চট্টগ্রাম সংবাদদাতা
চট্টগ্রাম: পাল্টাপাল্টি বক্তব্য-বিবৃতির পর দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে ‘ঐক্য ফেরাতে’ পর্দার আড়ালে কাজ করেছেন নগর আওয়ামী লীগের অন্ত:ত ১৩ নেতা। দুই দফা বৈঠক করে তারা দুই নেতার মধ্যে ‘অঘোষিত সমঝোতা’ করতে পেরেছেন।
সমঝোতার শর্ত হিসেবে চসিকের এক কাউন্সিলরকে নগর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় আসা থেকে বিরত রাখতে পেরেছেন। এতে ওই কাউন্সিলর নিজেও রোষানল থেকে রক্ষা পেয়েছেন এবং দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে ঐক্যের পথও প্রশস্ত হয়েছে।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে এক আলোচনা সভায় নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মঞ্চে বসা সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে নিজের পাশে ডেকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা দেন।
এক সপ্তাহ ধরে উত্তাপের পর আকস্মিক ‘ঐক্য প্রতিষ্ঠা’ নিয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন কিছু বলতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে আ জ ম নাছির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, রাজনীতিতে একটা ইতিবাচক কাজ হয়েছে। কেউ কেউ বুঝে না বুঝে আমাদের বিরোধের মধ্যে অংশ নিয়েছিল। তাদের জন্যও এটা একটা শিক্ষণীয় বিষয় হয়েছে। তারা এখন বিষয়টা বুঝতে পারবেন।
সূত্রমতে, মুজিবনগর দিবসের সভায় দুই নেতাকে একমঞ্চে আনার জন্য করণীয় ঠিক করতে গত শনিবার সন্ধ্যায় জামালখানে এক আওয়ামী লীগ নেতার কার্যালয়ে প্রথম বৈঠক হয়। এতে নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ছিলেন খোরশেদ আলম সুজন, নঈমউদ্দিন, আলতাফ হোসেন বাচ্চু, নোমান আল মাহমুদ, হাসান মাহমুদ শমসের, শফিক আদনান, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম ফারুক এবং চন্দন ধর।
এরপর রোববার বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তারা ফিরিঙ্গিবাজারে সাবেক কাউন্সিলর জহিরুল আলম দোভাষ ওরফে ডলফিন দোভাষের বাসায় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ডলফিন দোভাষের পাশাপাশি সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম হাজির ছিলেন।
সূত্রমতে, বৈঠকে মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য দেয়া একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিষয়ে সর্বসম্মত বিবৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে আবার সেটা পাল্টে তাকে সভায় আসতে নিষেধ করার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া ২৯ এপ্রিল কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে চট্টগ্রামে প্রতিনিধি সম্মেলন উপলক্ষে জরুরি ভিত্তিতে বর্ধিত সভা করা এবং সেখানে দুই নেতাকে তাদের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য অনুরোধ করার সিদ্ধান্ত হয়।
রোববার রাতে এসব সিদ্ধান্ত জানাতে মহিউদ্দিনের কাছে সুজন এবং নাছিরের কাছে যান নোমান। দুই নেতা এসব সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হন। এছাড়া নগর পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে ওই কাউন্সিলর সভায় গেলে বিশৃঙ্খলার আশংকা করে দেয়া একটি প্রতিবেদনের বিষয়েও দুই নেতা অবহিত হন। এরপর ওই কাউন্সিলরকে সভায় যেতে নিষেধ করে দেয়া হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রমতে, রোববার রাতে কেন্দ্র থেকে একজন নেতা নগর আওয়ামী লীগের একজন সহ সভাপতিকে ফোন করে মহিউদ্দিনকে বিরোধ মিমাংসার জন্য বুঝিয়ে রাজি করার কথা বলেন। ওই সহ-সভাপতি বিষয়টি মহিউদ্দিনকে বলার পর তিনি বলেন, ‘খেলা আমি শুরু করেছি, আমিই শেষ করব। আমাকে রাজনীতি শেখাতে এসো না। ’
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গোপনভাবে বসে মহিউদ্দিন ভাই আর নাছির ভাইয়ের কাছে একই বার্তা নিয়ে গিয়েছিলাম। তারা দুজনই একমত হয়ে মিটিংয়ে গেছেন। কারণ এই বিরোধ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরোধ নয়।
এটা সাবেক ও বর্তমান মেয়রের বিরোধ।
সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বাংলানিউজকে বলেন, প্রয়োজনের মুহুর্তে আওয়ামী লীগ সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে এক হয়ে যেতে পারে। এখানেও আমরা ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। এটা চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য একটা নতুন ইতিহাস বলে আমি মনে করি।