এম.এ আজিজ রাসেল:

শহরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় শুরু হয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের মাহা সাংগ্রেং পোয়ে বা মেত্রিময় জলকেলি উৎসব। ১৭ এপ্রিল বৌদ্ধ মন্দির গেটস্থ কেন্দ্রিয় জলকেলি উৎসবের প্যান্ডেলে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাখাইন ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিং অং। এরপরই রাখাইন পল্লীয় ২০টি প্যান্ডেলে সানন্দে শুরু হয় জলকেলি উৎসব।

মূলতঃ ১৩৭৮ মগীসনকে বিদায় জানিয়ে ১৩৭৯ মগীসনকে বরণ করা জন্য রাখাইন সম্প্রদায় প্রতিবছর নববর্ষ পালন করে থাকে। রাখাইন ভাষায় এ উৎসব বলা হয় মাহা সাংগ্রেং পোয়ে। এর বাংলা আভিধানিক অর্থ মৈত্রিময় জলকেলি উৎসব। ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত এই জলকেলি উৎসব চলবে। নববর্ষে রাখাইন বয়ষ্ক নারী-পুরুষরা উপবাস করে থাকেন। এসময় প্রাণী হত্যা, মিথ্যা বলাসহ কমপক্ষে ৮টি দুষ্কর্ম থেকে দূরে থাকতে হবে। শহরছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ সদর, হ্নীলা চৌধুরী পাড়া, রামু, পানিরছড়া, চকরিয়ার মানিক পুরসহ রাখাইন অধ্যুষিত এলাকা গুলোতে সপ্তাহ জুড়ে নববর্ষ পালনে নানা অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে শহরের টেকপাড়া, হাঙর পাড়া, বার্মিজ স্কুল এলাকা, চাউল বাজার, পূর্ব-পশ্চিম মাছ বাজার, আরডিএফ প্রাঙ্গন, ক্যাং পাড়া ও বৈদ্যঘোনাস্থ থংরো পাড়ায় তৈরি করা হয়েছে জলকেলির ২০টি নান্দিক প্যান্ডেল। রঙিন ফুল আর নানা কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্যান্ডেলের চারপাশ। সবার মাঝে এখন বর্ষ বরণের আমেজ। রাখাইন এলাকার প্রতিটি বাড়ি সেজেছে নতুন সাজে। ছোট শিশু থেকে শুরু করে বড়রাও ব্যস্ত নতুন কাপড়ে নিজেকে রঙিন করে তুলেছে। উৎসবের মূল লক্ষ্য অতীতের সকল ব্যথা-বেদনা, গ্লানি ভুলে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

সোমবার বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, রাখাইন তরুণ-তরুণীরা নতুন ও আকর্ষণীয় পোশাক পরিধান করে সেজেগুঁজে রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং রাখাইন পল্লীতে তৈরি করা জলকেলি উৎসবের প্যান্ডেলে একে অপরকে পানি নিক্ষেপ করে আনন্দ প্রকাশ করছে। এসময় বাদ্য বাজিয়ে নাচ-গানসহ চলে আনন্দঘন অনুষ্ঠান। সাথে ঢাক-ঢোল আর কাঁসার তালে-তালে নেচে উঠে রাখাইন আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। জলকেলি উৎসব অবলোকনে অন্যান্য ধর্মালম্বীর পাশাপাশি পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড় দেখা গেছে।

রাখাইন শিক্ষার্থী মং হ্লা ওয়ান, বাওয়ান, ক্যনাই, থেন থেন নাই, চ লাইন, জনি, জ জ, মংসিয়াই, ইয়ুদি, জওয়ান, আক্য, আবুরি, ওয়ানশে, কিংজ, হাপু ও ওয়াহ ওয়াহ জানান, আধিকাল থেকে রাখাইন নববর্ষ উপলক্ষে সামাজিক ভাবে সাংগ্রে পোয়ে উৎসব পালন হয়ে আসছি। এবারও ব্যতিক্রম ঘটনি। আনন্দ-উল্লাসে নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছে সবাই। এর মাধ্যমে আমরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর মধ্য দিয়ে পুরনো দিনের সব ব্যথা, বেদনা, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। এটি আমাদের কাছে খুবই পবিত্র ও উৎসবের দিন।’

কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডাঃ পুঁ চ নু জানান, সাংগ্রে পোয়ে বা জলকেলি রাখাইনদের সামাজিক উৎসব। বৃহস্পতিবার বুদ্ধের মূর্তিকে স্নান করানোর মাধ্যমে সামাজিক এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। মূলত ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু মূল অনুষ্ঠান। যা চলবে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত।’

কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, রাখাইনদের জলকেলি উৎসব উপলক্ষে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও মাঠে রয়েছে।