ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরীকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আসামিপক্ষের আইনজীবী সানজীদ সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর ফলে তার মুক্তিতেও বাধা নেই বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মিফতাহ উদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি এ এন এম বসিরুল্লাহ’র সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এদিন আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। সঙ্গে ছিলেন, ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব ও ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী।

সানজীদ সিদ্দিকী আরও জানান, মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও সরকার উৎখাতের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এদিকে এ জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল আবেদন দাখিল করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালতে দায়িত্বরত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম মনিরুজ্জামান কবীর। আগামী রোববার ওই আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্যের সঙ্গে ভারতে আসলাম চৌধুরী বৈঠক করেছেন। এমন খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর আসলাম চৌধুরীকে ২০১৬ সালের ১৫ মে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তার বিরুদ্ধে ২৫ মে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করে পুলিশ। মামলায় অবৈধভাবে সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়।

এ মামলায় তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে আদালত গত ৫ ডিসেম্বর রুল জারি করেন। জারি করা রুলে কেন তাকে নিয়মিত (স্থায়ী) জামিন দেয়া হবে না তা সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আসলাম চৌধুরীকে নিয়মিত (স্থায়ী) জামিন দেয়া হয়।

গোয়েন্দারা দাবি করেন, আসলাম চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই মোসাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করে আসছিলেন। ওই চেষ্টা সফল হয় ২০১৫ সালের জুন মাসে। দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে পশ্চিমা একটি দেশে আসলাম চৌধুরীর প্রথম দফায় বৈঠক হয়। এরপর মোসাদ এজেন্টদের সঙ্গে আরও দু’টি বৈঠক হয়েছে ভারতে। সর্বশেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে।

প্রসঙ্গত, নাশকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ থাকায় আসলাম চৌধুরীর ওপর জারি হয় দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা। তখন থেকেই মূলত আসলাম চৌধুরী গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিলেন। ২০১৬ সালের ১৫ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর ভাটারা থানার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে আসলাম চৌধুরী ও তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. আসাদুজ্জামান মিয়াকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

এরপর আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের এবং মতিঝিল ও লালবাগ থানায় দায়ের করা নাশকতার দুই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।