ইমাম খাইর, সিবিএন:
আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে হাম-রুবেলার টিকাদান কর্মসুচি শুরু হচ্ছে। ৯ থেকে ৫৯ মাস বয়সী প্রত্যেক শিশু এ টিকার অন্তর্ভুক্ত। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কক্সবাজার ২৪০টি স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে হাম-রুবেলার টিকা প্রদান করা হবে। একই সঙ্গে পৌর এলাকার ১২টি অস্থায়ী কেন্দ্রেও এ টিকা দেয়া হবে। ৩৯ হাজার শিশুর জন্য টিকা মজুদ করা হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সারওয়ার মাহবুব। তিনি বলেন, ৫ মাস থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের হাম-রুবেলা রোগের টিকা খাওয়ানো হবে। যারা ইতোপূর্বে টিকা নিয়েছে তারাও এ টিকা নিতে পারবে। তবে, শুধুমাত্র অসুস্থ ও আগে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার শিকার শিশুদের এ টিকা দেওয়া হবে না। সভায় জেলা তথ্য অফিসার নাসির উদ্দিন, সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জেলায় হঠাৎ বেড়ে গেছে হাম-রুবেলা রোগের প্রাদুর্ভাব। যেখানে গত এক বছর আগেও প্রতি দশ লাখ শিশুর মধ্যে মাত্র ৪ চার জন রোগি ছিল; সেখানে এখন হঠাৎ করে ৪৫৩ জন রোগির উপস্থিতি ধরা পড়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে হঠাৎ এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের ধারণা। হাম-রুবেলা রোগের এই প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে মাঠে নেমেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
রুবেলা কি ও তার প্রতিরোধ
এখন দেশব্যাপী হাম ও রুবেলার টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু অনেকে বুঝেই না, “রুবেলা” কি ?
রুবেলা কি?
রুবেলা একটি ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ। এটাকে “জার্মান মিজেল্ স্” অথবা “তিন দিনের হাম”ও বলা হয়ে থাকে। যেকোন বয়সের মানুষ রুবেলা আক্রান্ত হতে পারে। তবে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে এটি সংক্রমিত হয় বেশি।
রুবেলা হলে কী কী উপসর্গ হতে পারে?
এ রোগে সর্দি, কাশি, মাথাব্যাথা ও সামান্য জ্বর (১০১ ডিগ্রি ফা. পর্যন্ত) হয় এবং কানের পেছনে ও ঘাড়ে লিম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে যেতে দেখা যায়। তাছাড়া গীটে গীটে ব্যাথা এবং চামড়ায় হাল্কা লাল বা গোলাপী রঙের রেশ (ৎধংয) হতে পারে। তিন দিন পর সাধারণতঃ জ্বর সেরে যায়, চামড়ায় রেশ থাকলে তাও আস্তে আস্তে চলে যায়। অধিকাংশ সময়ে, রুবেলা সাধারণ সর্দি জ্বরের মতই মনে হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতেও পারে না, এর মধ্যে তার রুবেলা হয়ে গেছে।
মহিলাদের গর্ভধারণের প্রথম দিকে (১২-১৫ সপ্তাহ পর্যন্ত) রুবেলা আক্রান্ত হলে নবজাতক শিশুর বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। আক্রান্তদের একপঞ্চমাংশের ডেলিভারিতে মৃত সন্তান প্রসব হতে দেখা যায়। বাকিদের মধ্যে হৃদযন্ত্রে জন্মগত ত্রুটি, বধিরতা, ছানিযুক্ত চোখ ও অন্ধত্বসহ বিভিন্ন জন্মগত সমস্যা হতে পারে। তাদের অনেকে মানসিক প্রতিবন্ধি হয়, পড়াশোনায় আগাতে পারে না এবং দৈহিক বৃদ্ধিও কম হয়।
এত সব সমস্যা নিরসন করতে গিয়ে রুবেলা ভ্যাক্সিনের সৃষ্টি হয় এবং ১৯৭০ সালে তা টিকাদান কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়ে “জন্মগত রুবেলা সিনড্রোম”কে ব্যাপকভাবে হ্রাস করে।
রুবেলা প্রতিরোধের উপায়:
রুবেলাসহ হাম ও মামস প্রতিরোধের জন্য শিশু বয়সে ২টা গ.গ.জ টিকা দেয়া হয়ে থাকে। প্রথমটি ১২-১৫ মাস বয়সে ও দ্বিতীয়টি ৪-৬ বছর বয়সে দেয়া হয়। তবে যেকোন বয়সে এ টিকা নেয়া যায়। গত বছর থেকে ইপিআই কর্মসূচিতে ০৯ মাস শেষ হয়ে ১০ মাসে পড়লেই হাম রুবেলার টিকা দেয়া হচ্ছে। মেয়েদের গর্ভধারণের আগে সে যথেষ্ট রুবেলা প্রতিরোধী কিনা তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। আগে টিকা নেয়া থাকলে বা একবার রুবেলা হয়ে গেলেও গর্ভধারণের আগে রুবেলা এনটিবডির জন্য রক্ত পরীক্ষা করে দেখা দরকার। পরীক্ষার রিপোর্ট যদি পজিটিভ হয়, ভাল। যদি নেগেটিভ হয়, তবে তার টিকা নেয়া দরকার। গর্ভাবস্থায় পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ হলে, বাচ্চার অসুবিধা হতে পারে। এমতাবস্থায় তাকে সতর্কতার সাথে চলাফেরা করা উচিৎ এবং কর্মস্থলে যথাসম্ভব কম যাওয়া ভাল। সন্তান জন্মদানের পর সে টিকা নিয়ে নেবে। বাচ্চা দুধ পাওয়ার সময় রুবেলা টিকা নেয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাতে মা ও বাচ্চার কোন ক্ষতি হয় না।