শামসুল হক শারেক
তিনি ছিলেন অসহায় ছাত্রদের আশ্রয় স্থল। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের ছাত্ররা তাঁকে অভিভাবক মনে করতো। সত্য ও ন্যয়ের পক্ষে তিনি ছিলেন অবিচল এক বটবৃক্ষ। কুরআন-হাদিসের গভীর জ্ঞানের পাশাপাশি একাডেমিক পড়া লেখায় তাঁর ছিল অসাধারণ ভুতপত্তি। পটিয়া আল জামিয়া ইসলামিয়ার সাবেক পরিচালক মরহুম হাজী (ইউনুস) সাহেব হুজুরের অত্যন্ত বিশ্বস্থ আপনজন। বিগত ৫০ বছর ধরে জীবনের দুই তৃতীয়াংশ তিনি কাটিয়েছেন পটিয়া আল জামিয়া ইসলামিয়ায় কুরআন-হাদিসের জ্ঞান বিতরন করে। তিনি হচ্ছেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন পটিয়া আল জামিয়া ইসলামিয়ার প্রধান মুফতি, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর আল্লামা মুফতি মুজাফ্ফর আহমদ।

তিনি আর নেই, ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। (আজ) ০২ মে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ সকাল ৯.৪৫ টায় ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে ৮০ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেছেন-ইন্নালিল্লাহি ওইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি স্ত্রী ও ৯ সন্তানসহ শত সহ¯্র গুণগ্রাহী রেখে ক্ষনস্থায়ী এই জীবন ছেড়ে পাড়ি দিয়েছে অনন্ত জীবনের পথে। মরহুমের অছিয়ত অনুযায়ী (আাগামী) কাল ৩ মে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ সকাল ১১টায় পটিয়া আল জামিয়া ইসলামিয়া ক্যাম্পাসে মরহুমের নামাজে জানাযা শেষে সেখানেই তাঁকে দাফন করা হবে।

দেশের প্রখ্যাত এই আলেমে দ্বীন কক্সবাজারেরই একজন কৃতি সন্তান। তাঁর গ্রামের বাড়ী মহেশখালীর নতুন বাজার এলাকায়। তিনি প্রখ্যাত আইনজীবি ও রাজনীবিদ মরহুম মওদূদ আহমদের ছোট ভাই ও প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মহফুজুর রহমান মরহুমের ছোট ভাই। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুহাম্মদ মুহিবুল্লাহর তিনি চাচা।

মরহুম আল্লামা মুজাফ্ফর আহমদ গত ৫০ বছর ধরে পটিয়া আল জামেয়া ইসলামিয়ায় শিক্ষকতা করে আসছিলেন। এর মধ্যে তিনি ৩০ বছর বিনা বেতনে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন বলে জানাগেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ভূমিকা পালন করায় নির্যাতিত হয়েছিলেন বলেও জানাগেছে।

১৯৭৬-৭৭ সালের কথা, আমি তখন পটিয়া আল জামিয়া ইসলামিয়ার ছাত্র। পটিয়া আল জামিয়া ইসলামিয়ায় কক্সবাজারের একজন শিক্ষক এবং দক্ষিণ এলাকার ছাত্রদের অভিভাবক হিসেবে মুজাফ্ফর সাহেব হুজুরকেই প্রথম চিনতাম। তাই পটিয়া আল জামিয়া ইসলামিয়ায় মুজাফ্ফর সাহেব হুজুর ছিলেন আমার অভিভাবক।

আরবী গ্রামার এলমে নাহু ও সরফের উপর সহজ উপায়ে পাঠ দানে ছিল তাঁর ব্যাপক খ্যাতি। দেখতাম তাঁর ওই ক্লাশের সময় শত শত ছাত্ররা তো বটেই, জামিয়ার অন্যান্য শিক্ষক এবং বাহির থেকেও শিক্ষকরা দল বেঁেধ অংশ নিতেন। আমরা উপরের ক্লাশের হলেও হুজুরের সেই ক্লাশে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে হাজির হতাম।

শুনতাম জামিয়ায় নাকি অনেক জ্বিনের ছেলে-মেয়েরা পড়া-লেখা করে থাকে। ওই সময় বেশ কিছুদিন জ্বিনের একটি দুষ্ট চক্র আমাকে ঝামেলা করছিল। এতে আমি বেশী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। মুজাফ্ফর সাহেব হুজুর জ্বিনের সেই দুষ্ট চক্র তাড়িয়ে আমাকে সুস্থ করে তোলেছিলেন।

ইসলামের খেদমতের প্রতি হুজুরের আগ্রহ এবং আন্তরিকতা কোনটিই কম ছিল না। তাই জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় তিনি বিনা পারিশ্রমিকে সেবা দিয়ে গেছেন।

জানাগেছে, একাধিকবার নামাজে জানাযা পড়ার ব্যাপারে হুজুর দ্বিমত পোষণ করতেন। তাই তাঁর কর্মস্থল পটিয়া আল জামিয়া ইসলামিয়ায় একবার নামাজে জানাযা শেষে অন্যান্য বুজর্গদের সাথে সেখানে দাফন করার অছিয়াত করেগেছেন তিনি। তাঁর অছিয়াত অনুযায়ী জামিয়া ক্যাম্পাসে নামাজে জানাযা শেষে বিশাল মসজিদ সংলগ্ন অন্যান্য বুজর্গদের কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।

সেই কবরস্থানে শায়িত আছেন আল জামিয়া ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আজিজুল হক রঃ, মরহুম হাজী সাহেব হুজুর, মীর সাহেব হুজুর, ক্বদিম সাহেব হুজুর ও আইয়ুব সাহেব হুজুরসহ আরো অনেক বৃজর্গ।

পরিবারের পক্ষ থেকে যেমনি মরহুমের মাগফিরাতের জন্য দোয়া কামনা করা হয়েছে। আমিও মরহুম মুজাফ্ফর সাহেব হুজুরের মাগফিরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহর দরবারে কামনা করছি ‘আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমীন।