বিশেষ প্রতিবেদক , সিবিএন :
ইয়াবা সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়ে অনিশ্চয়তায় কক্সবাজার সদর থানার চৌকস অফিসার মানস বড়ুয়ার ক্যারিয়ার। একজন উচ্চ শিক্ষিত, অপরাধ দমন ও অপরাধী সনাক্তে দক্ষ মানস বড়ুয়ার কারনে মাথাচাড়া দিতে পারছেনা ইয়াবা ব্যবাসায়ীরা। তাই তাকে ঘায়েল করতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
নানা সূত্র প্রাপ্ত তথ্য মতে, জীবন আরা টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়ার মৃত আবদুল আজিজের কন্যা। তার ৫ বোন ও এক ভাই রয়েছে। একাধিক স্বামীপরিত্যক্ত জীবন আরা সর্বশেষ বিয়ে করেন কক্সবাজার সদরের ঝিংলজা ইউনিয়নের আবুশ কাসেমের পুত্র আলী আহমদকে। এর আগে স্ত্রী সন্তান থাকলেও জীবন আরা বিয়ে করে আলী আহমদকে। এ আলী আহমদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা অপরাধে একাধিক মামলার রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি হল, জিআর- ২৪৫/১৬, জিআর ১৬৬/০৬, জিআর ২৪৪/১০। এছাড়া আলী আহমদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম পাঁচলাইশন থানায় গাড়ি ছিনতাই মামলাও রয়েছে। যার নম্বর -২৬ (৩০/১১/১৫)। আলী আহমদের ভাই জাহাঙ্গীরও একই চক্রের সদস্য। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
জীবন আরা জানান, জাহাঙ্গীর নামের এক দেবর রয়েছে তার । সে পুলিশের হুমকির প্রেক্ষিতে আত্মগোপনে রয়েছে। পুলিশ পরিকল্পিতভাবে তাকে ইয়াবা মামলায় আদালতে পাঠিয়ে নানাভাবে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মানস বড়ুয়া জানান, জীবনআরা ও তার স্বামী আলী আহমদের আত্মীয় স্বজনরা মিলে মাদকের ব্যবসারএকটি সিন্ডিকেট রয়েছে। যার প্রমাণ মধ্যে সর্বশেষ ১৫ মার্চ কুমিল্লাজেলার দাউদকান্দি ৮ হাজার ইয়াবা সহ ৩ জনকে আটক করে পুলিশ। যার মধ্যে রয়েছে জীবন আরার ছোট্ট বোন হাসিনা বেগম, হাসিনার স্বামী শাহ আলম, অপর এক বোনের স্বামী জিয়াউল হক। ঐ ইয়াবা চক্রের সাথে জীবন আরা ও কারাগারে থাকা আলী আহমদ জড়িত থাকার কথাও কুমিল্লা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার এফআইআর নং -২৫/১৩৪ মামলাটি পুলিশ ব্যাপক তদন্ত করছেন। কুমিল্লারপুলিশও তাহলে ঘটনাটি সাজিয়েছেন এমন প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি বলেন, “২ মার্চ কক্সবাজারে অভিযান। আর ১৫ মার্চ কুমিল্লায় ইয়াবা সহ আটকের ঘটনাটি কি প্রমাণ করে না চক্রটি ইয়াবা ব্যবসায়ী?”কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ইয়াবা সহ ৩ জন আটকের ব্যাপারে জীবন আরাজানান, হাসিনা নামের কোন ছোট্ট বোন নেই। আর শাহ আলম ও জিয়াউলহক নামের কোন বোনের স্বামীও নেই। তাদের তিনি চেনেন না।তবে হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার)আবদুল গফ্ফার জানান, মৃত আবদুল আজিজের মেয়ে হাসিনা ও জীবনআরা। আর শাহ আলম ও জিয়াউল হক এ দুই জনের মধ্যে শাহ আলম হলেন হাসিনার স্বামী। আর জিয়াউল হক অপর এক বোনের স্বামী। হাসিনা,শাহ আলম ও জিয়াউল হক ইয়াবা সহ কুমিল্লায় আটকের খবর তিনিশুনেছেন।
এই ইয়াবা ব্যাবসায়ী জীবন আরা কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে গত ১৫ মার্চ মিমাংসিত একটি বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক অভিযোগ করেন । কক্সবাজার সদরের আলী আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী জীবন আরা অভিযোগ করেন, কক্সবাজার সদর থানায় রিমান্ডে এনে তাকে বৈদ্যুতিক শক সহ স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন চালিয়েছে এসআই মানস বড়ুয়া। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগকারি জীবন আরা সংবাদ সম্মেলন,পুলিশের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগের পাশাপাশি পুলিশের ৫ কর্মকর্তাকে আসামী করে আদালতে দুইটি অভিযোগও দায়ের করেছেন। আর এই ঘটনা নিয়ে চলছে কক্সবাজার জেলা সহ দেশ জুড়ে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা।
আদালত থেকে পাওয়া বিভিন্ন নথি পত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২মার্চ কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ ৬ হাজার ইয়াবা সহ ৪ জনকে আটক করে।যার মধ্যে জীবন আরা ছাড়াও তার স্বামী আলী আহমদ, নারায়নগঞ্জের মুজিবুর রহমান ও নিপা নামের আরেক নারী ছিলেন। এই মামলা আদালতে রিমান্ডের আবেদন করলে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত জীবন আরার এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ১৩ মার্চ একদিনেররিমান্ড শেষে ওই নারীকে আদালতে প্রেরণ করা হলে ১৪ মার্চ আদালতে নিজের আইনজীবিদের দিয়ে রিমান্ডে পুলিশ নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ করেন জীবন আরা। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে একজন নারী ডাক্তারের মাধ্যমে মেডিকেল পরীক্ষার নির্দেশ প্রদান করেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা আদালতে নিদের্শে জীবন আরার পরীক্ষা সম্পন্ন করে পরের দিন প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালতের ৮৮৩ নম্বর(১৪/০৩/২০১৭) স্মারকের বিপরীতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মো. শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পরীক্ষায় গুরুতর আঘাত, অমানষিক নির্যাতন বা বৈদ্যুতিক শকের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। জীবন আরা নামের এই নারীর কোমরের নিচে পুরাতন একটা কালচে দাগ পাওয়া গেছে। যে দাগটির বিস্তারিত বর্ণনাও ওই প্রতিবেদনে দেয়া হয়। আদালতের তথ্য মতে, ২৩মার্চ দুগ্ধ পৌষ্য সন্তান থাকায় মানবিক বিবেচনায় আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান এ নারী। আর এরপর থেকে অভিযোগ দেয়া শুরু করেন জীবন আরা। যা প্রকাশ্যে আসে গত ১৭ এপ্রিল কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। সংবাদ সম্মেলনে জীবন আরা অভিযোগ করেন, কক্সবাজার সদর থানার এসআই মানস বড়ুয়ার রিমান্ডে নিয়ে তাকে বৈদ্যুতিক শক সহস্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন চালিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি পুলিশের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরপর গত ২০ মার্চ কক্সবাজার সদর থানার ওসি আসলাম হোসেন, ওই সময়ে ওসি (তদন্ত) এবং বর্তমানে চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন ,
এসআই আবদুর রহিম, এসআই মানস বড়ুয়াসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে জেলা দায়েরা ও জজ আদালতে অভিযোগও দিয়েছেন এ নারী।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।