নিউজ ডেস্ক:

চলমান তাপপ্রবাহে সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, এ গরমে ঘরে ঘরে নানা ধরনের রোগের প্রকোপ বাড়ছে। একদিকে জ্যৈষ্ঠের খরতাপ, অন্যদিকে লোডশেডিং। ভোরের সূর্য বেলা গড়াতেই নিচ্ছে ভয়ঙ্কর রূপ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এ পরিস্থিতিতে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশু ও বয়ঃবৃদ্ধরা। ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ নানা রোগ।

আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, পাবনা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও বরিশাল অঞ্চলসহ ঢাকা এবং খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা পৌঁছে গেছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আরও কয়েকদিন এ তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে।

থার্মোমিটারের পারদ চড়তে চড়তে যদি ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে, আবহাওয়াবিদরা তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলেন। তাপমাত্রা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস অনুযায়ী, মে মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এক থেকে দুটি তীব্র এবং অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু বা মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানায়, মে মাসে তেমন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। জুন মাসে বেশি বৃষ্টিপাত হবে বাংলাদেশে।

চিকিৎসকরা চলমান এ দাবদাহের মধ্যে মাস্ক ও ঘাম মোছার জন্য রুমাল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, এমন গরমে বেশি করে বিশুদ্ধ পানি ও স্যালাইন খাওয়া ভালো। এছাড়া ডাবের পানি ও বিশুদ্ধ পানির শরবত খাওয়া যেতে পারে।

তীব্র এ গরমে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। ‘হিট স্ট্রোক’ থেকে শিশুরা আক্রান্ত হয়ে পড়ছে ডায়রিয়া ও ব্রঙ্কিউলাইটিস রোগে। পাশাপাশি নিউমোনিয়া তো আছেই। এসব রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় কয়েকগুণ বেড়েছে বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে। গত কয়েকদিন ধরে ভর্তি হওয়া মোট শিশু রোগীর দুই-তৃতীয়ংশ এসব রোগে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন ঢামেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকরা।

ঢামেকে রোববার টিকিট কেটে চিকিৎসা নিয়েছেন এক হাজার ৪৯০ জন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই গরমজনিত রোগে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু। এখন প্রায় প্রতিদিনই ২০০-২৫০ শিশুর চিকিৎসা দিতে অভিভাবকরা আসছেন, যা আগে ছিল সর্বোচ্চ ১২০-১৫০। শুধু ঢামেক হাসপাতালেই নয়, শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে নগরীর সরকারি-বেসরকারি অন্য হাসপাতালগুলোতেও।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ইনচার্জ ডা. আয়েশা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ডায়রিয়া, ব্রঙ্কিউলাইটিস ও নিউমোনিয়া- সবকয়টি রোগই ভাইরাসজনিত। তবে নিউমোনিয়ার প্রকোপ শিশুদের মাঝে সারা বছর কম-বেশি দেখা গেলেও ব্রঙ্কিউলাইটিসের প্রকোপ তেমন থাকে না। ঋতু পরিবর্তনের সময় আরএসবি (রেসপিরেটরি সিনসেটিয়াল ভাইরাস) ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত রোগটির প্রকোপ হঠাৎ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। আর গরমে যোগ হয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের পাশাপাশি জনসাধারণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক।

তীব্র দাবদাহের কারণে সৃষ্ট ‘হিট স্ট্রোক’ থেকে রক্ষা পেতে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সাধারণত বৃদ্ধ ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি হিট স্ট্রোকের শিকার হয়। তাই শিশু-বৃদ্ধসহ কাউকে অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে না দেয়া উচিত। এ সময় সব বয়সী মানুষের যথা সম্ভব ঢিলেঢালা ও সুতি পোশাক পরা উচিত। গরমের কারণে প্রচুর ঘাম হয় বলে অনেকের এ সময় পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। অনেকে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। কারও কারও মাংস পেশিতেও ব্যথা হতে পারে।

এ সময় প্রচুর পরিমাণে লবণ-পানি বা সরাসরি খাবার স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি ফলের রস, শরবত ইত্যাদি পান করা যেতে পারে। তবে কোনো মতেই রাস্তার খোলা শরবত বা ফলের রস পান করা উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

চিকিৎসকরা জানান, এ সময় খাবার তৈরির দুই ঘণ্টার মধ্যেই খাওয়া উচিত। কারণ গরমকালে তৈরি খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় বলে খাবার টাটকা থাকতেই গ্রহণ করা ভালো। পচাবাসি খাবার একদম খাওয়া চলবে না। শিশুকে তো খাওয়ানো যাবেই না।

শিশুদের জন্য পরামর্শ

যেসব শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানো হয় সেসব শিশুকে মায়ের বুকের দুধের বাইরে আর কিছু খেতে দেয়া উচিত নয়। আর স্কুলগামী শিশুদের প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করাতে হবে। তারা যেনো কড়া রোদে দৌড়াদৌড়ি না করে। অপ্রয়োজনে ঘর থেকে যেন বের না হয় সেদিকেও অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে।

আর সর্দি-কাশি বা জ্বর দেখা দিলে ফার্মেসি থেকে কফ-কাশির সিরাপ না খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে তারা বলেন, কফ-কাশির সিরাপ শিশুর জন্য বরং ক্ষতিকর। এগুলোর যথেচ্ছ ব্যবহারও কিন্তু নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর আক্রান্ত হলেও আতঙ্কিত না হয়ে শিশুকে গরম খাবার, লেবুর রস এবং প্রাথমিকভাবে জ্বরের ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এরপরও যদি অবস্থার পরিবর্তন না হয় চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে বা হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। আর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দেরি না করে শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তারা।

হিট স্ট্রোকের শিকার হলে করণীয়

সব সতর্কতা সত্ত্বেও কেউ হিট স্ট্রোকের শিকার হলে করণীয় সম্পর্কে চিকিৎসকরা বলেন, গরমের কারণে কেউ অসুস্থ বোধ করলে তাকে দ্রুত ছায়া সুশীতল এলাকায় স্থানান্তর করতে হবে। অসুস্থ ব্যক্তিকে পাখার নিচে বা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে নিয়ে পরিচর্যা করা গেলে সবচেয়ে ভালো হয়। পরিষ্কার তোয়ালে বা গামছা পানিতে ভিজিয়ে বারবার তার ঘাম মুছে দিতে হবে। হিট স্ট্রোকের কারণে কেউ জ্ঞান হারালে দ্রুত তাকে কাছের হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।