয়েছে। পাশাপাশি ইয়াবা গড় ফাদারদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে প্রতিবেদকে জানান।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।