বিশেষ প্রতিবেদক
কক্সবাজার পৌরসভার ১০ ওয়ার্ডের অর্ন্তভুক্ত দক্ষিন মোহাজেরপাড়ায় অন্তত ৫ হাজার মানুষ উচ্ছেদ আতংকে দিন কাটাছে। অকারণে অভিযানের নামে বাড়ীঘর ভাঙচুর, সম্পদ লুটের আশংকায় অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার চিন্তা করছে।

বিশেষ করে গত ২৭ মে সকালে প্রশাসনের লোকজন গিয়ে স্থানীয়দেরকে বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেন। হঠাৎ এমন ঘোষণায় স্থানীয় কাউন্সিলরসহ মান্যগন্য ব্যক্তিরা ঘটনা স্থলে পৌছলে এনডিসিকে অনুরোধ জানালে পরে তিনি ফিরে যান।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাবেদ মোঃ কায়সার নোবেল উচ্ছেদ আতংকের বিষয়টি নিশ্চিৎ করে বলেন, বসবাসরত অধিবাসিদের কাউকে কোন প্রকার নোটিশ না দিয়ে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসি তাঁকে অভিযোগ করেছেন। তিনি এলাকাবাসিদের অভিযোগের ভিত্তিতে এ ব্যপারে উচ্ছেদের দায়িত্বে নিয়োগকৃত জেলা প্রশাসনের এনডিসি তাহমিলুল ইসলামের সাথে কথা বলেছেন। কাউন্সিলর নোবেলের অনুরোধে পবিত্র রমজান মাস পর্যন্ত কোন ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করবে না বলে সময় দিয়েছেন উক্ত এনডিসি। এলাকাবাসিরা জানান সকালে এনডিসি জনপ্রতিনিধি নোবেলকে রমজানে উচ্ছেদ করবে না বলে জানালেও একই দিন দুপুরে ঔ এনডিসি এবং এসিল্যান্ডসহ একাধিক সরকারি লোকজন এলাকায় গিয়ে উচ্ছেদের ভয়ভীতি দেয়।

স্থানীয় সুত্র জানায়, অনেক দিন আগে জেলার বিভিন্ন স্থানের গৃহহারা মানুষ এসে হিলটপ সার্কেট হাউস স্থাপিত পাহাড়ের অদুরে ১নং খাস খতিয়ানের এক সময়ের পরিত্যাক্ত সমতল ভুমিতে দীর্ঘ যুগযুগ ধরে বসবাস শুরু করে। ক্রমান্বয়ে জনসংখ্যা বেড়ে এ এলাকায় শতশত জনবসতি গড়ে উঠায় কক্সবাজার পৌরসভা উক্তস্থানে সড়ক,ড্রেইন কালবার্ড নির্মানসহ নানান নাগরিকদের প্রয়োজনীয় আবাসিক সুবিধা প্রদান করেন। একই সাথে বিদ্যুৎ বিভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ সুবিধা প্রদান করেন। এ কারনে দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় বসবাসরত আমরা সকলে হোল্ডিং টেক্স (পৌরকর) ও বিদ্যুৎ বিলসহ সরকারি অন্যান্য টেক্স পরিশোধ করে আসছে। পরে বসবাসরতদের প্রজম্মের পর প্রজম্ম এ এলাকায় বসবাস করায় সকলের এখন একমাত্র মাথাগুজার ঠাঁই হচ্ছে এ মোহাজের পাড়াই। বর্তমানে এ পাড়ার কয়েক হাজার নারী-পুরুষের জম্মনিবন্দ ও জাতীয় পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড)-এর ঠিকানা উল্লেখ আছে এই মোহাজের পাড়ার নামে। এতে এক এলাকায় যুগযুগ ধরে বসবাসরত বাসিন্দাদেরকে জোরপুর্বক ক্ষমতা প্রয়োগ করে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে জেলা প্রশাসন।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুবর রহমান জানান,দক্ষিন মোহাজের পাড়ার অদুরে পশ্চিমের পাহাড়ের উপরে স্থাপিত হিলটপ সার্কিট হাউস একসময়ে আমাদের বসতি গড়ে উঠার আগে অনিরাপদ ও ডাকাত-সন্ত্রাসের ঝুঁকি ছিল। সে হিলটপ সার্কিট হাউস স্থাপিত পাহাড়ের অদুরে পুর্বপাশে সমতলে ক্রমান্বয়ে শিক্ষিত জনবসতি গড়ে উঠার ফলে সে ঝুঁকি এখন আর নেই। স্বাধীনতার পরবর্তীতে দেশের ভিভি আইপি বা ভিআইপির এই হিলটপ সার্কিট হাউসে যখন আসা যাওয়া করেন ঠিক তখনই এ পাড়ার অধিবাসিরা দুর থেকেও অতন্দ্র প্রহরীরর মত পাহারা দিয়ে থাকেন সম্মনিত অতিথিদের। এ কারনে স্বাধীনতার পরে বিগত দিনগুলোতে কখনো কোন ধরনের বিপদের মোখমুখী হতে হয়নি কক্সবাজারের জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের। স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল বলেন,কক্সবাজারে আগত ইতিপুর্বের দায়িত্ব পালনকারি অসংখ্য জেলাপ্রশাসক নিরাপত্তার প্রয়োজনে হিলটপ সার্কিট হাউস পাহাড়ের অদুরের কোন বসতবাড়ি উচ্ছেদের মত কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহন করেনি। ইতিপুর্বে সার্কিট হাউসের পাহাড়ঘেষে বহুবার সীমানা প্রাচীর দেয়া হয়েছে,যার চিহ্নি এখনো রয়েছে। এখানে আমরা মনে করছি রাষ্ট্রের কোন ক্ষতিকারক ব্যক্তি জেলা প্রশাসককে নানা ভাবে ভুল বুঝিয়ে প্রায় শত বছরের শতশত জনবসতি উচ্ছেদ করে হাজার হাজার মানুষকে উদ্ববাস্থ বানিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থানের পায়তারা করছে।

৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন কবির জানান, মোহাজের পাড়ার দীর্ঘদিনের ঘরবাড়ি নিয়ে থাকা অধিবাসিদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে আমরা জেলা প্রশাসককে অনুরুধ করেছি। কিন্তু জেলা প্রশাসনের কিছু অতি উৎসাহি কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দের অনুরুধ উপেক্ষা করে অজ্ঞাত কারনে বারবার উচ্ছেদের জন্য চেষ্টা করছে।

কক্সবাজার পৌর মেয়র মাহাবুবর রহমান চৌধুরী বলেন পুর্নবাসনের আগে মোহাজের পাড়াবাসিকে উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি। তিনি উচ্ছেদ আতংকে থাকা এলাকাবাসির সাথে বিষয়টি নিয়ে বসে সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরুধ করেছেন বলে জানান। এ ব্যপারে অতংকগ্রস্থদের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ,সাংসদ সদস্যসহ সকলে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছেন বলেন জানান স্থানীয়রা।