ডেস্ক নিউজ:

জাতীয় পার্টির চেযারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাগ্নি টুম্পাকে ৬৫ বছর বয়সে এসে বিয়ের মাধ্যমে দলে নিজের অবস্থান আরো পাকাপোক্ত করলেন দলটির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু। সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই নেতা এতোদিন দলে কিছুটা কোণঠাসা থাকলেও দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও ‘ওয়ান ম্যান শো’ হিসেবে পরিচিত এরশাদের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধের মধ্যে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যত রাজনীতিরও সম্পর্ক আছে বলে মনে করছেন জাতীয় পার্টির একাধিক নেতাকর্মী।
তারা মনে করেন, এ বিয়ে বাবলু-টুম্পার ব্যক্তিগত বিষয় হলেও দলের রজনীতিতে এর প্রভাব রয়েছে। একই সঙ্গে এরশাদ পরবর্তী দলের ভবিষ্যত কাণ্ডারি কে হতে যাচ্ছেন এ বিয়েতে তারও ইঙ্গিত রয়েছে বলেই মনে করেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। শুক্রবার সকালে বাবলু-টুম্পার বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় হবে রিসেপশন। এ বিয়ে এখন জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।
এ বিয়ের মাধ্যমে রওশন এরশাদ এবং জাতীয় পার্টিতে সরকার ঘনিষ্ঠ মহল শক্তিশালী হতে যাচ্ছে বলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে দলটির বর্তমান মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার এবং কো-চেযারম্যান এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। জিএম কাদের সরাসরি এ বিষয়ে কিছু না বললেও রুহুল আমিন হাওলাদার এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ এবং বিয়ে ঠেকানোর জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন বলে হাওলাদারের ঘনিষ্ঠমহল জানিয়েছে।
জানা গেছে, দুটি কারণে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এ বিয়ের পেছনে রাজনীতির আভাস পাচ্ছে। প্রথমত জিয়াউদ্দিন বাবলু্ আবারও দলের মহাসচিব হতে মরিয়া। ২০১৩ এর জাতীয় নির্বাচনের আগে রওশন এরশাদ-জিয়াউদ্দিন বাবলু এবং আনিসুল ইসলাম মাহমুদের চেষ্টাতেই আওয়ামী লীগের সমর্থনে এরশাদের অমতে জাতীয় পার্টির বড় অংশ নির্বাচনে গিয়ে এখন সংসদে বিরোধী দল। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এ অংশটি এখনও সরকারের সমর্থন পাচ্ছে। এমনকি এতোদিন অনেকটাই দলীয় কাজে তুলনামূলক নীরব থাকলেও দলে তৎপর হয়ে উঠছে বাবলু-আনিস অংশ। এ গ্রুপের শক্তিশালী হওয়া এবং এরশাদের পরিবারের সদস্য হয়ে দলীয় সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলা সহজ হবে বলেও জিয়াউদ্দিন বাবলু বিয়েটি ত্বরানিত করেছেন বলে জাতীয় পার্টির অনেকে মনে করেন। এ ছাড়া এরশাদ ভাগ্নি টুম্পাকে বিশ্বাস করে ইতোমধ্যে বেশ কিছু সম্পদ উপহার হিসেবে দিয়ে দিয়েছেন বলেও এরশাদের একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানিয়েছে।
অন্যদিকে দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দরকষাকষি এবং নিজের অবস্থান পোক্ত করতে টুম্পাকে বিয়ে করা বাবলুর জন্য ‘শাপেবর’ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। বাবলু এরশাদ-রওশনের ঘনিষ্ঠজন হলেও তার সঙ্গে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা ইসলামের নিয়মিত যোগাযোগ এবং সুসম্পর্ক ছিল। বিদিশার জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা এবং লাগাতার চেষ্টা নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলেন রওশনপন্থীরা। বাবলু-টুম্পার বিয়ের মাধ্যমে ওই আশঙ্কার পথ অনেকটা রোধ হয়ে আসবে বলেও মনে করছেন জাতীয় পার্টির সদস্যরা। ফলে রওশনপন্থী অংশটি এ বিয়ের বিষয়ে খুবই আগ্রহী ছিল বলে জানা গেছে।
এ ছাড়াও ৮৬ বছর বয়সী এরশাদের শারীরিক অবস্থা ভালো না। এ অবস্থায় দলে পরবর্তী কাণ্ডারি কে হবেন? রওশন এরশাদ, জিএম কাদের নাকি এরশাদের ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত অন্য কেউ। এরশাদের ঘনিষ্ঠ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবর্তন ডটকমকে জানান, এরশাদ যেভাবে তার সহায় সম্পদ ইতোমধ্যে তার সন্তান ও বিশ্বস্তদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই দলের পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়েও একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চান। তাই একাধারে এরশাদের আস্থাভাজন থাকা এবং অন্যদিকে সরকারের সমর্থন নিয়ে দলে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বাবলু-টুম্পার বিয়ে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে বলে এরশাদের ঘনিষ্ঠজনদের ধারণা।
যদিও এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘বিয়েতো বিয়েই। পার্টির একজন মহাসচিব হিসেবে উভয়েরই শান্তিময় জীবন কামনা করি। আমিতো পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল। আমাকে প্রেসিডেন্ট সাহেব দাওয়াত দিয়ছেন। সুতরাং সমালোচনার ঊর্ধ্বে আমাকে চলতে হয়। দোয়া ছাড়া আমার আর কী করার আছে মুসলমান হিসেবে? ভালো থাকুক, সুখে থাকুক।’
তিনি বলেন, ‘তাদের শুভ পরিণয় হচ্ছে। এ সংসার দীর্ঘস্থায়ী হোক।’
জিয়াউদ্দিন বাবলু দশম জাতীয় সংসদে জাপার দলীয় সংসদ সদস্য। তার হবু শাশুড়ি মেরিনা ইয়াসমিন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য। মামা শ্বশুর এরশাদও এ সংসদের সদস্য। আর মামি শাশুড়ি রওশন এরশাদ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা।
জিয়াউদ্দিন বাবলুর স্ত্রী ফরিদা সরকার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০০৫ সালে মারা যান। ফরিদা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। বাবলুর হবু স্ত্রী মেহেজেবুননেছা রহমানও অধ্যাপক। তিনি সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর। প্রথম সংসারে তার এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
স্ত্রী ফরিদা সরকারের মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে আশিক আহমেদকে নিয়ে আছেন জিয়াউদ্দিন বাবলু। ছেলে এমবিএ শেষ করে ব্যবসা করছেন। তিনিও বিয়ে করেছেন।