একটি তুলনামূলক পরিচিতি ও পর্যালোচনা

  • মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ

দক্ষিণ কোরীয়ার অনেকগুলো দ্বীপ-এর মধ্যে ‘ইমজা’ একটি দ্বীপ। এ ইমজা দ্বীপ এখন বিশ্বব্যাপি গিগা আইল্যান্ড নামে সুপরিচিত। এটি সে দেশের শুধু একটি দ্বীপ মাত্র নয়, তাদের জন্য এটি মার্কিন সিলিকন ভ্যালি বা ভারতের বাঙ্গালুর-এর মত হাইটেক আইটি পার্ক। আমরা জানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আজকের উচ্চতর তথ্য-প্রযুক্তি বিকাশের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো সিলিকন ভ্যালি। এ উপত্যাকাকে কেন্দ্র করেই তারা বিশ্ব হাইটেক জগতের দখল নিয়েছে। বিল গেটসের মাইক্রোসফ্ট বা স্টিভ জবসের এ্যাপল কোম্পানী দুনিয়া দখল করে নিয়েছে এ সিলিকন ভ্যালিতে উচ্চতর প্রযুক্তির চর্চা ও বিকাশের মধ্য দিয়ে। আর উন্নত ব্যান্ডের কম্পিউটার তৈরিকারকরা, যেমন- ডেল, এইচপি-এর মালিকরাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। এসার, সামসাংসহ অন্য ব্রান্ডের কম্পিউটার নির্মাণকারি কোম্পানীগুলোর অবস্থান মার্কিনীদের সাথে প্রতিযোগিতায় এখনও বেশ পেছিয়ে আছে। ভারত সরকার বাঙ্গালুরে হাইটেক প্রকল্প স্থাপন করে বিশ্ব দরবারে তথ্য-প্রযুক্তি জগতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেছে। এশীয় দেশগুলোর মধ্যে চীন-জাপানের পাশাপাশি ইমজা দ্বীপে গিগা আইল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করে দক্ষিণ কোরিয়া উচ্চতর তথ্য-প্রযুক্তি জগতে মাথা তুলছে বা উঁকি দিয়ে দিয়ে জায়গা করে নিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও ১২টি আইটি পার্ক স্থাপনসহ হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেদিন বেশি দূরে আমরাও জাঞান-বিজ্ঞান এবং তথ্য-প্রযুক্তি জগতের শিখরে পৌঁছে যাব।


ইমজা গিগা ডিজিটাল আইল্যান্ড: কোরিয়া উপদ্বীপকে ঘিরে আছে অনেগুলো দ্বীপ। এদেশে ইমজা একটি দ্বীপ। এখানেই গিগা আইল্যান্ড প্রকল্পের সূচনা ঘটানো হয়। কে.টি বা কোরিয়া টেলিকম পুরো ইমজা দ্বীপবাসিকে ডিজিটালাইজড করে। নিকটস্থ শহর হতে এ দ্বীপে পৌঁছতে ৪ ঘন্টা সময় লাগে। শহর হতে এর যাতায়তের দূরত্ব; সেটিকে ঘুচিয়ে দিয়েছে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ। পুরো দ্বীপবাসির জীবন-মান পাল্টে গেছে, হয়ে গেছে সহজতর এবং বৈশ্বিক মানের। প্রায় ৩ সহস্র জন সংখার বসতি ইমজা দ্বীপে। তরুণ জনগোষ্ঠীর অনেকেই নিকটস্থ শহরে কাজের সন্ধানে চলে গিয়েছিল। অবশিষ্ট ছিল বৃদ্ধ ও শিশুরা। ৭০ জনগণ জড়িত ছিল কৃষি ভিত্তিক পেশায়। কিন্তু এ দ্বীপবাসি এখন উন্নত জীপন যাপনের সকল সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে ঘরে বসেই। এর পেছনে কাজ করেছে কে.টি-এর গিগা আইল্যান্ড প্রকল্প। এ দ্বীপে কাজ করেন এক বাংলাদেশী প্রযুক্তিবিদ মি. দেব ব্রত দাশ। তিনিই বাংলাদেশে কোরিয়ার ইমজা গিগা আইল্যান্ডের খোঁজ দেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মানণীয় প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলক এমপি মহোদয় এ দ্বীপের কর্মকান্ড সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক ধারণা নেন।আর এর নেপথ্যে আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তিবিদ সুযোগ্যপুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় মহোদয়। যাহোক, বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক অবিবাসী সংস্থা (আইওএম) এবং কোরিয়া টেলিকম সংস্থা (কে.টি)এর সাথে এক সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
মহেশখালী ডিজিটাল আইল্যান্ড: মহেশখালী বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার আধার একটি দ্বীপ। এর জনবসতির সংখ্রা ৪ লাখের মত। এখানে রয়েছে ১টি পৌরসভা এবং ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান অওয়ামী লীগ সরকার কক্সবাজার তথা সারা দেশের মানুষের সকল প্রকার উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ দ্বীপটিকে বেছে নিয়েছে। যতদূর জানি, মহেশখালীবাসীর প্রতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও বিশেষ দুর্বলতা ‍ছিল। বিশেষত সেনাদিয়ার প্রতি। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা মহেশখালীর জনগণের আপদে-বিপদে বার বার ছুটে এসেছিলেন। বিশেষত: তিনি ১৯৯১ সালের ২৯ এপিল প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিজড়ে ক্ষত-বিক্ষত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন তিনি, মাতারবাড়ী-ধলঘাটার স্বজন হারানো মানুষের কষ্ট দেখে, হাজার হাজার মানুষের ভেসে যাওয়া বা করুণ মৃত্যুবরণ করার বর্ণনা শুনে। সে মহেশখালীর মানুষের পাশে এসে দাঁড়ালেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। যে মহেশখালীর কথা শুনলে এর বাইরের মানুষজন এক সময় ভয়ে আঁতকে উঠত, সে জনপদ আজ পরিণত হতে চলেছে সার্বিক বিবেচনায় দেশের অন্যতম একটি উন্নত শিল্প ও বন্দর সংবলিত দ্বীপ শহরে। আগামী ৫/১০ বছরের মধ্যে মহেশখালী একটি মিনি সিঙ্গাপুরে রূপান্তরিত হবে এত কোন সন্দেহ নেই। মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ধলাঘাটা ও সোনাদিয়ায় অর্থনৈতিক জোন এবং এলএনজি স্টেশন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে উন্নত মহেশখালীর চেহারা দৃশ্যমান হবে। তখন মানুষ দেখতে পাবে এটি স্বপ্ন নয় বাস্তবতা। এরিমধ্যে বিশাল ও মহৎ একটি কাজের যাত্রা হয়ে গেলম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতৃক বৃহস্পতিবারে (২৭/০৪/২০১৭খ্রি: তারিখে) ডিজিটাল গিগা আইল্যান্ড মহেশখালী প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণার মাধ্যমে। প্রাথমিকভাবে মহেশখালী পৌরসভা, বড় মহেশখালী ইউনিয়ন ও ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের এর সুফল পাওয়া যাবে। উপজেলা পরিষদের সকল অফিসে এবং স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা বিভাগ, কৃষি খাত, মৎস্য বিভাগ, সমাজ সেবা বিভাগ, শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন এবং রাখাইন পাড়ায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে উচ্চ গতির ইন্টাননেট সংযোগ প্রদান করে এ প্রকল্পের যাত্রা ঘটল। ক্রমান্বয়ে পুরো মেহেশখালী উপজেলার প্রায় ৪ লক্ষ জনগোষ্ঠী এর আওতায় চলে আসবে। আর এ প্রকল্পের সহায়তায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে মানুষ বিশ্ব জনগোষ্ঠীর অংশ হয়ে যাবে। এ দ্বীপের শিক্ষার্থীরা হয়ে বিশ্বমানের শিক্ষার্থী। তারা সারা বিশ্বের যে কোন সেরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নত কন্টেন্ট হাতের কাছেই পেয়ে যাবে অতি সহজে। মহেশখালীতে এসকল উন্নয়নের মহাযজ্ঞের পেছনে রয়েছেন, মহেশখালী-কুতুবদিয়ার মাটি ও মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য মানীয় সাংসদ আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক। মহেশখালীবাসীর উচিত; এসব উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে বিরূপ সমালোচনায় বিচলিত না হয়ে এর নেপথ্য কারিগরদের জন্য মন খোলে দোয়া করা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ‘ভিশন ২০২১’ ঘোষণা করে ২০০৮ সালে সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম জনপ্রিয় ভিশন বা রূপকল্প ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। অনেকেই তখন এ ঘোষণাকে শস্তা শ্লোগান বলে অভিহিত করার প্রয়াস চালান। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ ২০১৭ সালে এসে, একটি বাস্তবতা। এটি স্বপ্নচূড়ায় পৌঁছার কল্পলোক নয়, আর। সরকারের সকল খাতে তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগে সকল কাজে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও হচ্ছে দ্রুততম সময়ে। সকল প্রকার সেবা পৌঁছে যাচ্ছে, সর্বস্তরের মানুষের দোর গোড়ায়। প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে তথ্য-প্রযুক্তি বা মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে শ্রেণি শিখন-শেখানো কার্যক্রম শুরু হয়েছে, অনেক আগেই। বাংলাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রমে তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক কলা-কৌশল প্রয়োগ চলছে বিগত ৬/৭ বছর ধরে। বিশেষত: প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে সারাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক আইসিটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ও নিজস্ব প্রচেষ্টায় শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রত্যকটিতে মাল্টিমিডিয়া বিতরণ করা হচ্ছে। চলতি অর্থ বছর ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে হয়ত ৬৪ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সবকটিতে লেপটপ, প্রজেক্টর ও স্ক্রিন পৌঁছে যাবে। আর প্রত্যেক বিদ্যালয়ে অন্তত: ৪ জন করে শিক্ষক/শিক্ষিকা আইসিটি প্রশিক্ষণ পেয়ে যাবেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকগনকে উৎসাহিত করতে সরকারিভাবে শিক্ষক বাতায়ন কোলা হয়েছে। শিক্ষকগণ এ ওয়েভসাইটে হাজার হাজার ভিডিও আপলোড করে রেখেছেন। দেশ-বিদেশে যে কোন প্রান্তে এ ভিডিওগুলো সংগ্রহ ও ব্যবহার করা যায়।এভাবে চলতে থাকলে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে শিক্ষাঙ্গনে ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহার করে শ্রেণি পাঠদানের ক্ষেতে একটি মহা বিল্পব সাধিত হবে। আর শিক্ষার মানে আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়া লেগে সোনার বাংলায় সোনার মানুষ দলে দলে তৈরি হয়ে যাবে। নতুন প্রজন্ম হয়ে যাবে বিশ্ব মানের উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত মানব সম্পদ। সেদিনের অপেক্ষায় আমরা সবাই অপেক্ষমান।
ডিজিটাল আইল্যান্ড কর্মসূচি এবং বাংলাদেশর প্রাথমিক শিক্ষা স্তর: প্রাথমিক স্তরে দশটি (১০টি) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ০২টি সরকার নিয়ন্ত্রিত সিনিয়র মাদ্রাসাকে উচ্চ ক্ষমতার তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে দূর শিক্ষণ প্রোগ্রাম সম্প্রচার করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো; ১. মহেশখালী মডেলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২. বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩. আদিনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪. সিপাহীর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫. পশ্চিম ফকিরাঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬. ফকিরাঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭. গোরকঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮. মুন্সিরডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯. নতুনবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১০. মধূয়ারডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর মাদ্রসা দুটি হলো; পুটিবিলা তৈয়বিয়া ফিাজিল মাদ্রাসা ও আহমদিয়া তৈয়বিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা। ‘জাগো ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ সংস্থার সহায়তায় ০৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ; যথাক্রমে আদিনাথ, বার্মিজ ও ফকিরাঘোনায় ইতোমধ্যে ‘দূর শিক্ষণ’ কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে পরিচালনা শুরু করা হয়েছে।
মহেশখালীর প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আইসিটি-এর প্রয়োগ: বর্তমানে মহেশখালী উপজেলায় ৬৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে আরও ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলো নির্মাণাধীন। আগামী বছরের শুরুতে এগুলোতে শ্রেণি পাঠদান কাজ শুরু হবে। মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্রালয়ের সংখ্যা হবে ৭১ টি। আরও ১০ টি গ্রামে নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করার প্রক্রিয়া চলছে।এখানকার ২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া প্রদান করা হয়েছে। কর্মরত ৪০০ জন শিক্ষক শিক্ষকার মধ্যে ১২০ জন মত শিক্ষক/শিক্ষিকা আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায়না বলে শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম পুরোপুরি চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর হচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত হলে এবং ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী প্রকর্পের আওতায় উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপিত হলে মহেশখালী প্রত্যেক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহার করে শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম চালু করা যাবে।পাল্টে যাবে প্রাথমিক শিক্ষা চিত্র। সকল শিশুর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।

মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার ও সনাতন পদ্ধতিতে শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার পার্থক্যসমূহ:

সনাতন পদ্ধতিতে প্রাঠদান ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান
-ব্লাক বোর্ড বা  হোয়াইট বোর্ড এবং চক-ডাস্টার  ব্যবহার করে পাঠদান চলে। -লেপটপ, প্রজেক্টর  ও স্ক্রিন ব্যবহার করে  পাঠদান করা হয়।
-বই দেখে দেখে  পাঠদান করা হয়। -ভিডিও চিত্র বা  পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টশনের  মাধ্যমে পাঠদান করা হয়।
-সাধারণ উপকরণ ব্যবহার  হয়। -ভিডিও ভিত্তিক  বাস্তব উপকরণ প্রদর্শন  করা হয়্।
-বেশিরভাগ শিশুর  শিখন ফল বা যোগ্যতা  অর্জন হয় না। -প্রত্যেক শিশুর  শিখন অনেকটা নিশ্চিত  হয়।
-শিক্ষক কেন্দ্রিক  শিখন-শেখানো চলে। -শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক  পাঠদান চলে।
-সনাতনী পড়াশোনা  বা শিখন-শেখানার চর্চা  করা হয়ে থাকে। -আধুনিক ধ্যান-ধারণার  আলোকে শ্রেণি শিখন-শেখানো  চলে।
-যোগ্যতা ভিত্তিক  প্রাথমিক শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন  করা পুরোপুরি সম্ভবপর  হয় না। -তথ্য-প্রযুক্তির  ব্যবহার কাজটি অনেকটা  সহজতর করে তোলে।
-সংশ্লিষ্ট পাঠের  বিষয়বস্তু ও শিখন ফল  শিক্ষার্থীরা ভালভাবে  আয়ত্ত্ব করতে পারে না। -মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার  করে শ্রেণি পাঠদান করা  হলে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর  শিখন ভালভাবে হয়।
-শিক্ষার্থীরা তেমন  আনন্দ পায় না। -প্রত্যেক শিক্ষার্থী  তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার  করা হলে আনন্দ পায় এবং  ভালভাবে শেখার আগ্রহ  পায়।
-শ্রেণিকক্ষে আনন্দমুখর  ও স্থায়ি শিখন ফল অর্জিত  হয় না তেমন। -মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের  ফলে শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো  আনন্দমুখর হয় ও স্থায়ি  শিখন ফল অর্জিত হয়।
-শিশুদেরকে বিজ্ঞান  মনস্ক করে গড়ে তোলা  অসম্ভবপর। -তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে  শিশুরা বিজ্ঞান মনস্ক  হয়ে ওঠার সুযোগ পায়।

সর্বেপরি বলা যায়, সনাতন পদ্ধতির শিখন-শেখানো এবং মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে পাঠদানের মাঝে ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বিশ্বব্যাপি শিখন-শেখানা এবং মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্নতন সাধিত হয়ে গেছে। পাশের দেশ ভারত-শ্রীলংকায় অনেক আগেই শিক্ষা ব্যবস্থায় তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার শুর করা হয়। এশীয় দেশগুলোর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া সবচেয়ে সাফল্য পেয়েছ। আর সারাবিশ্বে ফিনল্যান্ড প্রাথমিক শিক্ষায় শীর্ষে অবস্থান করছে। সেদিন বেশি দূরে নয়, একদিন বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাও দেখিয়ে দেবে আমরাও পারি। আর মহেশখালী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা আগামী ৪/৫ বছরে দেশে এক নম্বর অবস্থানে চলে যাবে, এটাই কাম্য।

*মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্; উপজেলা শিক্ষা অফিসার, মহেশখালী, কক্সবাজার।