পথে বসেছে পানচাষীরা

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল, ২০১৭ ১১:২৮

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


মড়কে আক্রান্ত একটি পানের বরজ।

শাহেদ মিজান, সিবিএন:
ভয়াবহ মড়ক আর ধারাবাহিক দরপতনে পানচাষীদের চরম দুর্দিন চলছে। লাভ তো দূরের কথা পুঁজি হারিয়ে এখন পথে বসেছে পানচাষীরা। এতে করে তারা অর্থকষ্টে পড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে। মহেশখালীর বেশ কয়েকজন পানচাষীর সাথে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে পানের ভয়াবহ দরপতন হয়েছে। বর্তমানে পানের বাজার দর যে স্তরের নেমেছে তার বিগত ১০ বছরেও এই রকম নিন্মমূল্য হয়নি। ফলে উৎপাদনের খরচের সাথে বর্তমান বাজার মূল্যের বিরাট পার্থক্য হয়ে গেছে। এতে বিনিয়োগের তিন ভাগের একভাগ পুঁজিও ফিরে পাবে না চাষীরা।
খোজঁ নিয়ে গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিলের পানের বরজে ভয়াবহ মড়ক হয়েছে। মৌসুমের শুরুর দিকে এই মড়ক সৃষ্টি হয়। মড়কে অর্ধৈক বিলের পানের বরজ ধ্বংস হয়ে গেছে। বাকি অর্ধৈকেরও মড়কের প্রভাবে সঠিক ভাবে বেড়ে উঠেনি।
পানচাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিলের বরজের শুরুতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় মড়ক সৃষ্টি হয়ে অধিকাংশ পানের বরজ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। এ কারণে ওইসব বরজ থেকে পান উৎপাদন করা যায়নি। বাকি যা রয়েছে তাতে মড়কের প্রভাব পড়ে যায়। এগুলোও পুরোপুরি পান উৎপাদন করতে পারেনি।
মহেশখালীর হোয়ানকের সাখাওয়াত হোছাইন জানান, তিনি ২০ শতক জমিতে পানের চাষ করেছিলেন। কিন্তু তা রোপনের এক মাসের মাথায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গিয়ে মড়ক সৃষ্টি হয়ে মরে যায়। এভাবে অনেকের বরজ ক্ষতি হয় বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে মৌসুমের শুরু থেকেই পানের বিরাট দরপতন শুরু হয়। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে পানের বাড়তি থাকলেও চলতি মৌসুমে তা বাড়েনি। বরং স্বাভাবিক মৌসুমের চেয়ে অনেক নি¤েœ পতিত হয়। গত পাঁচ বছর ধরে শুষ্ম মৌসুমে প্রতি প্রতি বিরা সর্বোচ্চ ৪০০ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু চলতি মৌসুমে তা শুরুতে ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও এক মাসের মাথায় তা পতন হয়ে ৮০টাকায় চলে এসেছে। বড় মাপের পানগুলো ৮০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হলেও ছোট ও মাঝারি মাপের পান বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকায়। তবে একদম ছোট মাপের পানগুলোতে বিক্রি না হওয়ায় ফেলে দিচ্ছে চাষীরা।
হোয়ানক টাইমবাজারের পান ব্যবসায়ী বজল আহামদ জানান, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পানের দর অত্যন্ত নি¤œমূখী। তাই চলতি মৌসুমে পানের স্মরণকালের নি¤œমূল্য বিরাজ করছে। বিক্রি না হওয়ায় অনেক পান ফেলে দিতে হচ্ছে।
পানের চরম দরপতন হওয়ায় পানচাষীরা চরম দুর্ভোগে পড়ে গেছেন। পুুঁজি হারিয়ে চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এতে আগামী মৌসুমে বিরাট প্রভাব পড়তে পারে।
হোয়ানকের খোরশাপাড়ার পানচাষীর এনামুল হক জানান, তিনি পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করে ৫০ শতক জমিতে পান করেছিলেন। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতক জমির ক্ষেত মড়ক পড়ে মরে গেছে। বাকি ২০ শতক জমির পানচাষও পরিপূর্ণ হয়নি। তার থেকে দু’লাখ টাকা পাওয়া গেছে। তিন লাখ টাকা লোকসান গেছে।
একই এলাকার মো. ইসলাম বলেন, বিনিয়োগের চার লাখ টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। বাকি টাকা গচ্ছা গেছে। এই কারণে আগামী মৌসুমের চাষ করতে পারবো না।’
বিরাট লোকসানে পড়ায় পানচাষীরা সরকারে সহযোগিতা কামনা করেছেন। সহজ শর্তে ঋণসহ বিভিন্ন ভাবে তারা এই সহযোগিতা কামনা করেছেন।